কৃষ্ণনগর, 9 নভেম্বর: "আপনারা ভোট দিয়েছেন বলেই তো নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ৷ আপনাদের যদি ভোটাধিকার না থাকত, তাহলে কি তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন ? রানাঘাট থেকে তো সব ভোট নিয়ে গিয়েছে ! আপনারা নাগরিক না হলে কি ভোট দিতে পারতেন ? তাহলে আবার আপনাদের নাগরিকত্ব দেবে কীভাবে ? সব মিথ্যা কথা ! বিজেপি এখানকার মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে ৷" বুধবার নদিয়ার (Nadia) কৃষ্ণনগরে (Krishnanagar) আয়োজিত জনসভার মঞ্চ থেকে এভাবেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (Citizenship Amendment Act, 2019) বা সিএএ (CAA) নিয়ে নিজের অবস্থান আরও একবার স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ৷ বার্তা দিলেন মতুয়াদের পাশে থাকার ৷
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে (WB Panchayat Election 2023) রাজ্য়ের মতুয়া ভোট (Matua Vote) যে তৃণমূল সুপ্রিমোকে ভাবাচ্ছে, তা মমতার এদিনের ভাষণেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ বুধবার মঞ্চে উঠেই মমতা উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, "বহুবছর আগে কৃষ্ণনগর থেকে দু'টো লোকসভা আসন পেয়েছিলাম ৷ কিন্তু, এবারের লোকসভায় কৃষ্ণনগর পেলেও রানাঘাট পাইনি ৷ বিধানসভাতেও রানাঘাটে মাত্র একটা আসন পেয়েছি ৷ এর কারণ কী বলুন তো ? রানাঘাট থেকে যাঁরা এসেছেন, বলুন তো, বিজেপি কী এমন করল যে মিথ্যা কথা বলে লোকসভা, বিধানসভার সিট পেয়ে গেল ?"
আরও পড়ুন: মতুয়ারা কাকে ভোট দেবেন, রাজ্য নেতৃত্ব জানে ! শান্তনুর মন্তব্য়ে জল্পনা
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, মমতার এই উদ্বেগ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ৷ কারণ, এই এলাকায় মতুয়া ভোট বড় ফ্যাক্টর (শতাংশের হিসাবে প্রায় 40 ভাগ) ৷ আর মতুয়াদের দীর্ঘদিনের দাবি, সিএএ ৷ কিন্তু, তৃণমূলনেত্রীর অবস্থান এর ঠিক উলটো মেরুতে ৷ এদিকে, বিজেপি মুখে সিএএ কার্যকর করার কথা বললেও তাদের পক্ষে এই মুহূর্তে তা করা সম্ভব নয় ৷ এই সারসত্য মতুয়ারাও বুঝেছেন ৷ আর তাই গেরুয়া শিবিরের একাংশের উপর ক্ষোভ বাড়ছে তাঁদের ৷ অন্যদিকে, মমতা যদি মতুয়াদের কাছে টানতে গিয়ে সিএএ সমর্থন করেন, তাহলে তাঁর সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে ধস নামবে ৷ এই প্রেক্ষাপটে বুধবারের জনসভা থেকে মমতা কীভাবে সিএএ এবং মতুয়াদের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখেন, তা নিয়ে উৎসাহ ছিল রাজনৈতিক মহলের ৷
মমতা কিন্তু, ব্য়াটিং করলেন পুরনো ছন্দেই ৷ সরাসরি কাঠগড়ায় তুললেন প্রধান বিরোধী বিজেপি-কে ৷ জনতাকে প্রশ্ন করলেন, "এখানকার বিজেপি এমপি ও এমএলএ-রা কি কোনও কাজ করেছে আপনাদের জন্য ?" উত্তরে সমস্বরে চেঁচিয়ে দর্শক বলে, "না !" সঙ্গে সঙ্গে মমতার প্রত্যুত্তর, "তাহলে ভোট দিয়েছিলেন কেন ?"
এরপরই মমতা কার্যত খতিয়ান তুলে ধরার মতো করে জানান, মতুয়ারা চাকরি করছেন, তাঁদের সন্তানরা স্কুলে পড়াশোনা করছে, তাঁরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, বিনামূল্যে রেশন পাচ্ছেন ৷ তাঁদের নিজেদের জমি-জায়গা, ঘর-বাড়ি আছে ৷ সর্বোপরি, মতুয়ারা ভোট দেন ৷ আর সেই ভোটে জিতেই নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) প্রধানমন্ত্রী হন এবং মমতা নিজে মুখ্যমন্ত্রী হন ৷ মতুয়ারা যদি নাগরিক না হতেন, তাহলে কি এসব সম্ভব হত ? প্রকাশ্য সভামঞ্চে সেই প্রশ্নই তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ তাঁর বার্তা খুব স্পষ্ট ৷ মতুয়ারা আগে থেকেই দেশের নাগরিক ৷ তাই তাঁদের নতুন করে নাগরিকত্ব দেওয়ার কিছু নেই ৷ আর তাই সিএএ-এর গাজর ঝোলানো বিজেপি-কে আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ারও কোনও প্রয়োজন নেই ৷
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, মমতার এদিনের ভাষণ আদতে ভারসাম্যের ভাষণ ৷ সিএএ-এর বিরোধিতা করলেও মমতা যে মতুয়াদের নাগরিকত্ব রক্ষা করতে মরিয়া, সেকথাই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি ৷ তাঁর প্রতিশ্রুতি, প্রয়োজনে 'প্রাণ দিয়ে' মতুয়াদের নাগরিকত্ব রক্ষা করবেন !