আসানসোল, 17 জানুয়ারি : আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডিজিটাল স্কুল । প্রোজেক্টরের মাধ্যমে স্মার্ট ক্লাস । কম্পিউটার, সাউন্ড সিস্টেম বাকি নেই CCTV-ও । বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আসানসোলের জামুড়িয়ায় তৈরি হল ফ্রি প্রাইমারি স্কুল । যা আসানসোল বা জামুড়িয়ায় নয়, গোটা পশ্চিম বর্ধমানে এই প্রথম ।
নামীদামি বেসরকারি স্কুল । ঝাঁ চকচকে পঠনপাঠন । ঝড়ঝড়ে ইংরাজি । মাসের শেষে বেতনও তেমন । বাচ্চাদের এজাতীয় স্কুলে পড়ানোর শখ থাকলেও অনেকেই ফি দেখে পিছিয়ে পড়েন । আবার সরকারি প্রাথমিক স্কুলে বাচ্চাকে ভরতির কথা ভাবেন না আজকালকার অনেক বাবা-মা'ই । তাই বেসরকারি স্কুলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি প্রাথমিক এবার ডিজিটাল । জামুড়িয়ার 6 নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর সার্কেলের মণ্ডলপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার উদ্যোগে ডিজিটাল রূপ দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন স্কুলের টিচার ইন-চার্জ রাজীব রায় ।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের মতো ডিজিটাল স্কুলেও শেখানো হচ্ছে ইংরেজি । স্কুলের বাইরে ও ভেতরে দেওয়ালে ইংরেজিতে নানা ধরনের লেখা ও ছবির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে সামাজিক সচেতনতামূলক বার্তা । যাতে সহজেই ইংরেজি ভাষা রপ্ত করতে পারে বাচ্চারা । তাদের দেওয়া হচ্ছে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণও । স্কুলকে ডিজিটাল বানানোর পাশাপাশি সবুজায়নের লক্ষ্যে স্কুলের ভেতরে বসানো হয়েছে গাছ । স্কুলের ছাদে তৈরি হয়েছে ফুলের বাগান । রাজ্যের সেরা মডেল স্কুল গুলির মধ্যে এখন অন্যতম জামুড়িয়ার এই স্কুল ।
কেন এই ডিজিটাল স্কুল? কীভাবে তৈরি হল এই পরিকাঠামো ? জানালেন মণ্ডলপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ রাজীব রায়, "একটি শিশুর বিকাশের প্রয়োজন । স্কুলে আসতে কোনও ভয় থাকবে না এমন পরিবেশও প্রয়োজন । স্কুলের শিক্ষকদের একেবারে বাবা-মা অথবা বাড়ির অন্যান্য সদস্যের মতো বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে হবে । সেসব এখানে রয়েছে । অতীতে দেখেছি বইয়ের শেষ পাতায় লেখা থাকত কী করব, কী করব না । বইয়ের শেষ পাতায় থাকত বলে বাচ্চারা সাধারণত ভালোভাবে রাখতে পারত না । তাই শেষ পাতা ছিঁড়ে যেত । বাস্তব জীবনে কোনটা অনুচিত সেই বিষয়টি বুঝে উঠতে পারত না বাচ্চারা । তাই আমরা স্কুলের বিল্ডিংয়ের বাইরের ও ভেতরের দেওয়ালে Learning at (একটি সরকারি প্রকল্প)-এর মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি এঁকে সমাজ সচেতনতামূলক বার্তা দিয়ে বাচ্চাদের তা বোঝানোর চেষ্টা করেছি ।''
তাঁর কথায়, '' ইংরেজিতে অনেক কিছু লেখা আছে । যাতে ইংরেজিটাও ওরা তাড়াতাড়ি শেখে । দেওয়ালে রয়েছে উদ্বেগশূন্য, আনন্দদায়ক, শিক্ষককেন্দ্রিক পরিবেশের বার্তা । স্কুল পড়ুয়াদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের দিকে নজর রাখা হয়েছে । বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ রাখার চেষ্টা ও বিভিন্ন ধরণের ছবি এঁকে বাচ্চাদের বিভিন্ন বিষয় শেখানোর চেষ্টা করি আমরা । পরিবেশের প্রতি নিজেদের কর্তব্য কতোটা, বাচ্চাদের তা শেখাতে স্কুলের ভেতরে বাগান তৈরি করা হয়েছে । পরিবেশ কি ভাবে বাঁচানো যায় তার জন্য বিভিন্ন রকম ছবি এঁকে বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে ।''
স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মোট 182 । রয়েছেন 8 জন শিক্ষক । এই পরিকাঠামো নিয়ে ডিজিটাল স্কুল বানানোর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর রাখি কর্মকার । তিনি বলেন, ''সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজটা করতে পারেন, তাহলে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহও বাড়বে । বাবা-মায়েরাও সরকারি প্রাথমিক স্কুলে বাচ্চাদের আরও বেশি করে পাঠাবে । এই বিদ্যালয় জেলায় উদাহরণ তৈরি করল । এমন ডিজিটাল স্কুল দেখে অনুপ্রেরণা পাবে জেলার বাকি স্কুলগুলোও । আর আমি তো সঙ্গে আছিই ।''
1944 সালে প্রতিষ্ঠা হয় এই স্কুলের । ডিজিটাল হিসেবে 31 ডিসেম্বরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় । কয়লা বলয়ে এই ধরনের স্কুল প্রথম, রাজ্যেও তাই । স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এমন হলে বাচ্চারা স্কুলে যাবে । পড়তে আগ্রহী হবে পাশাপাশি কয়লাবলয়ের এমন স্কুল দৃষ্টান্ত । স্থানীয় বাসিন্দাদের মতো একই কথা বলছেন শিক্ষকরাও ।
এবিষয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিদর্শক দেবব্রত পালকে জিজ্ঞাসা করা হলে স্কুল পরিচালন কমিটিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি বলেন, খুব ভাল উদ্যোগ । ছাত্র-ছাত্রীরা কম্পিউটার প্রজেক্টরের মাধ্যমে পঠনপাঠন করতে পারছে । আমার শুভেচ্ছা রইল সকলের প্রতি । এটা স্থানীয়ভাবেই করা হয়েছে । আগামী দিনের অন্যান্য স্কুল যাতে এই পথে এগিয়ে আসে সেই চেষ্টা করা হবে ।"