আসানসোল, 10 মে : তাঁর কাছে আলাদা করে মাতৃদিবস করে কিছু নেই । সকালে স্নান করে পুজো সেরে খবরের কাগজ নিয়ে বসলেন বারান্দায় । দূরে ফাঁকা মাঠ । কাঠফাটা রোদ্দুর । বিষণ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন বাইরে । কী খুঁজছেন জানতে চাইলেই এক গাল হেসে চুপ করে গেলেন 104 বছরের বৃদ্ধা । তাঁর ঠিকানা আসানসোলের বৃদ্ধাশ্রম ।
ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি সকলে প্রতিষ্ঠিত । কিন্তু, কারও কাছে থাকবেন না তিনি । কারও কাছে যেন বোঝা না হয়ে যান । আর তারপরই এই সিদ্ধান্ত । স্বাধীন থাকতে স্বেচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন এই মা । হয়তো ছেলেমেয়েদের প্রতি অভিমান, না হয় ছেলেমেয়েদের তাঁর প্রতি উপেক্ষা । তবে, এসবের কোনও কিছুই মানতে নারাজ তিনি । তাই হাসিমুখেই বললেন, "ভালো আছি" ।
তিনি মায়ারানি মুখোপাধ্যায় । বাড়ি কলকাতার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে । সেখানেই বড় হয়ে ওঠা । মাত্র 16 বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল । লেকটাউনে শ্বশুরবাড়ি । স্বামী ছিলেন কৃষিবিদ । নিজের দুই ছেলে, সাত মেয়ে । সকলে প্রতিষ্ঠিত । এক ছেলে ব্যাঙ্ক অফিসার ছিলেন । অবসর নিয়েছেন । বিহারে সরকারি কর্মচারী ছিলেন আর এক ছেলে । এক মেয়ে চিকিৎসক । বাকি মেয়েরাও সবাই মুম্বই, পুনেতে থাকেন । নাতি নাতনিরাও সকলে প্রতিষ্ঠিত । কিন্তু, কারও কাছে বোঝা হয়ে থাকবেন না তিনি । তাই চলে আসা আসানসোলে । এখানে হিরাপুরের প্রান্তিক বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন তিনি । জানালেন, "স্বাধীন থাকার জন্য স্বেচ্ছায় আছি ।"
মায়াদেবী বলেন, "পড়াশোনা বেশিদূর করতে পারিনি । 16 বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় । সাত মেয়ে দুই ছেলে ।" ছেলেমেয়েরা কী করেন জানতে চাইলে কিছুক্ষণ থমকে যান মায়াদেবী । তারপর বলেন, "এক ছেলে, এক মেয়ে মারা গিয়েছে । ব্যাঙ্কে কাজ করত ছেলে, আর এক ছেলে বিহার সরকারের কর্মী ছিল । অবসর নিয়েছে । মেয়েরাও সব বাইরে মুম্বই, পুনেতে থাকে । আসানসোলে এক মেয়ের কাছে থাকতাম । কিন্তু আমি একা স্বাধীন থাকতে চাই । তাই স্বেচ্ছায় এই বৃদ্ধাশ্রমে এসে রয়েছি ।"
ছেলেমেয়েরা খোঁজ নেয় তাঁর ? মায়ারানী জানান, "খুব নেয় । ফোন করে । এখান থেকেও নিয়ে যেতে চায় । কিন্তু আমি যাব না । কারও কাছে আমি থাকব না । সংসারে আর ফিরব না । এভাবেই স্বাধীন থাকতে চাই জীবনের শেষ সময়ে ।" এখনও সুগার, প্রেসার বা কোনও জটিল রোগ নেই । হাঁটাচলা করতে পারেন । নিজেই জানালেন 104 বছর বয়স । সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় এসে দীর্ঘক্ষণ গল্প করে গিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে । সেই কথা এখনও মনে রেখেছেন তিনি । ফিরে আসার সময় ETV ভারতের প্রতিনিধিকে টাটা করেন তিনি । সঙ্গে জানান, "ভালো থেকো সবাই ।" আসলে মায়েরা হয়তো এমনই হয় ।