চিত্তরঞ্জন, 23 অগস্ট: একদিকে আধুনিক টেকনোলজি, অন্যদিকে সুরক্ষা । নতুন বন্দে ভারতের ইঞ্জিনে থাকছে এমন বহু তাক লাগানো ফিচার । থাকছে বিমানের ব্ল্যাক বক্সের মতো আধুনিক ফিচার । পূর্ব ভারতে প্রথম বন্দে ভারত ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানায় । কারখানার আঁতুড়ঘর থেকে খোঁজ নিয়ে এল ইটিভি ভারত ।
চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা রেলমন্ত্রক থেকে বন্দে ভারত ট্রেনের ইঞ্জিন বানানোর বরাত পেয়েছে । আপাতত 4টি ইঞ্জিন বানাবে চিত্তরঞ্জন লোকোমেটিভ ওয়ার্কস । যা দিয়ে দুটি বন্দে ভারত ট্রেন চালানো হবে । কাজ চলছে ঝড়ের গতিতে । আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই ইঞ্জিনের কাজ শেষ করে চেন্নাইয়ে আইসিএফে পাঠানো হবে । সেখানে তৈরি হওয়া কোচের সঙ্গে ট্রায়াল রানে পাশ করে গেলেই চিত্তরঞ্জনের তৈরি বন্দে ভারত ছুটবে ভারতের বিভিন্ন স্থানে । নিজেদের কাজ নিয়ে একশো শতাংশ বিশ্বাসী চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা কর্তৃপক্ষ । আসবেই সাফল্য ।
এই ধরনের ইঞ্জিন চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানায় প্রথমবার প্রস্তুত হচ্ছে । ইতিমধ্যেই ডিজাইন তৈরি করে ইঞ্জিনের চেসিস বা ফ্রেম তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে । চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার জেনারেল ম্যানেজার দেবীপ্রসাদ দাস জানিয়েছেন,
"আগে ডব্লিউএপি 5 লোকো ইঞ্জিন ছিল । তাকেই নতুন রূপ দেওয়া হচ্ছে । অ্যারো ডায়নামিক ইঞ্জিন । আগে সেই ফেস ছিল 20 ডিগ্রি, এখন তা করা হল 45 ডিগ্রি । ফলে ইঞ্জিনে হাওয়ার বাধা অনেকটাই কম আসবে । ইঞ্জিনের গতি ও শক্তি আরও বাড়বে । এছাড়াও কাঁচ অনেক বড় রাখা হচ্ছে নতুন ডিজাইনে । যাতে চালক বেশি এবং পরিষ্কার ভাবে সবকিছু দেখতে পান ।"
24টি যাত্রীবাহী বগি টানবে এই নতুন বন্দে ভারতের ইঞ্জিন । প্রতি ট্রেনে সামনে ও পিছনে দুটি ক'রে বগি থাকবে । অর্থ্যাৎ পুশ ও পুল সিস্টেমে ট্রেন চলবে । শুধু তাই নয়, একজন পাইলটই সামনে ও পিছনের ইঞ্জিনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, এমন টেকনোলজি লাগানো হচ্ছে । এমনটাই জানিয়েছেন, কারখানার জেনারেল ম্যানেজার দেবীপ্রসাদ দাস ।
শুধু তাই নয়, এই ট্রেনে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে লাগানো হচ্ছে ডিস্ক ব্রেক । থাকছে সুরক্ষা কবচও । একই ট্র্যাকে অন্য ট্রেন চলে আসা বা অন্যান্য যে কোনও বিপদে সুরক্ষাকবচ সিগন্যাল দেবে চালককে । যদি চালক কোনও কারণ বশত এড়িয়ে যান বা গাফিলতি করেন, ট্রেন নিজেই ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে যাবে ।
আরও পড়ুন: বন্দে ভারতে যান্ত্রিক গোলোযোগ, দু‘ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হল ট্রেন
মান্ধাতার আমলের সবুজ, লাল পতাকা বা আলো দেখানোর কনসেপ্টও পালটে দেওয়া হচ্ছে বন্দে ভারতের ইঞ্জিনে । চালকের ডেস্কেই ফুটে উঠবে লাল, সবুজ সিগন্যাল । শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চালকের কেবিনে নানা সুবিধে থাকছে । যদিও এখনই শৌচাগার থাকছে না ।
তবে নতুন বন্দে ভারতে থাকছে বিমানের ব্ল্যাক বক্সের মতো টেকনোলজি । যাকে বলা হচ্ছে সিসিআর ভিসি । এই প্রযুক্তিতে লোকো পাইলটের সমস্ত গতিবিধি ধরা থাকবে । ভিডিয়ো এবং সাউন্ড রেকর্ডে সবই ধরা থাকবে । এমনকী গার্ডের সঙ্গে কী কথা বলছেন তাও । ট্রেন যদি দুর্ঘটনার শিকার হয়, কী কারণে ঘটেছিল দুর্ঘটনা, তা সহজ তদন্তেই বেরিয়ে আসবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ।
চেন্নাইয়ের আইসিএফ (ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি) থেকে জেনারেল ম্যানেজার হয়ে চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানায় সম্প্রতি এসেছেন দেবীপ্রসাদ দাস । কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা নেপাল চক্রবর্তী জানালেন,
"আমরা যখন জানতে পারি দেবীপ্রসাদবাবু আইসিএফ থেকে এসেছেন, তখন তাঁর কাছে গিয়ে অনুরোধ করি, চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানাতে আমরাও বন্দে ভারতের ইঞ্জিন তৈরি করতে পারি । এরপর আমাদের কথা শুনে তিনি রেলবোর্ডকে জানান এবং গত জুন মাসে তিনি জানানোর পর প্রথমে আমরা চারটি রেল ইঞ্জিন বানানোর বরাত পেয়েছি ৷ আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই এই ইঞ্জিনগুলিতে আইসিএফ-এর উদ্দেশ্যে পাঠানো হবে।"
আইসিএফ-এ বন্দে ভারতের কোচ তৈরি হচ্ছে এবং সেই কোচের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নানা রকম রং করা হবে নতুন বন্দে ভারত ইঞ্জিনের । বন্দে ভারত তৈরি হচ্ছে বাংলায়, এটা শুধু চিত্তরঞ্জন নয় গোটা পশ্চিমবঙ্গবাসীর গর্ব ।