শান্তিপুর, 2 মে: একটা শাড়ি বুনতে 170 বা 150 টাকা মজুরি দেন মহাজনরা ৷ আর এই একটা শাড়ি বুনতেই সময় লাগে প্রায় তিনদিন ৷ সুতরাং, গড়ে ধরলে প্রতিদিন 50 টাকা করে মজুরি পান তাঁতশিল্পীরা ৷ দৈনিক 50 টাকায় কি সংসার চলে এখনকার বাজারে ? এই সঠিক মজুরি না থাকায় শান্তিপুরের ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁতশিল্প এখন প্রায় ধ্বংসের পথে। এভাবে চলতে থাকলে কোনও তাঁতি আর খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে আক্ষেপ শিল্পীদের । একটা সময় নদিয়ার শান্তিপুর এলাকার লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের ভরসা ছিল তাঁতশিল্প । মূলত, তাঁতের উপরই ভরসা করে চলত সংসার । দিন দিন মজুরি তলানিতে ঠেকে যাওয়ার ফলে আজ হাতে গোনা কয়েকজন তাঁত বুনছেন । তাও ক'দিন আর তাঁত বুনে সংসার চালাবেন সেটাও বুঝে উঠতে পারছেন না। মজুরি বৃদ্ধি না করার ফলে নতুন করে কেউ আর এই শিল্পের দিকে আগ্রহ করে এগিয়ে আসছেন না । তবে এভাবে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প ধুঁকতে থাকার জন্য তাঁতশিল্পীরা মূলত সরকারের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন । তাঁদের দাবি, সরকারের নেওয়া বেশ কিছু পদক্ষেপের জন্য তাঁতশিল্প ধ্বংস হতে বসেছে ৷
শান্তিপুরের তাঁতশিল্পী অশোক প্রামাণিক । প্রায় 35 বছর ধরে তাঁত বুনছেন তিনি । তাঁর কথায়, "আগের মত তাঁত শিল্পে আর সেভাবে মজুরি নেই । একশ্রেণির মহাজনরা তাঁদের মুনাফা বাড়ানোর জন্য তাঁতিদের মজুরি কমিয়ে দিয়েছে । আবার বাইরের রাজ্য থেকে যে সমস্ত কাপড় এরা আনছে সেই কাপড়ের কারণেই হস্তচালিত তাঁত কাপড়ের চাহিদা অনেকটাই কমেছে । এখন তাঁত বুনে দিনে 50 টাকা আয় হয় । সেই কারণেই সংসার চালাতে কার্যত নাজেহাল হচ্ছে তাঁতশিল্পীরা ৷ আমরা কখনও তাঁতশিল্পীদের ভাতা পাই না । যারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত তাদেরই বেছে বেছে এই সুবিধাগুলো দেওয়া হয় ।"
এই বিষয়ে আরেক বর্ষীয়ান তাঁতশিল্পী শ্যামল বসাক বলেন, "মূলত মহাজনদের অতিরিক্ত মুনাফা লোভের কারণে দিন দিন তাঁতশিল্প ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে । সরকারের তাতেও কোনও হেলদোল নেই ৷ কয়েক দশক আগে যাও বা তাঁতশিল্পীদের জন্য ছোট ছোট পদক্ষেপ নিত সরকার এখন তাও দেখা যায় না । দিনে 50 টাকা রোজগার করে কীভাবে সংসার চলে ?"
তবে এ বিষয়ে শান্তিপুরের বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এর আগেও একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য । তাঁতিরা যাতে এই শিল্পের উপর নির্ভর করে সংসার চালাতে পারে সেই দিকটা নজর রাখা হয়েছে । প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অ্যাজেন্ডা ছিল মূলত তাঁতশিল্প বাঁচানো নিয়ে । যেহেতু কেন্দ্র সরকার এই তাঁতশিল্পে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে থাকে সেই কারণে আমরা নতুনভাবে কোনও ভাল পদক্ষেপ কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে পাইনি । তবে রাজনৈতিক টানাপোড়নের মধ্যে শান্তিপুরের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প আরও ভালো করে অগ্রাধিকার পায় নাকি, পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় সেটাই এখন দেখার ।
আরও পড়ুন : সরকারি সম্মান পেলেও জুটছে না ভাতা, আক্ষেপ একশো ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধার গলায়