কাঁকসা, 5 সেপ্টেম্বর: জঙ্গল ঘেরা কাঁকসার কুলডিহা আদিবাসী পাড়া । প্রায় কয়েকশো আদিবাসী পরিবারের বসবাস । সেখানেই রয়েছে একটি আদিবাসী স্কুল । যার নাম কুলডিহা আদিবাসী পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ৷
সরকারিভাবে এই স্কুলে সাঁওতালি ভাষায় (Santali language) পঠনপাঠন চলে। পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় 90 জন । স্কুলে অপ্রতুল শিক্ষক ৷ পড়ুয়াদের পরিবারের সকলেই দিনমজুরি কাজের উপর নির্ভরশীল । কিন্তু পরিবারের আর্থিক সংকট এতটাই যে টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট টিউশন দিতে পারেন না কেউই । আর এইসব পড়ুয়াদের টিউশনের অভাব পূরণ করেন তারাচাঁদ সোরেন, কালাচাঁদ টুডু, বুধন হেমব্রম, দালু টুডু, ধনঞ্জয় মুর্মুরা । তাই স্কুলের মধ্যেই রবিবার করে পাঠ দেন এই পাঁচজন ৷
কেউ প্রাক্তন শিক্ষক, কেউ আবার ঠিকা শ্রমিক, চাষি ও বর্তমানে শিক্ষকতা করেন ৷ তাঁরা সকলেই শিক্ষিত । পাঁচজন দীর্ঘদিন ধরে সাঁওতালি ভাষার পড়ুয়াদের নিজ উদ্যোগে পড়িয়ে আসছেন । এই পাঠশালায় লাগে না কোনও টাকা । বিনাপয়সার (Free lesson) পাঠশালার দ্বার খোলা সকল আদিবাসী পড়ুয়াদের জন্য । উৎসাহের সঙ্গে প্রতি রবিবার পাঠশালায় হাজির হন পড়ুয়ারা । শুধু রবিবারই নয়, বাড়িতেও বিনাপয়সার পাঠশালা রয়েছে এইসব 'শিক্ষক'দের । তাঁদের উদ্যোগে আশা দেখছে আদিবাসী সমাজ । এই পাঁচজন 'শিক্ষকের' লক্ষ্য আদিবাসী পড়ুয়াদের পাঠ্যদান করে সমাজে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া (Free lesson in Santali language to tribal students in Kanksa) ।
কারখানার ঠিকা কর্মী দালু টুডু বলেন, "মনের ইচ্ছা থাকতে হবে যে সমাজে কিছু করব । আমিও ভেবেছিলাম উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হব ৷ কিন্তু অভাবের তারণায় সম্ভব হয়নি।" অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তারাচাঁদ সোরেন বলেন, "আদিবাসী শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই আমাদের এই পাঠশালা ।"
আরও পড়ুন: 35 বছর ধরে সাইকেলে ঘুরে পরিবেশরক্ষায় সচেতনতার বার্তা শিক্ষকের
লোহাগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বুধন হেমব্রম বলেন, "আদিবাসী পড়ুয়াদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রথম দরকার মাতৃভাষার । স্কুলে চলে পাঠ্যদান । কিন্তু পাঠশালা না থাকলে চর্চা হবে কি করে? তাই তাদের বিনাপয়সার পাঠশালায় চলে সেই চর্চা ।" হোক সে ঠিকা কর্মী বা চাষি, বর্তমানে তাঁরাই পড়ুয়াদের কাছে 'শিক্ষক' । সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাণ্ডারী এই পাঁচ 'শিক্ষক'-এর ভূমিকায় দিশা দেখছে আদিবাসী সমাজ ।