দুর্গাপুর, 4 এপ্রিল : লকডাউনের জেরে কাজে যেতে পারছে না বাবা । তাই দু'বেলা খাওয়ার জোটাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে । শেষমেশ সংসারের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছে বছর এগারোর আমন । রাস্তায় রাস্তায় মাস্ক বিলি পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে সে । কিন্তু নিজের মুখে নেই মাস্ক । জিজ্ঞেস করলে, শিশুসুলভ উত্তর, "এই তো পরছি"। পুরো বিষয়টি কোথাও যেন আবার সমাজের নিচু তলার মানুষের উপর লকডাউনের ভয়াবহ ছবিকে আরও স্পষ্ট করে তুলল ।
একে কোরোনা থাবায় জর্জরিত দেশ । তারউপর লকডাউন । আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সমাজের দিন আনা দিন খাওয়া মানুষরা । লকডাউনের জেরে তাদের আর কাজে যাওয়া হচ্ছে না । আর এই সামগ্রিক পরিস্থিতির একটুকরো ছবি ধরা পড়ল দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারে । বাবা দিনমজুর । এখন আর কাজে বেরতে পারছেনা না । এই অবস্থায় দুবেলা খাবার জোগানো খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে । এদিকে স্কুলও ছুটি রয়েছে । তাই পরিবারে অর্থ জোগাতে পথে নেমেছে ক্লাস ফাইভের আমন গুপ্তা । দুর্গাপুরের জলখাবার গলির বস্তিতে থাকে আমন । এখন মাস্ক নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় বিলি করে বেড়ায় সে । আজ বেনাচিতি বাজারে মাস্ক বিলি করছে আমন । সে জানে ভাইরাসে থেকে বাঁচতে এখন সবাই মাস্ক পরছে । দাম দিয়েও কিনছে । কিন্তু তার নিজের মুখে মাস্ক নেই । সে জানে একটা মাস্ক নিজে পরলেই 30 টাকা ক্ষতি । তাহলে সচেতনতা ? আমনকে জিজ্ঞেস করলে শিশুসুলভ উত্তর, "আজ থেকে পরব। স্কুল এখন ছুটি তো । তাই বাবা এই মাস্কগুলো এনে দিলেন । বিক্রি করতে এলাম । তবে, খুব একটা ভালো বিক্রি হচ্ছে না । বাজারে ঘুরছি।"
এই দেশে গরিবদের অবস্থাটা আপাতত এরকমই । দিন আনা দিন খাওয়া কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, "বাড়ি থেকে না বেরলে ,না খেতে পেয়ে মরবো। আর বাড়ি থেকে বেরলে কোরোনা সংক্রমণে মরবো। অর্থাৎ আমরাই মরব।"
হাতে গুটিকতক মাস্ক নিয়ে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায় ছেলেটি । কিন্তু অনেক প্রশ্ন রেখে যায় । প্রশ্ন, বর্তমান পরিস্থিতির । প্রশ্ন লকডাউনের জেরে ক্ষতিগ্রস্থ দিন খাওয়া দিন মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন নিয়ে । প্রশ্ন এই কোরোনা যুদ্ধ পেরিয়ে আবার স্বাভাবিক দিনের নিশ্চয়তা নিয়ে ।