দুর্গাপুর, 5 অক্টোবর: দুর্গাপুর ব্যারেজের 34টি লকগেটের মধ্যে চারটির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ । ব্যারেজ পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা জানালেন বিজেপি সাংসদ এসএস আলুওয়ালিয়া ৷ তবে এই মুহূর্তে জলের চাপ থাকার কারণে মেরামত করা যাবে না বলেও জানান তিনি ৷ এ দিকে, সূত্র মারফত খবর, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে গভীর নিম্নচাপের জেরে বুধবার লাগামছাড়া বৃষ্টি হয়েছে রাজ্যজুড়ে ৷ তার ফলে বৃহস্পতিবার ফের মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে বিপুল পরিমাণ জল ছাড়া হবে । দুর্গাপুর ব্যারেজের উপরে জলের চাপ আরও বাড়তে চলেছে । এই চাপ সহ্য করে দুর্গাপুর ব্যারেজের খারাপ হয়ে যাওয়া লকগেটগুলি আস্ত থাকবে তো ? এই আশংকাই ঘোরাফেরা করছে আশপাশের এলাকার মানুষের মনে ৷
দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার আগের মুহূর্তে দামোদর তীরবর্তী এলাকার মানুষদের আগাম তথ্য পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল সেচ দফতর ৷ তবে তাদের উদ্যোগে দুর্গাপুর ব্যারেজে তত্ত্বাবধান নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য অর্জন কেন্দ্র গড়ে উঠলেও পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ না-থাকায় দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার আগে পৌঁছচ্ছে না জল ছাড়ার খবর ৷ সেই কারণেই বন্যার কবলে পড়তে হচ্ছে দামোদর তীরবর্তী এলাকার মানুষদের ।
বুধবার দুর্গাপুর ব্যারেজের তত্ত্বাবধান নিয়ন্ত্রণ এবং তথ্য অর্জন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুললেন বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া । ঝাড়খণ্ডে লাগাতার নিম্নচাপের জেরে দামোদর নদে জলবৃদ্ধি পাওয়ায় মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধারে জলের চাপ বেড়েছে, ফলে দফায় দফায় ছাড়া হচ্ছে জল । সেই জলের চাপ এসে পড়ছে সেচ দফতরের দায়িত্বে থাকা দুর্গাপুর ব্যারাজে । রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বারবার অভিযোগ তোলেন, রাজ্যকে না-জানিয়ে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন জল ছাড়ে । সেই জন্যই দুর্গাপুরের দামোদর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়তে হয় সেচ দফতরকে ।
1955 সালে তৈরি হওয়া দুর্গাপুরের দামোদর ব্যারেজে রয়েছে 34টি লকগেট । অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে জলের চাপ কমাতে । দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে সোমবার 71 হাজার কিউসেক হারে, মঙ্গলবার 1 লক্ষ 34 হাজার কিউসেক হারে আর বুধবার কিছুটা কমে 95 হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয় । দুর্গাপুরের দামোদর ব্যারেজে দীর্ঘদিন ধরে পলি উত্তোলন না-হওয়ায় নদীর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে । সেই জন্যই দুর্গাপুরের দামোদর ব্যারাজে জলধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে বলেও বিশেষজ্ঞদের মত ।
আরও পড়ুন: আগামিকাল বিকেল থেকে কমবে বৃষ্টি, পুজোর মুখে ফিরছে স্বস্তি
দুর্গাপুরের দামোদর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার দায়িত্ব এবং লকগেটের দায়িত্বে রাজ্য সেচ দফতর থাকলেও ব্যারেজ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন । সূত্রের খবর, ব্যারেজের নাব্যতা হ্রাসের জন্য ঝাড়খণ্ডের পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে জল ছাড়লেই সেই জলের চাপ সহ্য করতে পারছে না দুর্গাপুরের দামোদর ব্যারেজ । জল ছাড়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য দুর্গাপুরের দামোদর ব্যারেজে রয়েছে তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ তথ্য অর্জন বিভাগ । বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া তত্ত্বাবধান নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য অর্জন বিভাগ পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন জল ছাড়লে সেচ দফতর আগাম খবর পেয়ে দামোদর তীরবর্তী এলাকার মানুষদের কাছে আগাম তথ্য পৌঁছে দিতে পারবে । সেই তথ্য মানুষের কাছে আগাম পৌঁছে গেলে বন্যার কবলেও পড়তে হবে না ওই মানুষগুলোকে ।
এই যন্ত্র পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ না-থাকায় ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার আগাম মুহূর্তে দামোদর তীরবর্তী এলাকার মানুষের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না । কখনও ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার খবর মানুষের কাছে পৌঁছতে অধিক সময় লেগে যাচ্ছে । সেই কারণে বন্যার কবলে পড়তে হচ্ছে দামোদর তীরবর্তী হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান-সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষদের । দ্রুত এই বিষয়টির দিকে নজর দেওয়ার দাবি তোলেন সাংসদ আলুওয়ালিয়া ।
যদিও সেচ দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় মজুমদার বলেন, পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ না-থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে ৷ তবে দ্রুত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য সেচ দফতর । পাশাপাশি নাব্যতা কমে যাওয়ার বিষয়টিও পশ্চিমবঙ্গ খনি এবং খনি বিভাগীয় দফতরকে জানানো হয়েছে । পলি উত্তোলনের বিষয়টিও তাঁরা দেখছেন বলে জানান তিনি ।