আসানসোল, 7 সেপ্টেম্বর: গত বছর যেদিন ঝুলন উৎসবের সমাপন ছিল তারপরের দিনই ছিল রাখি পূর্ণিমা। আর ঠিক রাখি পূর্ণিমার সেই প্রাক মুহূর্তেই গ্রেফাতর হন অনুব্রত মণ্ডল। এরপর দীর্ঘদিন সিবিআই হেফাজত, সংশোধনাগারে কেটেছে তাঁর। পরবর্তীকালে ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তাকে গ্রেফতার করে এবং গত দোল পূর্ণিমার দিন নানা টালবাহনার পর কেষ্টকে নিয়ে দিল্লিতে রওনা দেয় পুলিশ।
বর্তমানে দিল্লিতে তিহার জেলে রয়েছেন কেষ্ট। আর কাকতালীয়ভাবে জন্মাষ্টমীর দিন অনুব্রত মণ্ডলের গরু পাচার সংক্রান্ত সব মামলা দিল্লিতে চলে গেল। এ রাজ্যে ফেরার আশা ক্ষীণ। বিষয়টি কাকতালীয় হলেও কেষ্ট তথা অনুব্রত মণ্ডলের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের মোড় ঘুরেছে শ্রীকৃষ্ণ কেন্দ্রিক বিভিন্ন উৎসবের সময়। সেটাই আশ্চর্যের। গত বছর 11 অগস্ট বীরভূম থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করা সিবিআই। সেই দিনই তাকে আসানসোল সিবিআই আদালতে তোলা হয়েছিল।
ঘটনাচক্রে সেই সময় ঝুলন উৎসব চলছিল। 11 অগস্ট ছিল ঝুলনের সমাপন পর্ব। পরের দিন অর্থাৎ 12 অগস্ট ছিল রাখি পূর্ণিমা। অনুব্রত মণ্ডল তখন সিবিআইয়ের হেফাজতে কলকাতায়। পরবর্তীকালে আরও একবার সিবিআই হেফাজতে গিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল এবং তারপর থেকে তার ঠাঁই হয়েছিল আসানসোল সংশোধনাগারে। মাঝে একটি মামলায় বীরভূমের দুবরাজপুরে পুলিশ হেফাজতে গিয়েছিলেন অনুব্রত। বাকি সেই অগস্ট মাস থেকে আসানসোল সংশোধনাগারে কেটেছে তাঁর।
কখনও কৌশিকী অমাবস্যায় নিরামিষ খেয়েছেন। কখনও আবার বজরংবলীর পুজো করেছেন। কিন্তু কোনও মিরাকল তাঁর জীবনে ঘটেনি। বরং তাঁকে দোল পূর্ণিমার দিন অর্থাৎ 7 মার্চ ইডি হেফাজতে নেওয়ার উদ্দেশ্যে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে ইডির হেফাজতে বেশ কয়েকদিন এবং তারপর বর্তমানে তিহার জেলে রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। একই জেলে রয়েছেন তাঁর দেহরক্ষী সায়গল হোসেন, অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল, গরু পাচার মামলার মূল চক্রী এনামূল হক-সহ অন্যান্যরা।
গরু পাচার মামলায় গতি তরান্বিত করতে ইডির পক্ষ থেকে মামলাটিকে আসানসোল সিবিআই কোর্ট থেকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। দু'বার শুনানিতে বিচারক প্রথমে কনভিন্স ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত জন্মাষ্টমীর দিন অর্থাৎ বুধবার কেষ্ট মণ্ডলের গরু পাচার সংক্রান্ত মামলা দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়ে গেল। আগামিদিনে উচ্চ আদালতে যাবে অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবীরা কিন্তু তাতেও বিশেষ কিছু লাভ হবে বলে মনে করছে না সরকারি আইনজীবীরা।
ফলে আপাতত এ রাজ্যে ফেরার আশা তার ক্ষীণ। একসময় বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা কেষ্ট মণ্ডলের নামে গোটা জেলা কাঁপত অথচ কী আশ্চর্য কেষ্ট তার নাম হলেও কৃষ্ণের যাবতীয় উৎসবেই কাকতালীয়ভাবে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরেছে। কখনও গ্রেফতার, কখনও দিল্লিতে যাত্রা, আবার কখনও পুরো মামলাটাই দিল্লি চলে গেল। আগামিদিনে কী হয়, সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্যের মানুষ।
আরও পড়ুন: জেলে থেকে একবছরে শুকিয়ে কাঠ স্থুলকায় কেষ্ট