আসানসোল, 8 জানুয়ারি: 1990 সালের 30 অক্টোবর রাম মন্দিরের দাবিতে করসেবকদের পদযাত্রায় গুলি চালিয়েছিল মুলায়ম সিং সরকার। পরবর্তীতে মুলায়ম সিং যাদব সেই বিষয়ে দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন। সেই গুলি চালানোর ঘটনায় 16 জন করসেবকের প্রাণ গিয়েছিল। গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন অনেকেই। সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন আসানসোলের বাসিন্দা কর সেবক অভয় কুমার বার্নোয়াল। আগামী 22 জানুয়ারি রাম মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে আমন্ত্রণপত্র তাঁর বাড়িতে এসে পৌঁছেছে।
রাম মন্দির তৈরির দাবিতে অনড় বছর 20-র অভয় বার্নোয়াল বিভিন্ন বাধা পার করে 350 কিলোমিটার হেঁটে সেই সময় পৌঁছেছিলেন অযোধ্যা। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে এতগুলো বছর। অবশেষে আগামী 22 জানুয়ারি উদ্বোধন হবে রাম মন্দির ৷ তাঁর হাতে এসে পৌঁছেছে সেই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র ৷ অতি সম্মানজনক সেই আমন্ত্রণ পত্র হাতে নিয়েই অভয় বার্নওয়াল ইটিভি ভারতের সঙ্গে স্মৃতিচারণায় ভাগ করে নিলেন সেদিনের রোমহর্ষক অতীতের কথা।
আসানসোল শহরের হটন রোডের অচলা বালা লেনে বাড়ি অভয় কুমারের বার্নওয়ালের। তিনি ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যের ব্যবসায়ী। বাড়িতে স্ত্রী সুষমা বার্নওয়াল। সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী অভয় কুমার বার্নওয়াল 1990 সালে রাম মন্দির তৈরির দাবিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন অযোধ্যা। কর সেবকদের পদযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন ৷ গুলি লেগেছিল তাঁর পায়ে। কিন্তু অযোধ্যা পৌঁছনোটা এত সহজ ছিল না অভয় বার্নওয়ালের পক্ষে। ইটিভি ভারতকে অভয় কুমার বার্নওয়াল বলেন, "21 অক্টোবর আমরা আসানসোল থেকে রওনা দিয়েছিলাম। 22 অক্টোবর বেনারসে পৌঁছই। মুলায়ম সিং জানিয়েছিলেন একটি পাখি পর্যন্ত তিনি ঢুকতে দেবেন বা অযোধ্যায়। সেইমত বেনারস স্টেশনে নেমে দেখি চারিদিকে পুলিশে ৷ আমি কোনওভাবে পিছনের গেট দিয়ে লুকিয়ে বেনারস স্টেশন থেকে বাইরে বেরিয়ে ছিলাম। তারপর বেনারসের দশাশ্বমেধ ঘাটে স্নান করে আমি প্রায় সাড়ে 350 কিলোমিটার পায়ে হেঁটে অযোধ্যায় পৌঁছে যাই।"
একইসঙ্গে তিনি বলেন, "গোটা উত্তরপ্রদেশ যেন তখন পুলিশের ছাউনি। আমাদের গ্রাম, জনপদ এড়িয়ে জঙ্গলের পথ দিয়ে ঘুর পথে পুলিশের চোখ বাঁচিয়ে অযোধ্যা পৌঁছতে হয়েছিল। তা না হলে, এতটা পথ অতিক্রম করতে হত না। সেই পায়ে হাঁটা পথ বর্ণনা করা যায় না, এতটাই কষ্টকর ছিল। কিন্তু মনের ভেতর জোর ছিল অযোধ্যা পৌঁছবই।"
অযোধ্যা পৌঁছানোর পর কী হল ? অভয় বার্নওয়ালের কথায়, "28 অক্টোবর আমরা অযোধ্যায় পৌঁছে যাই। স্বয়ম্বর নগরে একটি আখের খেতের মধ্যে আমরা লুকিয়ে ছিলাম। 30 অক্টোবর যখন আমরা অযোধ্যায় ঢুকলাম তখন চারপাশে পুলিশে ছয়লাপ। প্রথমে প্রায় জনশূন্য ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে দেখি চারপাশ থেকে হাজার হাজার করসেবকরা অযোধ্যায় আসতে শুরু করেছে। সেই সময় এক সাধু একটি বাস নিয়ে আমাদের উদ্দেশে বলেন, যারা যারা রাম মন্দিরের স্থলে যেতে চাও তারা চেপে পড়ো। আমরা সবাই চেপে পড়ি। আমি বাসের ছাদে উঠেছিলাম ৷ সেই বাস ব্যারিকেড ভেঙে সোজা ঢুকে যায় মন্দিরের সামনে। আমি গম্বুজের উপর উঠে ধ্বজা লাগিয়েছিলাম। নামার পর দেখি চারিদিকে গুলি চলছে। আমার সামনে বহু মানুষ গুলিবিদ্ধ হলেন একটি গুলি এসে লাগে আমার পায়ে। তারপর প্রায় 72 ঘণ্টা আমি অচেতন ছিলাম। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালে।"
আজ কেমন লাগছে ? তাঁর কথায়, "আজকের দিনটি শুধু আমার কাছে নয়, সমস্ত ভারতীয় সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী মানুষদের কাছে অতি গর্বের দিন। আমার ভালো লাগছে আমি অযোধ্যা থেকে বিশেষ আমন্ত্রণপত্র পেয়েছি সেখানে যাওয়ার। আমার বাড়িতে সেই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আমি সেদিন ওখানে যাব এবং এই চরমতর গর্বের ঐতিহাসিক দিনের সাক্ষী থাকব।"
আরও পড়ুন: