নয়াদিল্লি, 18 সেপ্টেম্বর : ‘‘রাজনীতির মানুষ রাজনীতিতে ফিরে এলেন ৷ এটাই ভাল লাগছে ৷’’ বাবুল সুপ্রিয়র (Babul Supriyo) তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান নিয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির (Jitendra Tiwari) ৷ শনিবার দুপুরেই ঘাসফুল শিবিরে নাম লেখান বাবুল ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) হাত ধরেই নতুন করে পথ চলা শুরু করেন বাবুল ৷ যিনি নাকি কিছুদিন আগেই রাজনীতি থেকে ‘সন্ন্যাস’ গ্রহণ করেছিলেন ! তাঁর এমন ভোলবদলে জমজমাট কলকাতার বৃষ্টি ভেজা শনিবাসরীয় দুপুর ৷ যার রেশ ছড়িয়েছে গোটা রাজ্যে ৷ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাজনীতির অলিন্দ, সর্বত্রই আলোচনা চলছে তাঁকে নিয়ে ৷ এমন একটা সময়ে কী বলছেন আসানসোলের প্রাক্তন পৌরপ্রধান ? সেটাই জানার চেষ্টা করলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ প্রসঙ্গত, বিজেপি ছাড়লেও বাবুল এখনও আসানসোলেরই সাংসদ ৷
আরও পড়ুন : Babul Supriyo : মোদির ‘পছন্দের’ বাবুল কি রাজ্যসভায় নাকি রাজ্য মন্ত্রিসভায় ? জল্পনা তুঙ্গে
জিতেন্দ্র তিওয়ারি বর্তমানে আসানসোলে নেই ৷ তিনি রয়েছেন কলকাতায় ৷ টেলিফোনেই জানালেন, ‘‘বাবুল সুপ্রিয় কী করবেন, সেটা একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার ৷ তবে তিন গত সাত-আট বছর ধরে রাজনীতিতে ছিলেন ৷ সম্প্রতি শুনছিলাম তিনি নাকি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিচ্ছেন ৷ শেষমেশ যে তিনি ফের রাজনীতিতে ফিরে এলেন, এটাই ভাল লাগছে ৷’’
প্রসঙ্গত, বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে জিতেন্দ্র তিওয়ারির রসায়নটা বেশ জমাটি ৷ কারণ, বাবুল যখন বিজেপি-তে, তখন জিতেন্দ্র ছিলেন তৃণমূলে ৷ প্রথম জন সেই সময় আসানসোলের সাংসদ আর দ্বিতীয় জন আসানসোলের মেয়র ৷ দু’জনেরই বিরাট দাপট ৷ আসানসোলের উন্নয়ন ইস্যুতে এই দু’জনের আকচাআকচি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই ৷ পরবর্তীতে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে অন্য অনেকের মতো জিতেন্দ্র তিওয়ারিও গেরুয়া হাওয়ায় ভেসে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগদানের আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করেন ৷ তাতে প্রধান বাধাই ছিলেন বাবুল সুপ্রিয় ! তাঁকে দলে নেওয়া নিয়ে প্রবল আপত্তি ছিল তৎকালীন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রীর ৷ শেষমেশ অবশ্য অনেক জলঘোলা আর নাটকের পর জিতেন্দ্র তাঁর অভিযানে সফল হন ৷
ভোটের পর যদিও শুরু হয় অন্য খেলা ৷ বিজেপি-র বাংলা জয়ের স্বপ্ন দুরমুশ করে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ এবার হাওয়া বইতে শুরু করে উল্টোদিকে ৷ যাঁরা কিছুদিন আগেই শিবির বদলে গেরুয়া হয়েছিলেন, তাঁরা ফের ঘাসফুলে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন ৷ তবে বিজেপি-কে যে একেবারে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে, তা নয় ৷ নয় নয় করেও 77 টি আসন পকেটে পোরে বিজেপি ৷ উত্তরবঙ্গ যে গেরুয়া নেতাদের নজরে রয়েছে, সেটাও ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করে ৷
আরও পড়ুন : Opponent's Reaction : আচমকা জার্সি বদলে এক সুরে বাবুলকে বিঁধল সিপিআইএম-কংগ্রেস
এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পুনর্বিন্যাসের সময় বাংলা থেকে ‘নতুন মুখ’ তুলে আনার দায় বাড়ে বিজেপি নেতৃত্বের ৷ তুলে আনা হয় নিশীথ প্রামাণিক, শান্তনু ঠাকুরের মতো তরুণ তুর্কিদের ৷ বদলে রাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ খোয়াতে হয় বাবুলকে ৷ নিন্দুকেরা বলেন, বিষয়টি নাকি মেনে নিতে পারেননি বাবুল স্বয়ং ৷ আর সেই কারণেই বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি ৷ তবে দল ছাড়়লেও সাংসদ পদ ধরে রাখেন ৷ কিন্তু, তা বলে বাবুল যে একেবারে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেবেন, শনিবার দুপুরের আগে পর্যন্ত তার কোনও আভাস ছিল না ৷ আর তাঁর এই দলবদলে আবারও বিরোধী দুই শিবিরের নৌকায় সওয়ার হয়ে গেলেন বাবুল আর জিতেন্দ্র ৷ তবে পরস্পরের সঙ্গে পুরনো জায়গাটা বদলে নিতে হয়েছে তাঁদের ৷ সত্যি ! রাজনীতিতে বোধ হয় সবই সম্ভব ৷