ETV Bharat / state

জীবনযুদ্ধে দান নয়, চাকরি চান ৩ দৃষ্টিহীন - Corona Virus

দীর্ঘ লকডাউনের জেরে বিপাকে পড়েছে দুর্গাপুরের গণেশ, পূজা ও পিঙ্কি ৷ দীর্ঘ লকডাউনের সময় কালে যন্ত্রণাময় জীবনের দুর্লভ এক অভিজ্ঞতা ওদের জীবনবোধকে পালটে দিয়েছে । আজকে ওরা তাই আর দয়ার দানের কথা ভাবে না । ওরা চাইছে একটা চাকরি ৷

Blind students facing problem due to lockdown effect
জন্মান্ধ তিন মেধাবী পড়ুয়া ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার কিনারায় দাঁড়িয়ে
author img

By

Published : Jun 16, 2020, 8:06 AM IST

দুর্গাপুর, 16 জুন : ঘরের সমস্ত জিনিস হিসেব করে রাখা৷ কত পা হাঁটলে কোথায় কোন জিনিসটা মনে রাখতে হয় ৷ মাথায় রাখতে হয় কত দূর হাত বাড়ালে কোন জিনিসের নাগাল পাওয়া যাবে ৷ স্পর্শ দিয়ে পড়াশোনা । এভাবেই প্রতিবন্ধকতার সাথে, দারিদ্রতার সাথে, সুস্থ মানুষের সাথে টেক্কা দিয়ে প্রতিযোগিতায় লড়ছেন জন্মান্ধ গণেশ, পূজা ও পিঙ্কি ৷

গণেশ কলেজ পাশ, পূজা ও পিঙ্কি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ৷ কোরোনা মোকাবিলায় দেশজুড়ে যখন লকডাউন তখন ওদের লড়াইও বেড়ে গিয়েছে দ্বিগুণ ৷ এই কঠিন সময়ে সাহায্যের হাতগুলোও সরে গিয়েছে দূরে ৷ তবুও ওরা ভেঙে পড়েনি ৷ "আমরা করব জয়, নিশ্চয়" গানটিকে জীবনের মূলমন্ত্র করে ওরা এগিয়ে চলেছে স্বাবলম্বীর পথে ৷ ওদের এখন একটাই আবেদন, একটা চাকরি ৷

দুর্গাপুরের 11 নম্বর ওয়ার্ডের কুড়ুরিয়া ডাঙার বাসিন্দা গণেশ বাউরি । জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন । প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করতে করতে গণেশ আজ স্নাতক হয়েছেন । কিন্তু এখানেই শেষ করেননি নিজের পড়াশোনা । চান আরও পড়তে । তিনি চান, তাঁর মতো জন্মান্ধ ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখুক ৷ সেই প্রচেষ্টাতেই গণেশ নিজের উদ্যোগে নিয়ে আসে বীরভূম জেলার রামপুরহাটের বাসিন্দা পিঙ্কি খাতুন এবং পূর্ব বর্ধমানের বলগোনার বাসিন্দা পূজা দাসকে । তাঁদের নিজের প্রচেষ্টাতে গণেশ ইতিহাসে অনার্স পড়ার জন্য দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে ভরতি করেন ।

কিন্তু এই তিনজন দৃষ্টিহীন থাকবেন কোথায় ? ঠিক সেই সময় দুর্গাপুর নগর নিগমের 12 নম্বর ওয়ার্ডে শংকরানন্দ ব্রহ্মচারী আনন্দ আশ্রমে এই তিনজন মাথা গোঁজার ঠাঁই পান । কিন্তু তিনজনকে বলে দেওয়া হয় তাঁদের থাকার জন্য কোনওরকম খরচ না লাগলেও তাঁদের খাওয়া দাওয়া নিজেদেরই দেখতে হবে । সেই মতই এই তিনজন আজ থেকে চার বছর আগে এই আশ্রম এসে বসবাস শুরু করেন । অনেক শুভানুধ্যায়ী মানুষ জানতে পারার পর তাঁদের মাঝেমধ্যে সাহায্য করেন । আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া পরিবারের এই তিন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী কঠিন সংগ্রাম করে নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন ।

দুর্গাপুরের বাসিন্দা গণেশ বাউরির বাবা কার্তিক বাউরি ৷ বর্তমানে তাঁর বয়স 70 বছর । এখনও তিনি রিকশা চালান । মা গয়া বাউরি বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন । অভাবের সংসারে বড় হওয়া গণেশ আজ স্নাতক । পূজা দাস বলগোনার বাসিন্দা ৷ পূজার বাবা সুভাষ দাস একটি চায়ের দোকান চালান ৷ মা মিতা দাস সাধারণ গৃহবধু । পূজার বাড়িতেও আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই । সংগ্রাম করতে থাকা পূজা দুর্গাপুর মহাবিদ্যালয়ে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী । বীরভূম জেলার রামপুরহাটের বাসিন্দা পিঙ্কি খাতুনের বাবা শেখ নুরবক্স একটি স্কুলের কর্মী ৷ মা শাকিলা বিবি সাধারণ গৃহবধু । পিঙ্কিও ইতিহাসে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করছে ।

এরা নিজেরাই এই আশ্রমে শুকনো কাঠ, পাতা দিয়ে আগুন ধরান । নিজেরাই শাকসবজি কাটেন ৷ রান্না করেন । নিজেরা জামাকাপড় পরিষ্কার করেন । পড়াশোনা করেন । ওদের লক্ষ্য একটাই । নিজের পায়ে দাঁড়ানো । ওদের বুকে জ্বলছে খিদের আগুন । প্রতিদিন প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আগুন । প্রতিদিন স্বপ্ন দেখেন ওরা তিনজন ।

এতদিন পর্যন্ত বহু মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল । হঠাৎ দীর্ঘ লকডাউন । আর তাতেই তাঁরা বিপাকে পড়েছেন । যাঁরা খাদ্য সামগ্রীসহ বহু কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী এতদিন পর্যন্ত ওঁদের দিয়ে যেতেন । আজ সেই সাহায্যের হাতগুলো তাঁদের কাছ থেকে অনেকটাই দূরে চলে গেছে ।

এই কঠিন পরিস্থিতিতে গণেশদের একটাই আবেদন, "চাকরি । একটা চাকরি যদি আমরা পাই, তাহলে আমরা প্রমাণ করে দেব সুস্থ ছেলে মেয়েদের থেকে আমরা কিন্তু কম নয় । আমরাও সব পারি । আমরা সব কাজ করতে পারব ।"

দীর্ঘ লকডাউনের সময় কালে যন্ত্রণাময় জীবনের দুর্লভ এক অভিজ্ঞতা ওঁদের জীবনবোধকে পালটে দিয়েছে । আজকে ওঁরা তাই আর দানের কথা ভাবেন না । ওঁরা চাইছেন একটা চাকরি করে সংসারে সচ্ছলতা নিয়ে আসা । বয়স্ক মা-বাবা ,পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটানো। আর এই লক্ষ্যেই ওঁরা অবিচল । তাই ওরা দৃপ্ত কণ্ঠে গেয়ে উঠে "আমরা করব জয়, নিশ্চয়" ৷

দুর্গাপুর, 16 জুন : ঘরের সমস্ত জিনিস হিসেব করে রাখা৷ কত পা হাঁটলে কোথায় কোন জিনিসটা মনে রাখতে হয় ৷ মাথায় রাখতে হয় কত দূর হাত বাড়ালে কোন জিনিসের নাগাল পাওয়া যাবে ৷ স্পর্শ দিয়ে পড়াশোনা । এভাবেই প্রতিবন্ধকতার সাথে, দারিদ্রতার সাথে, সুস্থ মানুষের সাথে টেক্কা দিয়ে প্রতিযোগিতায় লড়ছেন জন্মান্ধ গণেশ, পূজা ও পিঙ্কি ৷

গণেশ কলেজ পাশ, পূজা ও পিঙ্কি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ৷ কোরোনা মোকাবিলায় দেশজুড়ে যখন লকডাউন তখন ওদের লড়াইও বেড়ে গিয়েছে দ্বিগুণ ৷ এই কঠিন সময়ে সাহায্যের হাতগুলোও সরে গিয়েছে দূরে ৷ তবুও ওরা ভেঙে পড়েনি ৷ "আমরা করব জয়, নিশ্চয়" গানটিকে জীবনের মূলমন্ত্র করে ওরা এগিয়ে চলেছে স্বাবলম্বীর পথে ৷ ওদের এখন একটাই আবেদন, একটা চাকরি ৷

দুর্গাপুরের 11 নম্বর ওয়ার্ডের কুড়ুরিয়া ডাঙার বাসিন্দা গণেশ বাউরি । জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন । প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করতে করতে গণেশ আজ স্নাতক হয়েছেন । কিন্তু এখানেই শেষ করেননি নিজের পড়াশোনা । চান আরও পড়তে । তিনি চান, তাঁর মতো জন্মান্ধ ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখুক ৷ সেই প্রচেষ্টাতেই গণেশ নিজের উদ্যোগে নিয়ে আসে বীরভূম জেলার রামপুরহাটের বাসিন্দা পিঙ্কি খাতুন এবং পূর্ব বর্ধমানের বলগোনার বাসিন্দা পূজা দাসকে । তাঁদের নিজের প্রচেষ্টাতে গণেশ ইতিহাসে অনার্স পড়ার জন্য দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে ভরতি করেন ।

কিন্তু এই তিনজন দৃষ্টিহীন থাকবেন কোথায় ? ঠিক সেই সময় দুর্গাপুর নগর নিগমের 12 নম্বর ওয়ার্ডে শংকরানন্দ ব্রহ্মচারী আনন্দ আশ্রমে এই তিনজন মাথা গোঁজার ঠাঁই পান । কিন্তু তিনজনকে বলে দেওয়া হয় তাঁদের থাকার জন্য কোনওরকম খরচ না লাগলেও তাঁদের খাওয়া দাওয়া নিজেদেরই দেখতে হবে । সেই মতই এই তিনজন আজ থেকে চার বছর আগে এই আশ্রম এসে বসবাস শুরু করেন । অনেক শুভানুধ্যায়ী মানুষ জানতে পারার পর তাঁদের মাঝেমধ্যে সাহায্য করেন । আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া পরিবারের এই তিন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী কঠিন সংগ্রাম করে নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন ।

দুর্গাপুরের বাসিন্দা গণেশ বাউরির বাবা কার্তিক বাউরি ৷ বর্তমানে তাঁর বয়স 70 বছর । এখনও তিনি রিকশা চালান । মা গয়া বাউরি বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন । অভাবের সংসারে বড় হওয়া গণেশ আজ স্নাতক । পূজা দাস বলগোনার বাসিন্দা ৷ পূজার বাবা সুভাষ দাস একটি চায়ের দোকান চালান ৷ মা মিতা দাস সাধারণ গৃহবধু । পূজার বাড়িতেও আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই । সংগ্রাম করতে থাকা পূজা দুর্গাপুর মহাবিদ্যালয়ে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী । বীরভূম জেলার রামপুরহাটের বাসিন্দা পিঙ্কি খাতুনের বাবা শেখ নুরবক্স একটি স্কুলের কর্মী ৷ মা শাকিলা বিবি সাধারণ গৃহবধু । পিঙ্কিও ইতিহাসে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করছে ।

এরা নিজেরাই এই আশ্রমে শুকনো কাঠ, পাতা দিয়ে আগুন ধরান । নিজেরাই শাকসবজি কাটেন ৷ রান্না করেন । নিজেরা জামাকাপড় পরিষ্কার করেন । পড়াশোনা করেন । ওদের লক্ষ্য একটাই । নিজের পায়ে দাঁড়ানো । ওদের বুকে জ্বলছে খিদের আগুন । প্রতিদিন প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আগুন । প্রতিদিন স্বপ্ন দেখেন ওরা তিনজন ।

এতদিন পর্যন্ত বহু মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল । হঠাৎ দীর্ঘ লকডাউন । আর তাতেই তাঁরা বিপাকে পড়েছেন । যাঁরা খাদ্য সামগ্রীসহ বহু কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী এতদিন পর্যন্ত ওঁদের দিয়ে যেতেন । আজ সেই সাহায্যের হাতগুলো তাঁদের কাছ থেকে অনেকটাই দূরে চলে গেছে ।

এই কঠিন পরিস্থিতিতে গণেশদের একটাই আবেদন, "চাকরি । একটা চাকরি যদি আমরা পাই, তাহলে আমরা প্রমাণ করে দেব সুস্থ ছেলে মেয়েদের থেকে আমরা কিন্তু কম নয় । আমরাও সব পারি । আমরা সব কাজ করতে পারব ।"

দীর্ঘ লকডাউনের সময় কালে যন্ত্রণাময় জীবনের দুর্লভ এক অভিজ্ঞতা ওঁদের জীবনবোধকে পালটে দিয়েছে । আজকে ওঁরা তাই আর দানের কথা ভাবেন না । ওঁরা চাইছেন একটা চাকরি করে সংসারে সচ্ছলতা নিয়ে আসা । বয়স্ক মা-বাবা ,পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটানো। আর এই লক্ষ্যেই ওঁরা অবিচল । তাই ওরা দৃপ্ত কণ্ঠে গেয়ে উঠে "আমরা করব জয়, নিশ্চয়" ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.