শান্তিপুর, 25 মে: পড়াশুনার কোনও বয়স হয় না ৷ ইচ্ছা আর মনের জোর থাকলে সবকিছুই সম্ভব ৷ সে কথাই এতদিন আমরা শুনে এসেছি ৷ তবে বাস্তবে তা করে দেখালেন নদিয়ার বাসিন্দা লতিকা (39) ও সৌরভ মণ্ডল (18) ৷ সম্পর্কে তাঁরা মা-ছেলে হলেও তাঁদের আরও একটি পরিচয় রয়েছে ৷ তারা দু'জনেই এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৷ পাশও করেছেন ৷ তবে ছেলের থেকে মা 40 নম্বর বেশি পেয়েছেন ৷ লতিকার প্রাপ্ত নম্বর 324, ছেলে সৌরভ পেয়েছেন 284 । তবে 40 নম্বর বেশি পেয়েও মায়ের আক্ষেপ, ছেলে যদি তাঁর থেকে বেশি পেত তাহলে ভালো হত ।
নদিয়ার শান্তিপুর থানার নৃসিংহপুর নতুন সরদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা লতিকা মণ্ডল । তাঁর দুই মেয়ে একটি ছেলে রয়েছে । মেয়ে কলেজ ছাত্রী । লতিকার ছোট থেকেই আশা ছিল কলেজের গণ্ডি পার করে আগে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার । তবে আর্থিক অনটন এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে তা হয়ে ওঠেনি ৷ পরিস্থিতির কাছে হার শিকার করে বাধ্য হয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে তাঁকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয় । এরপরে হাজারো চেষ্টার পরেও তিনি পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি । বাড়ি থেকে লতিকাকে দেখাশোনা করেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় ।
তারপর কেটে যায় প্রায় 19টা বছর । বড় মেয়ে তখন কলেজের গণ্ডিতে পা দিয়েছে । লতিকার নতুন করে ইচ্ছে জাগে পড়াশোনা করার ৷ ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয় ৷ এক প্রতিবেশীর সাহায্যে লতিকা রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ে মাধ্যমিকে ভরতি হন । ঠিক সেই সময় তাঁর ছেলে সৌরভ মণ্ডলও মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন । এরপরই মাধ্যমিক পাশ করেন দু'জনে ৷ তারপর লতিকা ভরতি হন নৃসিংহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ।
ছেলে সৌরভ তখন দ্বাদশ শ্রেণিতে কালনা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন । যেহেতু তারা একই ক্লাসে পড়তেন ৷ সেই কারণে একই সঙ্গে বাড়িতে পড়াশোনা করতে বসতেন । নিজের সংসার সামলে পাশাপাশি প্রতিবেশীদের বিভিন্ন কটুক্তি সহ্য করেও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন লতিকা । বুধবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোয় ৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানতে পারেন ছেলে এবং মা দুজনেই পাশ করেছেন । আর এরপরেই সেসব মানুষ একদিন তাঁর পড়াশুনা নিয়ে কটাক্ষ করত এখন তারাই বাহবা দিচ্ছে মা ছেলের সাফল্যে ৷
এ বিষয়ে লতিকা মণ্ডল বলেন, "আমি ছেলের মুখ থেকে জানতে পারি যে আমরা দু'জনেই পাশ করেছি । তবে আমি 324 নম্বর পেয়েছি । আর ছেলে 284 নম্বর পেয়েছে । আমি যে চল্লিশ নম্বর বেশি পেয়েছি সেটা ছেলে পেলেই হয়তো ভালো হত ৷ আমি বেশি খুশি হতাম । আগামিদিনে আরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই ।" তবে নিজে কম নম্বর পেলেও মায়ের সাফল্যে যথেষ্ট খুশি সৌরভ মণ্ডল । তিনি বলেন, "মা এত ভালো ফলাফল করেছে এতে আমি মোটেও দুঃখিত নই । আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা করে আগামিদিনে আরও উচ্চশিক্ষিত হতে চাই ।"
আরও পড়ুন: পরীক্ষা-শেষে বাবার মুখাগ্নি, উচ্চমাধ্যমিকে 61 শতাংশ পেলেন বোলপুরের মৌসুমী