শান্তিপুর, 24 ফেব্রুয়ারি: সদ্যোজাতর ওজন বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাকে জোর করে নরম্যাল ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা ৷ এমনই ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে নদিয়ার শান্তিপুরে । এতে প্রসবের সময় ভেঙে যায় নবজাতের একটি হাত ! রক্ত জমাট বেঁধেছে বুকে এবং মাথার পিছন দিকে ৷ ভয়ংকর এই ঘটনাটি ঘটেছে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ৷ পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে কর্মরত প্রসূতি চিকিৎসক সবুজ বরণের গাফিলতিতে সদ্যোজাত গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে ৷ শিশুটির জীবন নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে (The condition of the newborn is critical) । থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নবজাতের বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা ৷
সূত্রে জানা গিয়েছে, গৃহবধূ উর্মিলা বিবি প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে শান্তিপুর নতুনপাড়া এলাকার শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভরতি হন ৷ গত 27 জানুয়ারি ভোর পাঁচটা নাগাদ তিনি প্রসব করেন ৷ প্রসবের সময় অতিরিক্ত যন্ত্রণায় ভুগছিলেন ৷ পরিবারের অভিযোগ, সদ্যোজাত শিশুর ওজন অনেকটা বেশি ছিল ৷ তাতে সমস্যায় পড়েন চিকিৎসক সবুজ বরণ ৷ মায়ের শরীর থেকে সদ্যোজাতকে কিছুটা বার করলেও পরে আর বের করা যাচ্ছিল না ৷ পরিবারের অভিযোগ, তখনই টেনে হিঁচড়ে জোর করে সদ্যোজাতকে বার করার চেষ্টা করে কয়েকজন নার্স ৷
এরপরে ঘটনাস্থলে আরও একজন চিকিৎসক আসেন । দুই চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করে বাচ্চাটি প্রসব করান ৷ এরপর সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকরা সদ্যোজাতর পরিবারকে জানান, নবজাতক অসুস্থ এবং তাকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হবে ৷ সদ্যোজাতকে নিয়ে পরিবার রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে যায় ৷ নবজাতকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা পরের দিন কলকাতায় জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন ৷ সেখানেও অসুস্থ সদ্যোজাতকে ভরতি না-নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা ৷
আরও পড়ুন: মর্মান্তিক ! বড়দিনে উদ্ধার প্লাস্টিকে মোড়া সদ্যোজাতের দেহ
পরদিন ওই শিশুটিকে নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভরতি করানো হয় ৷ সেখানে নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায় সদ্যোজাতের একটি হাত ভেঙে গিয়েছে ৷ শরীরের একাধিক জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে ৷ পরিবারের দাবি পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে শিশুটির জীবন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে । এরপর পরিবারের তরফ থেকে শান্তিপুর থানায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় ৷
পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকদের গাফিলতিতেই এই মর্মান্তিক পরিণতি ৷ তাঁদের প্রশ্ন, সদ্যোজাতের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক জেনেও কীভাবে নরম্যাল ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করলেন ওই চিকিৎসক ? গায়ের জোরে তাকে বের করার চেষ্টার ফলে শিশুটি গুরুতর আঘাত পেয়েছে ৷ এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষ চন্দ্র দাস বলেন, "আমার কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ আসেনি ৷ অভিযোগ এলে তদন্ত করা হবে ৷ যদি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ৷" এই ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে কটাক্ষ করেছেন জেলার বিজেপি নেতা সোমনাথ কর ৷ তিনি বলেন, "শুধু শান্তিপুর হাসপাতাল বলে নয়, গোটা রাজ্যজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা দেখা যাচ্ছে ৷"