ভোজ্য তেলের দাম আকাশছোঁয়া, কাঁকসার আদিবাসীদের বিকল্প কচড়া তেল

বাজার চলতি ভোজ্য তেলের দাম এমন বেড়েছে (edible oil price hike) যে তা নাগালের বাইরে গিয়েছে ৷ ওই দাম আকাশছোঁয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে জঙ্গলমহলের দিন আনা দিন খাওয়া আদিবাসীদের কাছে ৷ এর মধ্যেই কাঁকসার আদিবাসীরা বিকল্প কচড়া তেলের ব্যবহার শুরু করেছেন ৷ এই তেল তৈরি হচ্ছে মহুয়ার বীজ থেকে ৷ এই তেলের ব্যবহার আগেও ছিল ৷ এতদিন তা গায়ে মাখার কাজে ব্যবহার হত ৷ তবে এবার সরষের বা অন্যান্য বীজ তেল নাগালের বাইরে যাওয়ায় তা খাওয়াও শুরু করেছেন তাঁরা ৷

দুর্গাপুর, 12 জুন : বাজার চলতি ভোজ্য তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি (edible oil price hike) ঘটেছে গত কয়েক মাসে ৷ ভোজ্য তেল কেনা দায় হয়েছে ৷ তাই সেই ঘাটতি মেটাতে মহুয়া ফল থেকে তৈরি হচ্ছে খাঁটি কচড়া তেল ৷ কাঁকসার (Kanksa) জঙ্গলমহলের আদিবাসীরা (adivasis) এই কচড়া তেল দিয়ে রান্নাবান্না থেকে শরীরে তৈলমর্দন সবই চালাচ্ছেন ৷ ব্যবহারের পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে বিক্রিও শুরু করেছেন ৷ আপাতত এই তেলের উৎপাদনই একপ্রকার হয়ে উঠেছে সংসার নির্বাহের উপায় ৷

মহুয়া গাছের ফলকে বলা হয় কচড়া। মহুয়া ফল মার্চ থেকে পাকতে শুরু করে ৷ তার পর পরই জঙ্গলের গাছে উঠে ফলগুলি পেড়ে নেন এই আদিবাসীরা ৷ তারপর রোদে শুকোতে হয় প্রায় 15 দিন ধরে ৷ এই তেলের ব্যবহার আয়ুর্বেদ মতে চলে আসছে বহুদিন ধরেই ৷ এই তেলে হাড় ও মাংসপেশী মজবুত হয় বলে পরামর্শ দেওয়া আছে আয়ুর্বেদে ৷ আদিবাসীরাও তাই জানান, এই তেল শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায় ৷ এই তেলের ব্যবহার তাঁরা আগাগোড়াই করতেন ৷ তবে ব্যাপক ভাবে খাওয়া শুরু হয়েছে গত চার-পাঁচমাস ধরে ৷ নিজেদের মধ্যেই তা বিক্রিও করছেন ৷ তবে লিটার হিসাবে তাঁরা তা বিক্রি করেন না ৷ কাপ হিসাবে নিজেদের মধ্যেই একটু আধটু বিক্রিবাটা চলে ৷ এক কাপ তেলের দাম 10 টাকা ৷

শাল, সেগুন, মহুয়ার জঙ্গলের মধ্যে বসবাস করে কাঁকসার আদিবাসী সমাজ । এইসব গাছের ফুল, ফল সংগ্রহ করা তাঁদের জীবকার মধ্যেও পড়ে ৷ মলানদিঘি রক্ষিতপুর, চুয়া, লোহাগুড়ি-সহ আরও একধিক আদিবাসী পাড়ার মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় । তাই নিজেদের তৈরি কচড়া তেলই সর্বোতভাবে ব্যবহার শুরু করেছেন তাঁরা ৷ বীজ থেকে নিজেরাই তেল তৈরি করছেন ৷ গোটা প্রক্রিয়াটি যে খুব স্বাস্থ্যকর বলা চলে তেমনটা নয় ৷ শক্ত জায়গার উপর ইট দিয়ে থেঁতো করেই চলছে বীজ ভেঙে তেল তৈরির কাজ ৷ তেলকলে নিয়ে গেলে তারা তেল ভাঙিয়ে দিতে নারাজ ৷ কারণ এই তেলের ব্যবহার চালু হয়ে গেলে তাদের চলতি ব্যবসা যে পড়ে যাবে ৷ তবে এনিয়ে প্রকাশ্য তেলকলের মালিকরা কোনও মন্তব্য করতেও নারাজ ৷

বহু আদিবাসী পরিবারের সংসার চলছে এভাবে ৷ একেই তো করোনাকালে কাজ নেই ৷ সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ৷ খাবার তেলের দাম বাড়ায় এই পন্থা অবলম্বন করতে হয়েছে ৷ কিছু খাওয়া হয়, কিছুটা মাখা আবার প্রদীপ জ্বালানো আবার কিছুটা বিক্রিও হয়ে যায় অনেক সময় ৷ সরকারি সাহায্যের আশায় আছেন তাঁরা ।

আদিবাসীদের এই কষ্টের মধ্যে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন মলানদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পীযুষ মুখোপাধ্যায় । তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী সবসময় গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন ৷ পঞ্চায়েতের তরফে তাঁদের সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে ৷