নদিয়া, 22 মে: 'ইম্পসিবল' শব্দের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে 'আই এম পসিবল'। অদম্য এই ইচ্ছাশক্তিই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় সফলতা এনে দিয়েছে নদিয়ার শান্তিপুরের বিশেষভাবে সক্ষম যমজ দুই বোন । মেয়েদের সাফল্যে বেজায় খুশি বাবা-মা । আগামিদিনে মেয়েদের লেখাপড়া আরও এগিয়ে নিয়ে চান পড়ুয়াদের পরিবার ।
নদিয়ার শান্তিপুর থানমার বাগআঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজারপাড়া এলাকার বাসিন্দা শ্যামল মল্লিক। পেশায় টোটো চালক। বাড়িতে তিন মেয়ে । যার মধ্যে দুই যমজ বোন রুমা ও ঝুমা জন্ম থেকেই বিশেষভাবে সক্ষম । মা রেখা মল্লিক জানিয়েছেন, সংসার সামলানোর পাশাপাশি দুই বিশেষভাবে সক্ষম মেয়েদের কীভাবে পড়াশোনা করাবেন এই নিয়ে সব সময় থাকতেন দুশ্চিন্তায়। পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি করানোর সময় অনেকটাই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল তাঁদেরকে ।
দু'জনই জন্ম থেকে বিশেষভাবে সক্ষম। একজন কোনও রকম চলাফেরা করতে পারলেও অন্যজন বিকলাঙ্গ। কানে যেমন শুনতে পারে না, বলতে পারে না কথাও। তাই শারিরীক বাধা নিয়ে কীভাবে বিদ্যালয়ে যাবে এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শিক্ষক এবং শিক্ষিকারা। যদিও অনেক টানাপোড়নের পর মেয়েদের ভর্তি করাতে পারেন বাগআঁচড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। তারপর থেকেই নিয়মিত বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনের জন্য যেত দুই মেয়েই। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে শিক্ষকরাও ধীরে ধীরে তাদের পড়াশোনার প্রতি আরও বেশি যত্নশীল হতে শুরু করেন।
অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে বেশি দুই বোনের দিকে নজর দিতেন শিক্ষকরা। যদিও দুজনেরই স্মৃতিশক্তি অনেকটাই কম তাই বাড়তি পরিশ্রম করতে হতো শিক্ষক এবং শিক্ষিকাদের। মা রেখা মল্লিক বলেন, "মেয়েদের ভর্তি করানোর সময় একটু সমস্যায় পড়তে হলেও যদি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা পাশে না থাকতেন, তাহলে হয়তো মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেয়েরা সাফল্য পেত না।"
আরও পড়ুন: মেধা তালিকায় যমজ ভাই, দু‘জনই চায় চিকিৎসক হতে
বাবা শ্যামল মল্লিক টোটো গাড়ি চালিয়ে কোনরকম সংসার চালান। তিনি বলেন "মেয়েদের পড়াশোনার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা জোগাড় করতেই হিমশিম খেয়ে যেতে হয় । তবুও হাল ছাড়িনি।" এরপর শ্যামল মল্লিক আক্ষেপের সুরে জানান, তাঁদের দুরাবস্থার কথা সকলেই জানেন । কিন্তু মেয়েরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করলেও কেউই পাশে দাড়ায়নি । না বাড়িতে এসেছে কোন জনপ্রতিনিধি, না খোঁজ নিয়েছে প্রশাসন। সরকার যদি একটু আর্থিক সহায়তা করত তাহলে আগামী দিনে মেয়েদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হতো।" তবে হাজার কষ্ট করে হলেও মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন মা-বাবা দুজনেই।