আসানসোল, 24 নভেম্বর: 23 সেপ্টেম্বর, 2021 ৷ পুজোর আগে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় রয়েছে বাড়তি নজরদারি ৷ যাতে উৎসবে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে ৷ সেই সময়েই বরাকর চেক পোস্টে এক বাইক আরোহীকে দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের ৷ তাঁকে থামিয়ে তল্লাশি চালাতেই চক্ষুচড়কগাছ ! ব্যাগের ভিতরে রয়েছে 25টি সেভেনএমএম পিস্তল এবং 45টি ম্যাগাজিন ৷ এতদিন বাইরের রাজ্য থেকে এ রাজ্যে অস্ত্র আমদানির অভিযোগ উঠত ৷ কিন্তু, এই ঘটনায় পুলিশও চমকে যায়। কারণ, এক্ষেত্রে বাংলা থেকে ভিন রাজ্যে পাচার হচ্ছিল অস্ত্র (Arms Smuggling from West Bengal) !
আরও তথ্য জানতে ধৃত আশ মহম্মদ ওরফে বাবলুকে জেরা শুরু করে পুলিশ ৷ পরবর্তীতে এসটিএফ (STF) বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে ৷ প্রকাশ্যে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ জানা যায়, অস্ত্র তৈরি হচ্ছে পশ্চিম বর্ধমানে কুলটি থানা এলাকায় ! ধৃতকে জেরা করে গত বছরেরই 1 অক্টোবর কুলটির ডিসেরগড়ে বড় অস্ত্র কারখানার হদিশ পায় পুলিশ ৷ সেই কারখানা থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র এবং অস্ত্র তৈরির যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয় ৷ আশ মহম্মদকে জেরা করে উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদ থেকে আনওয়ার খান ওরফে রশিদ এবং আফতাব খান নামে আরও দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে ট্রানজিট রিমান্ডে এ রাজ্যে নিয়ে আসা হয় ৷ সূত্র মেলে আন্তঃরাজ্য অস্ত্রপাচার চক্রের ৷ এরপর তিনজনকে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করে কুলটি থানার পুলিশ ৷ তারই ভিত্তিতে ডিসেরগড়ে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির নীচে গোপন অস্ত্র কারখানার সন্ধান মেলে ৷ সেখান থেকে সাতটি 7.62এমএম পিস্তল, 20টি অসমাপ্ত পিস্তল, 14টি ম্যাগাজিন, পাঁচটি অসমাপ্ত ম্যাগাজিন এবং 13 রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয় ৷
আরও পড়ুন: হীরাপুরে বেআইনি অস্ত্র কারখানা মামলায় গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত
এখানেই শেষ নয় ৷ ওই মাসেই অর্থাৎ 2021 সালের 24 অক্টোবর ফের বেআইনি অস্ত্র কারখানার (Illegal Firearms Factory) খোঁজ মেলে আসানসোলে ৷ হীরাপুর থানার রহমতনগর নয়া বস্তি 10 নম্বর এলাকায় একটি বাড়িতে অস্ত্র কারখানার খোঁজ পায় পুলিশ ৷ প্রচুর পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয় ৷ মেলে বেশ কয়েকটি অস্ত্রও ৷ সেই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় তিন জনকে ৷
এরপর চলতি বছরের 24 মার্চ বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় এ রাজ্যের সালানপুরের রূপনারায়ণপুরে বেআইনি অস্ত্র কারখানার খোঁজ পায় পুলিশ ৷ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রূপনারায়ণপুরের চিতলডাঙা উপরপাড়া এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালায় তারা ৷ সেখানে মেলে বন্দুক তৈরির যন্ত্র, লেদ মেশিন, পাইপ-সহ অন্যান্য সামগ্রী ৷ বেশ কয়েকটি অসমাপ্ত বন্দুকও উদ্ধার হয় ওই বাড়ি থেকে ৷ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ রূপনারায়ণপুরের একেবারে প্রত্যন্ত একটি গ্রামে বাড়ি ভাড়া করে চলছিল এই বেআইনি অস্ত্র কারখানা ৷
গত অক্টোবর (2022) মাসে কলকাতায় অস্ত্রপাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে চার দুস্কৃতী ৷ তাদের কাছে কার্বাইন পর্যন্ত উদ্ধার হয় ! ধৃতদের মধ্যে একজন ইমতিয়াজ খানকে জেরা করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানার মিহিজাম এলাকায় একটি অস্ত্র কারখানার হদিশ পায় ৷ ঝাড়খণ্ডের জামতারা জেলার মিহিজাম এলাকায় জনৈক শাহজাহান খানের বাড়ির নীচের গোপন কক্ষে এই অস্ত্র কারখানা চলছিল ৷ ধৃত ইমতিয়াজ খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই এই অস্ত্র কারখানার হদিশ পায় কলকাতা পুলিশের এসটিএফ ৷ এরপর কলকাতা পুলিশের এসটিএফ এবং ঝাড়খণ্ড পুলিশ যৌথভাবে ওই বাড়িতে অভিযান চালায় ৷ কাউকে হাতেনাতে ধরা না গেলেও প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র, অসমাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র এবং বন্দুক তৈরির যন্ত্রপাতি উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ ৷ উদ্ধার করা হয় লেদ মেশিন, গ্র্যান্ডিং মেশিন-সহ অন্য়ান্য সামগ্রী ৷
এভাবে বারবার বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া আসানসোল (Asansol) ও আশপাশের এলাকায় বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিশ মেলায় উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসন ৷ প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি 'দ্বিতীয় মুঙ্গের' হয়ে উঠছে আসানসোল ! পুলিশের পক্ষ থেকে যদিও জানানো হয়েছে, বেআইনি অস্ত্রের কারবার রুখতে তারা যথেষ্ট তৎপর ৷ প্রয়োজনে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে সমস্যার মোকাবিলা করা হবে ৷