ETV Bharat / state

Asansol Primary School: পড়ুয়া পাঁচ, শিক্ষক দুই ! চলছে সরকারি প্রাথমিক স্কুল

আসানসোলের জিটি রোডের ধারে তালপুকুরিয়া এলাকায় সরকারি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাল বেহাল (Asansol Primary School Situation)! স্কুলটি 1927 সালে স্থাপিত হয়েছিল। তখন স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে তিনশো। কিন্তু আজ দেখলে অবাক হতে হয়। কখনও তিনজন, কখনও পাঁচজন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে স্কুল চালাচ্ছেন দুই শিক্ষক ৷ অভিভাবকরা এই স্কুলে পাঠাতে চান না-ছাত্র-ছাত্রীদের । কিন্তু কেন এমনটা ?

Asansol Primary School
সরকারি স্কুল
author img

By

Published : Feb 8, 2023, 10:59 PM IST

ছাত্রদের উপস্থিতির হার কোনওদিন 5, কোনওদিন 3

আসানসোল, 8 ফেব্রুয়ারি: এই স্কুলে বাজে না ঘণ্টা। নেই খেলার মাঠ। এক কামরার হল ঘরে কয়েকটি বেঞ্চ, একটি টেবিল। ব্ল্যাক বোর্ডও দীর্ঘদিন না-ব্যবহারে লেখার অযোগ্য। তবু স্কুল চলছে। ভাঙা জানলা দিয়ে শীত কিংবা বৃষ্টির ঝাপট আসে। কোনও এককালে বিদ্যুৎ ছিল, আজ তাও উধাও। মিড-ডে মিল খেতে যেতে হয় অন্য স্কুলে। খাতায় কলমে 11 জন ছাত্রছাত্রী। উপস্থিতির হার কোনওদিন 5, কোনওদিন 3। একজন শিক্ষক ও এক শিক্ষিকা তবু আসানসোলে চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় (Primary School of Asansol)।

স্কুলের বর্তমান অবস্থা কী?

আসানসোলের জিটি রোডের ধারে তালপুকুরিয়া এলাকায় ঠিক নুরুদ্দীন রোডের মোড়ের উলটো দিকেই রয়েছে হিন্দি মাধ্যম স্কুল দুর্গা বিদ্যালয়। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। স্কুলটি 1927 সালে স্থাপিত হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকেও এই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে তিনশো। এক কামরার এই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জায়গা দিতে পারতেন না শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু আজ দেখলে অবাক হতে হয়। কখনও তিনজন, কখনও পাঁচজন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে স্কুল চালাচ্ছেন স্কুলের টিচার ইনচার্জ মঞ্জু কুমারী এবং শিক্ষক বাবলু ভগত। দিনের পর দিন ছাত্র-ছাত্রী কমতে কমতে আজ একদম তলানিতে ঠেকেছে। স্কুলের টিচার ইনচার্জ মঞ্জু কুমারী এবং বাবলু ভগত দু'জনেই এলাকায় ঘুরে ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করেছেন কিন্তু অভিভাবকরা এই স্কুলে পাঠাতে চান না-ছাত্র-ছাত্রীদের।

স্কুলে ছাত্রছাত্রী কমে আসার কারণ কী?

স্কুলের টিচার ইনচার্জ মঞ্জু কুমারী জানান, স্কুলের সামনে রয়েছে জিটি রোড। সেই জিটি রোড পার করে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে আসতে হয়। এই কারণে অনেকেই স্কুলে আসতে চায় না। এছাড়াও আমাদের স্কুলটি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। অন্যান্য হিন্দি বিভাগ স্কুলগুলি প্রথম থেকে একদম, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ফলে অভিভাবকরা একেবারে নিশ্চিন্ত হয়ে যান সেই স্কুলে ভরতি করে দিয়ে। তাই কমে আসছে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা।

আরও পড়ুন: ভগ্নদশায় আরামবাগের নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়, আতঙ্কিত ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবকরা

স্কুলের শিক্ষক বাবলু ভগত জানান, এই স্কুলের পিছনেই রেলের আউটহাউস ছিল। অফিসারদের পরিচারিকারা সেখানে থাকতেন। এই স্কুলটিতে মূলত নিম্নবর্গ পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা, দিনমজুর শ্রেণির পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসে। রেল সেই আউট হাউস'টি তুলে দেয় ফলে পরিচারিকাও এখান থেকে চলে যান ৷ ফলত তাঁদের বাড়ির ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল ছেড়ে দেয়। পাশাপাশি যে সমস্ত দিনমজুররা এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠাতেন তাঁরা কাকভোরে কাজে চলে যান। নিজেরা এসে ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে যেতে পারেন না। ফলে ব্যস্ত এই জিটি রোড পেরিয়ে বাচ্চারা আসতে ভয় পায়। সেই কারণে কমে যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা। তবু চেষ্টা চালানো হচ্ছে ৷

মিড-ডে মিল কোথায় হয়?

দিনের পর দিন ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা কমতে কমতে একেবারে তলানিতে ঠেকে যাওয়ায় এই স্কুলে মিড-ডে মিল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যারা আসে তাঁরা মিড-ডে মিল খাবে কোথায়? সে কারণে স্কুল পরিদর্শক ঠিক করে দিয়েছেন পাশের স্কুলে নিয়ে গিয়ে মিড-ডে মিল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেইমতো দুর্গা বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষিকা প্রত্যেকদিন ছাত্র-ছাত্রীদের সাবধানে জিটি রোড পার করে উলটো প্রান্তে নিয়ে যান মিড-ডে মিল খাওয়াতে। যেভাবে রাস্তায় বড় গাড়ি চলাচল করছে তার মাঝখান দিয়ে রাস্তা পারাপার করা সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ। শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, কোনও উপায় নেই।

কিন্তু এভাবেই চলবে স্কুল?

দুর্গা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মতে যদি পঠনপাঠনের মান বাড়াতে পরিকাঠামো বাড়ানো যায়, যদি আরও আকর্ষণীয় করা যায় স্কুলটিকে তাহলে হয়তো ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বাড়তে পারে। এই এক কামরার স্কুলে অনেকেই আসতে চায় না। তবে একান্তই যদি না-হয় তাহলে এই স্কুলটিকে অন্য স্কুলের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হোক। তাতে এই ছাত্র-ছাত্রীরাও স্কুলের পরিবেশ ফিরে পাবে এবং তাদেরও পড়াতে ভালো লাগবে। বিষয়টি নিয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক দেবব্রত পালের কাছে যাওয়া হলে তিনি জানান, ওই বিদ্যালয়ে যাওয়া হয়েছে, বৈঠকও হয়েছে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সত্যিই কবে স্কুল ভরে উঠবে, স্কুল বাঁচবে, সেটাই এখন দেখার !

ছাত্রদের উপস্থিতির হার কোনওদিন 5, কোনওদিন 3

আসানসোল, 8 ফেব্রুয়ারি: এই স্কুলে বাজে না ঘণ্টা। নেই খেলার মাঠ। এক কামরার হল ঘরে কয়েকটি বেঞ্চ, একটি টেবিল। ব্ল্যাক বোর্ডও দীর্ঘদিন না-ব্যবহারে লেখার অযোগ্য। তবু স্কুল চলছে। ভাঙা জানলা দিয়ে শীত কিংবা বৃষ্টির ঝাপট আসে। কোনও এককালে বিদ্যুৎ ছিল, আজ তাও উধাও। মিড-ডে মিল খেতে যেতে হয় অন্য স্কুলে। খাতায় কলমে 11 জন ছাত্রছাত্রী। উপস্থিতির হার কোনওদিন 5, কোনওদিন 3। একজন শিক্ষক ও এক শিক্ষিকা তবু আসানসোলে চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় (Primary School of Asansol)।

স্কুলের বর্তমান অবস্থা কী?

আসানসোলের জিটি রোডের ধারে তালপুকুরিয়া এলাকায় ঠিক নুরুদ্দীন রোডের মোড়ের উলটো দিকেই রয়েছে হিন্দি মাধ্যম স্কুল দুর্গা বিদ্যালয়। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। স্কুলটি 1927 সালে স্থাপিত হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকেও এই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে তিনশো। এক কামরার এই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জায়গা দিতে পারতেন না শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু আজ দেখলে অবাক হতে হয়। কখনও তিনজন, কখনও পাঁচজন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে স্কুল চালাচ্ছেন স্কুলের টিচার ইনচার্জ মঞ্জু কুমারী এবং শিক্ষক বাবলু ভগত। দিনের পর দিন ছাত্র-ছাত্রী কমতে কমতে আজ একদম তলানিতে ঠেকেছে। স্কুলের টিচার ইনচার্জ মঞ্জু কুমারী এবং বাবলু ভগত দু'জনেই এলাকায় ঘুরে ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করেছেন কিন্তু অভিভাবকরা এই স্কুলে পাঠাতে চান না-ছাত্র-ছাত্রীদের।

স্কুলে ছাত্রছাত্রী কমে আসার কারণ কী?

স্কুলের টিচার ইনচার্জ মঞ্জু কুমারী জানান, স্কুলের সামনে রয়েছে জিটি রোড। সেই জিটি রোড পার করে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে আসতে হয়। এই কারণে অনেকেই স্কুলে আসতে চায় না। এছাড়াও আমাদের স্কুলটি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। অন্যান্য হিন্দি বিভাগ স্কুলগুলি প্রথম থেকে একদম, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ফলে অভিভাবকরা একেবারে নিশ্চিন্ত হয়ে যান সেই স্কুলে ভরতি করে দিয়ে। তাই কমে আসছে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা।

আরও পড়ুন: ভগ্নদশায় আরামবাগের নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়, আতঙ্কিত ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবকরা

স্কুলের শিক্ষক বাবলু ভগত জানান, এই স্কুলের পিছনেই রেলের আউটহাউস ছিল। অফিসারদের পরিচারিকারা সেখানে থাকতেন। এই স্কুলটিতে মূলত নিম্নবর্গ পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা, দিনমজুর শ্রেণির পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসে। রেল সেই আউট হাউস'টি তুলে দেয় ফলে পরিচারিকাও এখান থেকে চলে যান ৷ ফলত তাঁদের বাড়ির ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল ছেড়ে দেয়। পাশাপাশি যে সমস্ত দিনমজুররা এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠাতেন তাঁরা কাকভোরে কাজে চলে যান। নিজেরা এসে ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে যেতে পারেন না। ফলে ব্যস্ত এই জিটি রোড পেরিয়ে বাচ্চারা আসতে ভয় পায়। সেই কারণে কমে যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা। তবু চেষ্টা চালানো হচ্ছে ৷

মিড-ডে মিল কোথায় হয়?

দিনের পর দিন ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা কমতে কমতে একেবারে তলানিতে ঠেকে যাওয়ায় এই স্কুলে মিড-ডে মিল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যারা আসে তাঁরা মিড-ডে মিল খাবে কোথায়? সে কারণে স্কুল পরিদর্শক ঠিক করে দিয়েছেন পাশের স্কুলে নিয়ে গিয়ে মিড-ডে মিল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেইমতো দুর্গা বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষিকা প্রত্যেকদিন ছাত্র-ছাত্রীদের সাবধানে জিটি রোড পার করে উলটো প্রান্তে নিয়ে যান মিড-ডে মিল খাওয়াতে। যেভাবে রাস্তায় বড় গাড়ি চলাচল করছে তার মাঝখান দিয়ে রাস্তা পারাপার করা সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ। শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, কোনও উপায় নেই।

কিন্তু এভাবেই চলবে স্কুল?

দুর্গা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মতে যদি পঠনপাঠনের মান বাড়াতে পরিকাঠামো বাড়ানো যায়, যদি আরও আকর্ষণীয় করা যায় স্কুলটিকে তাহলে হয়তো ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বাড়তে পারে। এই এক কামরার স্কুলে অনেকেই আসতে চায় না। তবে একান্তই যদি না-হয় তাহলে এই স্কুলটিকে অন্য স্কুলের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হোক। তাতে এই ছাত্র-ছাত্রীরাও স্কুলের পরিবেশ ফিরে পাবে এবং তাদেরও পড়াতে ভালো লাগবে। বিষয়টি নিয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক দেবব্রত পালের কাছে যাওয়া হলে তিনি জানান, ওই বিদ্যালয়ে যাওয়া হয়েছে, বৈঠকও হয়েছে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সত্যিই কবে স্কুল ভরে উঠবে, স্কুল বাঁচবে, সেটাই এখন দেখার !

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.