দুর্গাপুর, 24 এপ্রিল: দুর্গাপুরের কুড়ুরিয়া ডাঙার মিলন পল্লির বাসিন্দা শ্যামাপদ শর্মা । পেশায় ঘুগনি বিক্রেতা তিনি । সামান্য এক ঘুগনি বিক্রেতা হলেও তাঁর ইচ্ছে শক্তি অনেক বেশি ৷ তাই ওই সামান্য আয় থেকে টাকা বাঁচিয়ে সাইকেল নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন বার্তা দিতে ৷ কখনও পোলিও মুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ৷ আবার কখনও গাছ লাগানোর বার্তা দিতে সাইকেল নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যান শ্যামাপদ । সমাজকে বাঁচানোর উদ্দেশে মানুষকে জাগ্রত করাই তাঁর লক্ষ্য। ফের আরও একবার সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি ৷ এবারের বার্তা বিশ্ব শান্তির । যাত্রাপথ দুর্গাপুর থেকে কন্যাকুমারী । প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার পথ সাইকেলে চড়ে বিশ্ব শান্তির বার্তা পৌঁছবেন তিনি ।
রাজ্য এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমশ বেড়ে চলেছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মত ঘটনা । এই সব থেকে সমাজকে মুক্তি দিতে এলাকায় এলাকায় মানুষকে জাগ্রত করবেন শ্যামাপদ শর্মা । বার্তা দেবেন দাঙ্গা বা হিংসা থেকে বিরত থাকার । নতুনভাবে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ারও বার্তা দেবেন তিনি । রবিবার অক্ষয় তৃতীয়ার শুভলগ্নে শ্যামাপদ যাত্রা শুরু করলেন দুর্গাপুরের কুড়ুরিয়ার মিলন পল্লী থেকে । ঘুগনি বিক্রি করে যেটুকু আয় হয় সেখান থেকে পরিবারকে সামান্য কিছু দেন তিনি ৷ আর বাকি টাকায় সমাজকে জাগ্রত করতে কাজে লাগাচ্ছেন এই ঘুগনি বিক্রেতা । পাশে দাঁড়িয়েছে এলাকার সমাজসেবী মানুষজন ও তাঁর পরিবার ।
দুর্গাপুর থেকে কন্যাকুমারী পাড়ি দিতে তাঁর সময় লাগবে প্রায় দেড় মাস । এই সময়ের মধ্যে মানুষকে অনেকটাই সচেতন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী শ্যামাপদ । তাঁর এই কাজে পথ যুগিয়েছেন স্ত্রী অসীমা শর্মা । তিনি স্বামীর পাশে দাঁড়াতে চান প্রত্যেক মুহূর্তে । দুর্গাপুরের ঘুগনি বিক্রেতার এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাচ্ছে শিল্পাঞ্চলবাসী । শ্যামাপদ শর্মা ইটিভি ভারতকে বলেন, "আমি ঘুগনি বিক্রি করে সামান্য যা আয় করি তার 25 শতাংশ অর্থ সংসার খরচ হিসাবে ব্যয় করি । বাকি 75 শতাংশ অর্থ ব্যয় করি সাইকেল নিয়ে বিভিন্ন বার্তা দিতে ৷" তিনি জানান, একাধিকবার বহু প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও পড়েছেন । পুলওয়ামাতে শহিদ সেনাদের উদ্দেশ্য শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়েছিলেন ।
তা সত্ত্বেও তিনি থেমে থাকেননি ৷ সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে গিয়েছেন ৷ তবে শ্যামাপদর একটি আপসোস রয়েছে ৷ পরিবারকে পাশে পেলেও তাঁর এই কাজে সাহায্যের জন্য প্রশাসনিক স্তরে বহুবার আবেদন জানিয়েছেন তিনি ৷ কিন্তু কোনও সাহায্য পাননি । স্ত্রী অসীমা শর্মা বলেন, "বয়স বাড়ছে স্বামীর ৷ মাঝেমধ্যে চিন্তা হয় । তবে আমি জানি তিনি তাঁর মাকে ভীষণ ভালোবাসতেন । মায়ের আশীর্বাদ তাঁকে সমস্ত বিপদ থেকে মুক্ত করবে । তাঁর এই কাজে আমি কোনওদিন বাধা দিইনি । তিনি আরও এগিয়ে যাক ৷ তাঁর গর্বে আমরা গর্বিত ।"
আরও পড়ুন: পথকুকুরদের বাঁচানোর বার্তা নিয়ে দুর্গাপুর থেকে ভুবনেশ্বর দাদা-বোনের সাইকেল যাত্রা