দুর্গাপুর, 26 জুন : আর পাঁচজনের মতো স্বাভাবিক ছন্দে জীবনযাপন করতে পারেন না তাঁরা । তবে তার মাঝেই দৈনন্দিন জীবনযুদ্ধে লড়ে চলেছেন । কেউ কাজে যান । কেউ ঘরে বসেই নানা কাজকর্ম করেন । ভরসা কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ । কিন্তু, বিশেষভাবে সক্ষমদের সেই ভরসাতেও এবার থাবা বসিয়েছে লকডাউন । কারণ বন্ধ কাঁচামালের জোগান । তাই তৈরি হচ্ছে না কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ । এর জেরে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বদলাতে পারছেন না এই মানুষজন । পাশাপাশি নতুন অঙ্গপ্রত্যঙ্গও পাওয়া যাচ্ছে না ।
1983 সালে দুর্গাপুরে কয়েকজন বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ মিলিত হয়ে "শারীরিক প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সমিতি "নামে একটি অলাভজনক সংস্থা তৈরি করেন । রাজ্যের নানা জেলার বিশেষভাবে সক্ষমদের সহায়তা করার কথা মাথায় রেখে এই সংস্থার আত্মপ্রকাশ । তারপর দীর্ঘ লড়াই । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে লাগাতার আবেদনের পর বেনাচিতি প্রান্তিকা এলাকায় এক চিলতে একটি ঘর পায় এই সংস্থা । 1991 সালে এই ঘর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সমিতির নতুন করে পথ চলা শুরু । কানপুর এবং কলকাতা থেকে কাঁচামাল এনে অর্থোপেডিক ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে ডিজ়াইন করানো হত । তৈরি হত বিশেষভাবে সক্ষমদের কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ । পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বাঁকুড়া,বীরভূম, পুরুলিয়া এমনকি ঝাড়খণ্ড থেকেও বিশেষভাবে সক্ষমরা কমদামে কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিতে এখানে হাজির হন । এভাবেই চলছিল ।
কিন্তু কোরোনা সংক্রমণ আর লকডাউনে চরম বিপাকে বিশেষভাবে সক্ষমরা । বিশেষ করে অর্থোপেডিক সম্পর্কিত বিশেষভাবে সক্ষমরা । কারণ প্রতি দু'মাস অন্তর তাদের এই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিবর্তন করাতে হয় । নাহলে পেশি শুকিয়ে যাওয়া সহ একাধিক সমস্যা দেখা দেয় । তাছাড়া যাঁরা নতুন অর্ডার দিয়েছেন, তাঁরাও এখনও কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাননি । অনেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সমিতির দোরগোড়ায় পৌঁছাতেই পারেননি । তাই সমস্যায় সংস্থা ও সংস্থা থেকে উপকৃত মানুষজন । তাদের আক্ষেপ, এই অবস্থায় প্রশাসন বা কোনও রাজনৈতিক দলের তরফেও কোনওরকম সাহায্য করা হয়নি ।
দীর্ঘদিন ধরে কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি করেন পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা জীবন কুমার দেওয়াসি । ক্যান্সারে আক্রান্ত তিনি । নিজেও বিশেষভাবে সক্ষম । তিনি বলেন," যে সকল বিশেষভাবে সক্ষম ভাই ও বোনরা এখানে অর্থোপেডিক ডিভাইস নিতে আসেন । তাঁরা আসতে পারছেন না । আমরাও আসতে পারিনি । কাজ শুরু করা যায়নি । তাই উভয় সংকটে পড়েছি। কাঁচামাল পাচ্ছি না । কলকাতায় যেতেও পারছি না । সবমিলিয়ে এক দারুণ দুঃসময় আমাদের ।" শারীরিক প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সমিতির সভাপতি তরুণ কান্তি সরকার বলেন,"আমি নিজেই বিশেষভাবে সক্ষম । আমি জানি যাঁরা অর্থোপেডিক প্রতিবন্ধী, তাঁরা যদি কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ না পান তাহলে কতটা অসুবিধায় পড়েন ? তাঁরা চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন । দীর্ঘ লকডাউনের জেরে বহু ভাই ও বোন বিপাকে পড়েছেন । আমরাও খুব কষ্ট করে চালাচ্ছি সংস্থার কাজ । প্রশাসনের ভূমিকা দেখে খুব অবাক হচ্ছি । কেউ কোনও খোঁজ নেয়নি আমাদের ।"
তবুও কষ্ট করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এই বিশেষভাবে সক্ষমরা । অপেক্ষা সুদিনের ।