দুর্গাপুর, 5 মে : লকডাউনে কেউ যাতে বাড়ি থেকে না বের হয় তারজন্য নতুন বছরের বই পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল । কিন্তু দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল সে কথায় কর্ণপাত না করে স্কুল থেকে বই দেওয়া শুরু করে আজ । সামাজিক দূরত্ব না মেনে বই নিতে লাইন দেন অভিভাবকরা । বই দেওয়া শুরু হলে চলে হুড়োহুড়িও । অবশেষে স্কুলটিতে পুলিশ পৌঁছে বই দেওয়া বন্ধ করে দেয় । অনুমোদন ছাড়াই এই বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ এমন কাজ করেছে বলে দাবি দুর্গাপুরের মহকুমা শাসকের ।
লকডাউন চলাকালীন কোথাও কোনওভাবে জমায়েত করা যাবে না । রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল 10 জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান । কিন্তু এসব তোয়াক্কা না করেই আজ সকালে দুর্গাপুরের বেনাচিতি রোডে খোলে বেসরকারি একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল । চালু হয় বই দেওয়া । স্কুলের গেটের সামনে অভিভাবকরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন । কাউকে সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি । এই পরিস্থিতিতে কেন বই নিতে এসেছেন প্রশ্ন করলে অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ কাউকে কিছু না জানিয়ে গতকাল থেকে হঠাৎ টোকেন দেয় এবং নতুন সেশনের বই দিতে শুরু করে । সেইমতো আজ সকাল থেকেই বই নিতে আসতে হয়েছে ।
কথা বলতে বলতেই স্কুলের একটি কাউন্টার থেকে শুরু হয় টোকেন দেওয়া । আর এই টোকেন নেওয়াকে কেন্দ্র করেই রীতিমতো হুড়োহুড়ি লেগে যায় । হাতাহাতিও হয় অনেকের । তারপরই পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে । অভিভাবকদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় । স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বন্ধ করে দেওয়া হয় টোকেন দেওয়া ।
এবিষয়ে অর্পিতা পাঁজা নামে এক অভিভাবক বলেন ,"আমরা প্রথমে জানতাম না । পরে শুনলাম গতকাল থেকে বই দেওয়া শুরু হয়েছে । টোকেন দেওয়া চলছে । আজ যাঁরা টোকেন পাবেন তাঁরা আগামীকাল বই পাবেন । সকাল থেকে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি । আমরা আজকে টোকেন পেলাম না ।" নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অভিভাবক বলেন, " স্কুলের কাছে অভিভাবকদের মোবাইল নম্বর আছে । কেন স্কুল কর্তৃপক্ষ মোবাইলে মেসেজ করে আলাদা আলাদা করে সকলকে ডাকল না ? ভাগ ভাগ করে ডাকলে তো এভাবে ভিড় হত না । আর এই স্কুল থেকেই বই ,ছেলেমেয়েদের পোশাক সমস্ত কিছু কিনতে হয় । সেগুলো না নিয়েও তো উপায় নেই । ফলে লকডাউন থাকলেও বাধ্য হয়েই এসেছি আজ । "
ঘটনার পর স্থানীয়দের প্রশ্ন, বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলি কেন নিজেদের স্কুল থেকে বই দিচ্ছে এমন সময় ? লকডাউনে যখন সব বন্ধ, সংক্রমণ বাড়ছে তবুও কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন পদক্ষেপ মেনে নেওয়া যায় না । এতে স্কুলের আশপাশের মানুষেরও তো সংক্রমণের ভয় থেকে যাচ্ছে । আসলে নিজেরা স্কুল ব্যবসার পাশাপাশি বই ব্যবসা শুরু করেছেন ।