আসানসোল, 13 নভেম্বর: কেউ শারীরিক ভাবে স্থূলকায়া, কারোর রঙ কালো, কারও ত্বকে শ্বেতির দাগ, কারোর বা মাথার চুল উঠে যাচ্ছে। আর এসব নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় ট্রোল শুনতে হয় মহিলাদের। অথচ এর কোনওটাই কারোর হাতে নেই। প্রকৃতির নিয়মেই এসব ঘটে। আর তাই এসব নিয়ে হতাশা নয়। প্রত্যেকের মধ্যে এমন কোনও গুণ, এমন কোনও সুন্দরতা লুকিয়ে রয়েছে, যা আর পাঁচজনের থেকে তাঁকে ব্যতিক্রমী করে তুলতে পারে। প্লাস সাইজ মিস ইন্ডিয়া (ইস্ট) ক্রাউন জিতে এমনই অনুভব করেন কৃষ্টি সরকার।
ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে কৃষ্টি বলেন, "একবছর আমার কাছে এই ক্রাউন থাকবে, এই একবছরে আমি আমার মত বহু মহিলার হতাশা দূর করতে চাই। তবে আগামী দিনেও এই কাজ আমার চলবে। যারা নিজেদের শরীর নিয়ে নানান কারণে হতাশায় ভুগছেন, তাঁদের বলতে চাই, ঈশ্বর আমাদের আর্ট পিস তৈরি করেছেন। আর কোনও খুঁত না থাকলে সেই আর্ট পিস সুন্দর হতে পারে না। ব্যতিক্রমী হতে পারে না। তাই শরীরের খুঁতকে সদর্থক ভাবে নিতে হবে। পজিটিভ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে। সুন্দরতার চাবিকাঠি শরীর নয়, প্রত্যেকের মনের ভিতরের শক্তি ও ইচ্ছেটাই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। সেটাকে কাজে লাগিয়েই সব বাধাকে জয় করতে হবে।
কৃষ্টির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জন্ম, পড়াশুনো কলকাতায় হলেও এখন শহর আসানসোলের বাসিন্দা কৃষ্টি সরকার। জন্ম থেকেই স্থুল ছিলেন কৃষ্টি। বেড়ে ওঠার সঙ্গে এই মোটা হওয়া নিয়ে তাঁকে নানান সময় ট্রোলের সম্মুখীন হতে হয়েছে। মাঝে অনেকের মত চেষ্টাও করেছিলেন রোগা হওয়ার। কিন্তু প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন তিনি। আর এই ট্রোল, হেয় করাকেই যেন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নেন কৃষ্টি।
পড়াশুনোর পাশাপাশি গান, নাচ-সহ নানান শিল্পকর্মে নিজেকে পারদর্শী করে তোলেন। এরই মাঝে খবর পান সর্বভারতীয় বিউটি কনটেস্ট ইভেন্ট গ্রুপ মাভেন, প্লাস সাইজ মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। নিজে এগিয়ে গিয়ে অংশ নেন সেই প্রতিযোগিতায় ৷ এই প্রতিযোগিতার জন্য দেশ-বিদেশ নিয়ে চারটি জোন তৈরি করা হয়েছিল। বাংলা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশাকে নিয়ে ইস্ট জোন ছিল। স্থুল যুবতীদের সুন্দরতা ও বুদ্ধিমত্তা নিয়েই এই প্রতিযোগিতা ছিল। আর সবাইকে পিছনে ফেলে প্লাস সাইজ মিস ইন্ডিয়া (ইস্ট) ক্রাউন জিতে নেন কৃষ্টি সরকার।
গত মাসের শেষ দিকে এই প্রতিযোগিতা দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়। দেশ-বিদেশের 71 জন প্লাস সাইজ মহিলা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ক্রাউন জেতার পরেই হঠাৎ করে অনেক কিছু পালটে গিয়েছে কৃষ্টির জীবনে। এখন প্রচুর অ্যাড ফিল্মের কাজ, মোটিভেশনের কাজের জন্য আরও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি ৷ মোটা হওয়ার কারণে একদিন তাঁকে ট্রোল হতে হয়েছিল, আর সেই মোটা হওয়াকেই জীবনের আনন্দ বানিয়ে তিনি সাফল্য পেলেন জীবনের চলার পথে।
আরও পড়ুন:
1. আটকে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, জল-খাবার পৌঁছে দিল প্রশাসন
2. প্রেক্ষাগৃহে ফাটল আতসবাজি! অনুরাগীদের 'গুণ্ডামি'তে আতঙ্কিত দর্শক, দেখুন ভিডিয়ো
3. দিওয়ালির আনন্দে ভাসলেন সুনাক, ডাউনিং স্ট্রিটের চা চক্রে আমন্ত্রণ জয়শঙ্করকে