দুর্গাপুর, 24 নভেম্বর: দুর্গাপুরের ফরিদপুর বাউরি পাড়ার বাসিন্দা গৌতম সাহার বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার বিহারের শাহরানপুরের বাসিন্দা এক যুবকের পচাগলা রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে দুর্গাপুর থানার পুলিশ। যে ঘরে পচাগলা রক্তাক্ত অবস্থায় বিহারের ওই 25 বছরের যুবক ছোটন দুবের দেহ উদ্ধার হয়, সেই ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালাবন্ধ ছিল । আর তা দেখেই দুর্গাপুর থানার তদন্তকারীদের সন্দেহ হয় এই ঘটনা খুনের । তদন্তে নেমে পুলিশ ছোটন দুবের মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করতেই বেরিয়ে আসে দুর্গাপুর থানা এলাকার ধান্ডাবাগ বাগানপাড়ার বাসিন্দা কিশোর পান্ডের স্ত্রী পূজা পান্ডের মোবাইল নম্বর । সেই সূত্র ধরেই পুলিশ পূজার খোঁজে তল্লাশি শুরু করে ৷
শুক্রবার ওই মহিলাকে তার ধান্ডাবাগ বাগানপাড়ার বাড়ির সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপরে দুর্গাপুর মহিলা থানার পুলিশ ও তদন্তকারী অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদের সামনে ছোটন দুবেকে কেন ও কীভাবে খুন করা হয় তা জানা যায় ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, ওই মহিলা (গত 15 দিন সে পূজার বাড়িতে ছিল) ও তার রাজস্থানের বাসিন্দা দাদা মিত্তিন পান্ডে মিলে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে পূজা ।
বৃহস্পতিবার ইটিভি ভারতে প্রকাশিত হয়েছিল এই খুনের নেপথ্যে কোনও মহিলার উপস্থিতির কথা। কারণ খুন যে ঘরে হয়েছিল ছোটন, সেই ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছিল মহিলার একটি সোনালী রংয়ের কানের দুল । ফরেনসিক আধিকারিকরা তা বাজেয়াপ্ত করেছিল। পূজাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানতে পারে ছোটন দুবের সঙ্গে পূজার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে । সেই সময় দুজনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছিল ছোটন । পূজার স্বামী স্ত্রীর এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জেনে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে প্রায়শই অশান্তি লেগে থাকত ৷
আরও জানা গিয়েছে, পূজার স্বামী কিশোর পান্ডে পুরুলিয়াতে সরকারি কারখানায় কাজ করে । গত কয়েকদিন আগে রাজস্থানের একটি হোটেলে কাজ করা পূজার দাদা মিত্তিন পান্ডে ধান্ডাবাগে পূজার বাড়িতে আসে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পূজা যখন ছোটন দুবের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল, তখন ছোটন পূজাকে মোবাইলে তাদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করছিল । তাই পূজা তার দাদা মিত্তিনকে নিয়ে ছোটনকে খুনের পরিকল্পনা করে । এরপরেই ছোটনকে ডাকা হয় দুর্গাপুরে ।
পুলিশের অনুমান গত মঙ্গলবার মিত্তিন ও পূজা রাতের অন্ধকারে ফরিদপুরে ওই ভাড়া বাড়িতে ছোটনের কাছে যায় । সেখানে ছোটনকে প্রচুর মদ খাইয়ে তার গলা টিপে তাকে খুন করা হয় । এরপরেই মিত্তিন এবং পূজা ওই ঘরের বাইরে থেকে তালা দিয়ে ধান্ডাবাগের ঘরে ফিরে আসে । শুক্রবার সকালে মিত্তিন পালিয়ে যায় দুর্গাপুর থেকে। এরপরে দুর্গাপুর থানার পুলিশ তাদের সঙ্গে মহিলা পুলিশ নিয়ে গিয়ে পূজাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে । পুলিশ সূত্রে জানা গিছে পূজা পুলিশি জেরাই স্বীকার করেছে যে, ছোটনের মোবাইলে তার বেশ কিছু নগ্ন ছবি ছিল । সেই ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছিল ছোটন । সেই কারণেই তাকে খুন করা হয়। পরকীয়া সম্পর্ক থেকে বেরোতে চাইছিল পূজা । কিন্তু মোবাইলে থাকা তার বেশ কিছু আপত্তিকর ছবি নিয়ে এই ছোটন তাকে ব্ল্যাকমেইল করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য চাপ দিচ্ছিল । আপাতত পুলিশ পূজার দাদা মিত্তিনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে ।
আরও পড়ুন: