আসানসোল, 5 এপ্রিল: রাষ্ট্রায়ত্ত খনির বৈধ কয়লার কারবারেও তোলাবাজি, ব্ল্যাক ইকোনমি'র অভিযোগ করেছিলেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি । দুর্গাপুরের কয়লা কারবারী রাজু ঝা'য়ের খুনের পিছনে কারণ হিসেবে সেই সিন্ডিকেটের দ্বন্দ্ব উঠে আসছে পুলিশি তদন্তে । শনিবার রাতে বর্ধমানে শক্তিগড়ে আততায়ীদের গুলিতে খুন হন রাজু ঝা । পুলিশ তদন্তে নেমে যে গাড়িতে আততায়ীরা এসেছিল, সেই নীল রঙের ব্যালেনো গাড়িটি উদ্ধার করেছে । যদিও ওই গাড়ির ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর সবই নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে । গাড়ির ভিতরেও মিলেছে বেশ কয়েকটি নীল ব্যালেনো গাড়ির নম্বর প্লেট ।
ঝাড়খণ্ড সীমান্ত দিয়ে গাড়িটি এ রাজ্যে ঢুকেছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে । ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন স্থানেও সিসিটিভি ফুটেছে মিলেছে ওই গাড়ির ছবি । যদিও আততায়ীরা ঝাড়খণ্ডের কি না সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ । পুলিশ আপাতত গাড়িটির মালিককে খুঁজছে । ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর পেতে ফরেনসিকের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে । পুলিশ তদন্তে নেমে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর বিষয় পেয়েছে । খুনের মোটিভ নিয়ে জানতে গিয়ে যেসব তথ্য উঠে আসছে, তাতে বৈধ কয়লার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদাগিরি ট্যাক্স বা তোলাবাজির একটা বিষয় সামনে আসছে । বিভিন্ন খনিতে যে কয়লার বিডিং হয়, তাতে খনি থেকে কয়লা নিয়ে যেতে সিন্ডিকেটকে তোলা দিতে হত বৈধ কয়লা ব্যবসায়ীদের । আর সেই তোলার পরিমাণ বিরাট । মাসে অন্তত 25 কোটি টাকা । এই টাকা রাজুর কাছেই যেত বলে অভিযোগ উঠছে ।
তবে কি সিন্ডিকেটের দখল অন্য কেউ নেওয়ার জন্য রাজুকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা? বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি নভেম্বর মাসে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, "অনলাইন বিডিং হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা ইসিএলে । প্রায় প্রতিমাসে আট লক্ষ মেট্রিক টন কয়লা বিডিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি করে ইসিএল । বহু বাইরের ব্যাবসায়ীরাও ই-অকশনে এই কয়লা কেনেন । কিন্তু খনি থেকে কয়লা লরিতে তুলে সরবরাহ করতে স্থানীয় মানুষদের উপর নির্ভর করতে হয় তাদের ।
সহযোগী এই যুবকদের এদের লিফটার বলে । জিতেন্দ্র দাবি করেছিলেন, সহযোগী এই লিফটারদের হুমকি দিয়ে তোলা নেওয়া হচ্ছে । তার জন্যই সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে । তোলার পরিমাণ শুনলেও চোখ কপালে ওঠে । প্রতি টন পিছু 300 টাকা করে তোলা ওই অসাধু সিন্ডিকেটকে দিতে হত । না দিলেই হুমকি, কয়লার লরি আটকে দেওয়া, কয়লা তুলতে না দেওয়া, মারধর দাদাগিরি । প্রতি টন পিছু 300 টাকা তোলা নিলে, বিডিং হওয়া কয়লাতে মাসে অন্তত 25 কোটি তোলা আদায় করা হত অসাধু সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে । আর এর ফলে কয়লার দাম বাড়ত ।
পাশাপাশি জিতেন্দ্র তিওয়ারি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন এই সিন্ডিকেটের দখল ও টাকা ভাগ বাটরা নিয়ে কয়লাঞ্চলে শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে । এর জেরে কয়লার দাম বেড়ে যাবে । তৈরি হবে ব্ল্যাক ইকোনমি । জিতেন্দ্র এই ব্ল্যাক ইকোনমি নিয়ে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিজি, কোল ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি এবং ইসিএলের সিএমডিকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিলেন । কিন্তু তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি । রাজু খুনের পিছনে এখন এই সিন্ডিকেটের তত্ত্ব উঠে আসছে । পুলিশি তদন্তে আগামিদিনে নিশ্চয় উঠে আসবে সঠিক তথ্য, এমন আশায় কয়লাঞ্চলবাসী ।
আরও পড়ুন: মাফিয়া খুনের অতীত ইতিহাসের মতোই রাজু ঝা খুনেও কি জড়িত তাঁর কাছের লোক ?