দুর্গাপুর, 21 মার্চ: একসময় দুর্গাপুরের লাউদোহা ব্লকের কয়েকটি গ্রাম-কৈলাশপুর, মাধাইগঞ্জ, আমদহি অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় ত্রাস হয়ে উঠেছিল। এই সমস্ত গ্রামে বেআইনি কয়লা কারবার নিয়ে বারুদের গন্ধ আর অস্ত্রের ঝনঝনানি লেগেই থাকত। কুখ্যাত কয়লা মাফিয়া শেখ সেলিম ওরফে দাদুর হাত ধরে কালো কারবার শুরু হয়। ধীরে ধীরে তৎকালীন বাম আমলে শেখ সেলিমের অলিখিত রাজত্ব শুরু হয় গোটা লাউদোহা ব্লকজুড়ে। তার হাত ধরেই উত্থান হয় শেখ আমিন, শেখ শাহজাহান-সহ আরও বেশ কয়েকজন কুখ্যাত কয়লা মাফিয়ার ।
কিন্তু হঠাৎ করে চিত্রপট বদলে যায় । দুই সিপিআইএম নেতা ফারুক শেখ এবং সুধীর বাউড়ি নৃশংসভাবে খুন হন। আর সেই খুনের দায় চাপে শেখ সেলিমের ঘাড়ে। এরপরেই সেলিম এলাকা ছাড়া হয়ে যায়। সেই সময় বেআইনি কয়লার কারবার শেখ আমিন ও শেখ শাহজাহানের দলবলের হাতে চলে যায়। সেলিমের আত্মীয়রা একের পর এক খুন হতে থাকে। কৈলাসপুর গ্রামে শেখ সেলিমের ঘরবাড়ির জিনিসপত্র লুটপাট করে তার বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়। অভিযোগ ওঠে শেখ আমিন ও শেখ শাহজাহান ও তাদের দলবলের বিরুদ্ধে ।
কয়েকবছর পর সেলিম ফিরতেই তাকে গুলি করে খুন করা হয়। এই অভিযোগে আমিন ও শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হয় । পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু এরপর শুরু হয় শেখ আমিন বনাম শেখ শাহজাহানের লড়াই । 2016 সালে পবিত্র ঈদের দিনে নমাজ পড়ে বেরোনোর সময় কৈলাশপুর গ্রামে আমিনকে গুলি করে খুন করে শেখ শাজাহান ও তার দলবল বলে অভিযোগ । শেখ আমিন হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান-সহ মোট আটজন গ্রেফতার হয় । দীর্ঘ সাত বছর বিচার চলতে থাকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে । ওই আটজনকে মঙ্গলবার পুনরায় তোলা হয় দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে। তারা হল শেখ শাহজাহান, শেখ সানিউল ওরফে সানাই, শেখ শাকিবুল, শেখ কাশেম, শেখ নুরুল হোদা, শেখ জাহাঙ্গীর, শেখ জনিয়ুল এবং বাবর আলি ।
ওইদিনই এই আটজনের সাজা ঘোষণা হবে বলে সূত্রের জানা গিয়েছে (Coal Mafias to get sentence for murder case) । একসময় অবিভক্ত বর্ধমান জেলার ত্রাস হয়ে উঠেছিল লাউদোহা ব্লকের কৈলাশপুর, মাধাইগঞ্জ, আমদহি গ্রামগুলি । এই সমস্ত কয়লা মাফিরা ও তাদের সাগরেদদের ঘরে পাওয়া গিয়েছিল প্রচুর বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র । এই এলাকাগুলি কার্যত সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছিল ।
শুধুমাত্র কয়লার কালো কারবারকে কেন্দ্র করে এলাকায় প্রায় প্রতিদিন বোমা বারুদের গন্ধে ঘুম ভাঙত বাসিন্দাদের। এক এক করে কুখ্যাত কয়লা মাফিয়ারা খুন হতে থাকার পর এবার জাহান ও তার দলবলের সাজা ঘোষণা হবে মঙ্গলবার । 2016 সালের পর থেকে শান্তি ফিরেছে ওই এলাকাগুলিতে । এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ীরা সবাই চাইছেন, আর যাতে না-ছাড়া পায় শেখ শাহজাহানরা । কারণ তাহলেই এলাকাগুলি আবার অশান্ত হয়ে উঠবে ।
আরও পড়ুন: পুরুলিয়ায় রমরমিয়ে চলছে অবৈধ পাথর খাদান, নির্বিকার প্রশাসন