দুর্গাপুর, 25 নভেম্বর: দুর্গাপুরের ফরিদপুর বাউরি পাড়ায় বিহারের শাহরানপুরের বাসিন্দা এক যুবকের খুনের ঘটনায় উঠে এল নতুন তথ্য ৷ জানা গিয়েছে, প্রেমিককে খুন করে ওই ভাড়া বাড়ির মধ্যেই সারারাত ছিল ধৃত প্রেমিকা পূজা পাণ্ডে ৷ সঙ্গে ছিল ওই যুবতীর দাদাও ৷ পরে ভোরবেলায় দরজায় বাইরে থেকে তালা দিয়ে পালায় তারা ৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে গ্রেফতার হওয়া পূজা পাণ্ডের সাত বছরের কন্যাও কি সেদিন ওই ঘরেই ছিল? উত্তর পেতে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ ৷ ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷
বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের ফরিদপুর বাউরি পাড়ার বাসিন্দা গৌতম সাহার ভাড়া বাড়ি থেকে ছোটন দুবে নামে এক যুবকের পচাগলা রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে দুর্গাপুর থানার পুলিশ। আদতে বিহারের শাহরানপুরের বাসিন্দা ছিল ওই যুবক ৷ যে ঘরে পচাগলা রক্তাক্ত অবস্থায় 25 বছরের ছোটন দুবের দেহ উদ্ধার হয়, সেই ঘর বাইরে থেকে তালাবন্ধ ছিল । আর তা দেখেই দুর্গাপুর থানার তদন্তকারীদের সন্দেহ হয় এই ঘটনা খুন ।
তদন্তে নেমে পুলিশ ছোটন দুবের মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করতেই বেরিয়ে আসে দুর্গাপুর থানা এলাকার ধান্ডাবাগ বাগানপাড়ার বাসিন্দা কিশোর পাণ্ডের স্ত্রী পূজা পাণ্ডের মোবাইল নম্বর। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ পূজার খোঁজে তল্লাশি শুরু করে শুক্রবার পুজা পাণ্ডেকে তার ধান্ডাবাগ বাগানপাড়ার বাড়ির সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে। এরপরে দুর্গাপুর মহিলা থানার পুলিশ ও তদন্তকারী অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদের সামনে ছোটন দুবেকে কেন ও কীভাবে খুন করা হয় তা জানায় পূজা ৷ এই ঘটনায় তাকে তার দাদা মিত্তিন মণ্ডলও সাহায্য করেছে বলে জানায় পূজা ৷
তদন্তের ভিত্তিতে শুক্রবার দুর্গাপুর থেকে ওই যুবকের প্রেমিকা পূজা পাণ্ডে এবং শনিবার মালদা থেকে ধৃত প্রেমিকার দাদা মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল ওরফে মিত্তিন মন্ডলকে গ্রেফতার করা হয় । তাকে রবিবার দুর্গাপুর আদালতে তোলা হবে ৷ গ্রেফতার হওয়া পূজা পাণ্ডেকে শনিবার পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে টানাপোড়েন, তারপরেই মোবাইলে থাকা ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ভিডিয়ো দেখিয়ে প্রেমিকা পূজাকে ব্ল্যাকমেল করছিল ছোটন দুবে নামে ওই যুবক। সেই কারণেই ওই যুবককে খুন হতে হয়।
ছোটন দুবের সঙ্গে পূজার 5 বছর আগে থেকে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল । সেই সময় দুজনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছিল ছোটন। পূজার স্বামী তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ছোটনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জেনে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয় ৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পূজা যখন ছোটন দুবের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল, তখন ছোটন পূজাকে মোবাইলে তাদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করছিল। তাই পূজা তার দাদা মিত্তিনকে নিয়ে ছোটনকে খুনের পরিকল্পনা করে। এরপরেই চলতি মাসের 21 তারিখে ছোটনকে ডাকা হয় দুর্গাপুরে ।
ছোটনের অজান্তে 21 তারিখ রাতে পূজা ফরিদপুরে ওই ভাড়া বাড়িতে নিজের দাদা মিত্তিনকেও নিয়ে যায়। পূজা আর মিত্তিনের সঙ্গে বচসা হয় তাঁর । এরপরে ছোটনকে নিয়ে আরও মদ্যপান করে মিত্তিন । এরপরেই তাকে চরম নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হয় । আশপাশের ভাড়াটিয়ারা যাতে কোনও আওয়াজ না পায় তার জন্য বাথরুমের কল খুলে দেওয়া হয় এবং ঘরের ফ্যান চালিয়ে দেওয়া হয় । এরপরে ছোটনকে বাথরুমেই শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করার পরে তার দেহ তুলে এনে বিছানায় শুইয়ে রাখা হয়। রাতে ভাড়া বাড়ির মালিক সদর দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় ঘরেই মৃতদেহের সঙ্গেই রাত কাটায় পূজা এবং তার দাদা। ভোরবেলায় সদর দরজার তালা খোলা হতেই ছোটনের মৃতদেহ ফেলে রেখে ভাড়াবাড়ির ঘর বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে মিত্তিন এবং পূজা ধান্ডাবাগের ঘরে ফিরে যায় । ছোটনের মোবাইল ফোন, আধার কার্ড সমস্ত কিছুই নিয়ে চলে আসে পূজা এবং তার দাদা । কিন্তু পূজার সাতবছরের শিশুকন্যা কী এই গোটা ঘটনার সাক্ষী ? এই প্রশ্নেরই এখন উত্তর খোঁজা হচ্ছে ৷
আরও পড়ুন: