ফুলিয়া, 31 জানুয়ারি: বয়স 96 বছর, ভাঙা টিনের ঘরে বসবাস। বর্ষার সময় টিনের ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। একাধিকবার প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়েছেন, কিন্তু কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাননি। অগত্যা সুতো পাকিয়ে সংসার চালাচ্ছেন বৃদ্ধা মানদা বসাক (Old Age Woman In Phulia)। নদিয়ার ফুলিয়া চটকাতলার 96 বছর বয়সী মানদাদেবীকে আজও ভরসা করতে হয় সেই চরকা কাটা উপার্জনের উপরেই।
একাত্তরের দেশভাগের আগে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দা ছিলেন মানদা বসাক। মাত্র 12 বছর বয়সে বিবাহ হয় তাঁর। তার ঠিক কয়েক বছর পরে ইংরেজদের কাছ থেকে পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে ছিলেন বাংলাদেশ থেকেই। কিন্তু দেশভাগের তিক্ত অভিজ্ঞতায় এদেশের নদিয়ার ফুলিয়া চটকাতলায় ঠাঁই হয়েছিল তাঁদের। 1950 সালের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের স্মৃতি আজও তাঁর চোখে-মুখে। চরকা কেটেই তিন ছেলে ও এক মেয়েকে বড় করেছেন তিনি। বড় ছেলের বয়স এখন 65 বছর, ছোট ছেলের বয়স 43 বছর। তিন বছরের ছোট ছেলেকে রেখে মৃত্যু হয় মানদা দেবীর স্বামীর। পেশায় তিনি ছিলেন তাঁত শ্রমিক। তিন ছেলেমেয়ের পরিবার ভেসে যেতে দেয়নি একমাত্র চরকা।
আরও পড়ুন: আগামী মাসে স্কুল খুলবে, সরকার চাইলে গ্রেফতার করুক, হুঁশিয়ারি শিক্ষকদের
সেসময়ের টিনের বেড়া এবং ছাউনি বেশ কয়েক জায়গায় ফুটো হয়ে গেলেও আজও একইভাবে রয়েছে। প্রদীপের তলায় থাকে অন্ধকার, তাই হয়তো বাড়ির একেবারে সন্নিকটে সুতোর মালিক বীরেন বসাক 'পদ্মশ্রী' পেলেও, কিছুই পাননি মানদাদেবী। উন্নয়নের পিচ রাস্তা দোরগোড়ায় হলেও, তাঁর বাড়িতে পড়েনি এতটুকু ইট-বালি, সিমেন্ট। ছেলেদের 100 দিনের কাজ হোক বা মায়ের বার্ধক্য-বিধবাভাতা কিছুই কোনওদিন পাওয়া যায়নি বলে জানান, ছোট ছেলে কমল বসাক। 65 বছর বয়সী বড় ছেলে শ্যামল বসাক অভিমানের সুরে বলেন, "বেশ কয়েকবার সরকারি প্রকল্পে ঘরের কাগজপত্র জমা দিয়েও মেলেনি ফল। আজীবন চরকায় সুতো কেটে সংসার চালানো স্বত্বেও তাঁতি কার্ড বা তাঁত কিছুই মেলেনি।" এই বিষয়ে পঞ্চায়েত সদস্য মন্টু বসাক জানান, ওই পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র, সরকারি ঘর পাওয়ার উপযুক্ত। বেশ কয়েকবার কাগজপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও কি কারণে তা মঞ্জুর হচ্ছে না বুঝতে পারছি না। পঞ্চায়েত প্রধান তপতী বসাক জানান, কেন এমন হচ্ছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।