আসানসোল, 21 এপ্রিল : স্থাপত্যে অভিনব শৈলী, রেল হেরিটেজে জায়গা করে নিয়েছে 140 বছরের পুরনো ইস্টার্ন রেলওয়ে হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল ৷ আসানসোল শিল্পাঞ্চলের এই প্রথম বাংলা বিদ্যালয় শীঘ্রই বন্ধ হয়ে যেতে পারে (Asansol School Closure) । এমন সম্ভাবনার কথা তৈরি হতেই শহর জুড়ে ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য । সার্ধ শতবর্ষের প্রাক্কালে এই স্কুলে নতুন ভাবে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি না নেওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে । শুধু এই স্কুল নয়, আসানসোল রেল ডিভিশনে যতগুলি স্কুল আছে সব স্কুলেরই ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের জানানো হয়েছে অন্য প্রাইভেট স্কুলে ভর্তির বিষয়ে তদারকি করবে রেল । কিন্তু কেন ? তবে কি ছুটির ঘণ্টা বাজতে চলেছে রেলের এই স্কুলগুলোয় ?
ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, আসানসোল ডুরান্ডের লোকো ট্যাংকের কাছে খ্রিষ্টান মিশনারীদের অনুসরণ করে 1882 খ্রিষ্টাব্দে শতাব্দী প্রাচীন অধুনা এই ইস্টার্ন রেলওয়ে হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের সূচনা হয় ৷ কিছু উদ্যোগী রেলকর্মীদের প্রচেষ্টায় মাতৃভাষার মাধ্যমে রেলকর্মচারীদের সন্তানদের পঠন-পাঠনের উদ্দেশ্য এই স্কুল গড়ে ওঠে ৷ ডুরান্ড কলোনি থেকে পরে এই স্কুলটি সরে আসে বড় বাজারের সামনে ৷ পরবর্তী কালে 1898 -এ বড় পোস্ট অফিসেরই পাশে গড়ে ওঠে এই স্কুল গৃহ ৷
আরও পড়ুন : আসানসোলে রেলের স্কুল বন্ধের নোটিশ, পথ অবরোধ অভিভাবকদের
এছাড়াও কিছু দূরেই আসানসোলে আরও একটি স্কুল রয়েছে গোধূলি মোড় সংলগ্ন এলাকায় । বাজার এলাকায় যে স্কুল সেটি হেরিটেজ তকমা পেয়েছে । নির্মাণেও রয়েছে অভিনবত্ব ।বাইরে থেকে যেটি একতলা দেখা যায়, স্কুলের ভিতরে ঢুকলে বোঝা যায় সেটি আসলে দোতলা বাড়ি। অর্থ্যাৎ ভূপৃষ্ঠ থেকে নিচে রয়েছে আরও একতলা । যেটি ব্রিটিশ আমলের নির্মাণ । গোটা স্কুলময় আর্চ ডিজাইন, উঁচু কড়িবর্গার ছাদ । অভিজাত নির্মাণের ছাপ সর্বত্র ।
সাহিত্যিক অধ্যাপক আশুতোষ ভট্টাচার্য (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একদা প্রধান) এই স্কুলেরই শিক্ষক ছিলেন ৷ জনপ্রিয় সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যাল, বিমল কর, জাস্টিস মনোজ মুখোপাধ্যায় এই স্কুলেরই কৃতী প্রাক্তনী ৷ বিগত কয়েকবছর হল দুটি স্কুলই কো-এডুকেশন স্কুলে পরিণত হয়েছে ৷ দুটি স্কুল মিলে প্রায় 1600 ছাত্রছাত্রী রয়েছে । স্কুলে নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি না নেওয়ার নোটিশ কিংবা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের বেসরকারি স্কুলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব অভিভাবকদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে । এই বিষয়ে ইস্টার্ন রেলওয়ে হায়ার সেকেন্ডারি দ্বিতীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক টিকে রক্ষিত বলেন, "সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার । রেল বোর্ড যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই মেনে নিতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে ।" কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন এই স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে তা আসানসোলের পক্ষে প্রভূত ক্ষতি ।
আরও পড়ুন : আসানসোলে চাঁদিফাটা গরমে স্বস্তি দিচ্ছে আম পোড়ার শরবত
রেলের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তৃণমূল শিক্ষা সেলের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র । অশোকবাবু জানিয়েছেন, আসানসোলের গর্ব এই স্কুল। এই স্কুল তারা কোনও মতেই বন্ধ হতে দেবেন না । পাশাপাশি আসানসোলের সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা জানিয়েছেন, স্কুল নিয়ে কোনও রকমের মনমর্জি মাফিক সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না । তিনি শপথ নেওয়ার পর এই আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন তিনি ।
আগামী দিনে কী হবে, কেউ জানে না ৷ দুশ্চিন্তার মেঘ ঘনিয়েছে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের মনে । তবে অভিভাবকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, স্কুল তাঁরা বন্ধ হতে দেবেন না । পড়ুয়াদের স্বার্থে প্রয়োজনে আন্দোলনের শেষ সীমা পর্যন্ত যেতে রাজি তাঁরা ।