জামুড়িয়া, 21 জুলাই : চোখ রাঙাচ্ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ । বিশেষজ্ঞদের মতে এই ঢেউয়ে আক্রান্ত হতে পারেন শিশু ও প্রসূতি মায়েরা । চারিদিকে যখন ভ্যাকসিন নিতে রাতভর লাইনে দাঁড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষ, তখন শুধুমাত্র ভয়ে ভ্যাকসিন নেওয়া থেকে দূরে থাকতেন এখানকার মহিলারা ৷ আক্রান্ত হওয়ার চেয়েও ভয় পেতেন ভ্যাকসিন নেওয়াকে ৷ জামুড়িয়ার জবা গ্রামের পেশায় দিনমজুর আদিবাসী মহিলারা ভাবতেন ভ্যাকসিন নিলে যদি মৃত্যু হয় ৷
ভ্যাকসিন সংক্রান্ত এই ভয় দূর করতে এগিয়ে এলেন স্থানীয় জামুড়িয়া তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়েক ৷ কীভাবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন তিনি ?
নাম দীপনারায়ণ নায়েক হলেও এলাকায় তিনি 'রাস্তার মাস্টার' নামেই পরিচিত ৷ লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় গত দেড় বছর ধরে আদিবাসী পড়ুয়াদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ক্লাস করছেন দীপনারায়ণবাবু । এই উদ্যোগ নিয়ে পঠন-পাঠন করানোর জন্য ইতিমধ্যেই তিনি 'রাস্তার মাস্টার' নামে খ্যাতি পেয়েছেন । শুধু আদিবাসী পড়ুয়াদের জন্য নয়, দিনমজুর অভিভাবকদেরকেও পড়ানাের ব্যবস্থা করেন তিনি । পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক বিষয়ে সচেতনতার কাজও চালিয়ে যান সকলের প্রিয় 'রাস্তার মাস্টার'।
সচেতনতার কাজ করতে গিয়েই দীপনারায়ণবাবু জানতে পারেন ভ্যাকসিন নিতে অনীহা রয়েছে জামুড়িয়ার আদিবাসী অধ্যুষিত জবা গ্রামের মহিলাদের । ভ্যাকসিন নিলে মৃত্যু হতে পারে এমন কুসংস্কারও রয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে । এরপরই ভ্যাকসিন নিয়ে ভয় দূর করার কাজে নেমে পড়েন তিনি ৷ প্রধানমন্ত্রী-সহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন নেওয়ার ভিডিয়ো ও নিজের ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট দেখিয়ে তাঁদের সচেতন করেন 'রাস্তার মাস্টার' ।
আরও পড়ুন : 9 মাস ধরে বন্ধ পরিশ্রুত পানীয় জল, প্রতিবাদে পথ অবরোধ দুর্গাপুরে
শেষমেষ ভ্যাকসিন নিতে রাজি হলেও এতজনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে দেখা দেয় অপ্রতুলতা । সেই সমস্যা সমাধান করতে স্বাস্থ্য বিভাগের সাহায্য নিয়ে অনলাইন শ্লট বুক করেন তিনি । নিখরচায় গ্রামবাসীদের জামুড়িয়া আখলপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থা করেন দীপনারায়ণবাবু । মহিলাদের উৎসাহিত করতে যার নাম দেন 'ভ্যাকসিন রথ' । সেই ভ্যাকসিন রথে চেপেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেন মহিলারা ৷
ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ওই 100 জন আদিবাসী মহিলার হাতে তুলে দেন গিফট কুপনও । তাঁদের প্রিয় 'রাস্তার মাস্টার'-এর এই উদ্যোগে খুশি জামুড়িয়ার আদিবাসী গ্রামের মহিলারা । ভ্যাকসিন নিয়ে তাঁরা খুব খুশি ৷ ভয়কে জয় করে তাঁরাও সচেতনতার বার্তা দিচ্ছেন ৷ বলছেন "ফের আসব দ্বিতীয় ডোজ নিতে" ৷
এইভাবে আর্থিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া গ্রামবাসীদের ধারাবাহিকভাবে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন 'রাস্তার মাস্টার' দীপনারায়ণ নায়েক ।