নদিয়া, 1 অগাস্ট : এতদিন তাঁদের ধামসা-মাদলের তালে নেচেছেন বহু মানুষ ৷ তাঁরা আনন্দ দিয়েছেন বহু অনুষ্ঠানে ৷ আজ কোরোনা আবহে নিজেদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছেন তাঁরাই ৷ তাঁরা নদিয়ার ঝুমুর শিল্পী ৷ চার মাস লকডাউনের জেরে বন্ধ সমস্ত অনুষ্ঠান ৷ তাই আর ডাক পড়ে না তাঁদেরও ৷ আর্থিক সংকটে ভুগছেন ৷ কীভাবে দিন চলবে তা ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা ৷ চাইছেন সরকারি সাহায্য ৷ এভাবে চললে নতুন পেশায় যাওয়ার কথাও ভাবছেন অনেকে ৷
আজ ঘরবন্দী তাঁরাও ৷ ঘরের কোণে পড়ে থেকে থেকে ধুলো জমছে বাদ্যযন্ত্রগুলিতে ৷ কখনও ফাঁকা সময়ে নিজেরাই মহড়া করেন ৷ নিজেদের প্রচেষ্টায় যতটুকু বাঁচিয়ে রাখা যায় ঝুমুরকে ৷ সব কিছু স্বাভাবিক হওয়ার আশায় দিন গুনছেন তাঁরা ৷ ফের আগের মতো বায়না হোক ৷ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাকা হোক তাঁদের এই স্বপ্নই ফিরে ফিরে আসছে তাঁদের কাছে ৷
কোরোনা সংক্রমণ রুখতে মার্চের শেষে শুরু হয়েছিল দেশজুড়ে লকডাউন ৷ থমকে গিয়েছিল গোটা দেশ ৷ ঘরবন্দী হয়ে দিন কাটিয়েছেন সকলে ৷ জরুরি পরিষেবা ছাড়া আর কোনও কিছুতেই ছিল না অনুমতি ৷ তবে, চার মাস পর লকডাউন উঠলেও কমেনি আক্রান্তের সংখ্যার হার ৷ ক্রমশ বেড়েছে তা ৷ পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃত্যুর হারও ৷ এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ করা হচ্ছে ৷ যেখানে সংক্রমণ বেশি, সেগুলিকে কনটেনমেন্ট জ়োন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে ৷ কবে সব কিছু স্বাভাবিক হবে, তার সঠিক উত্তর জানা নেই কারও ৷
এই কোরোনা আবহের আগে প্রতিটি রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলিতে প্রথম সারিতে দেখা যেত এই ঝুমুর নাচ ৷ প্রায় প্রতিদিনই কাজের অর্ডার পেতেন তাঁরা ৷ অনুষ্ঠানগুলি থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে কোনওরকমে সংসার চলে যেত নদিয়ার শান্তিপুরের প্রায় শতাধিক ঝুমুর শিল্পীর পরিবারের ৷ আগামী দিনে কীভাবে সংসার চালাবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না ৷ তাঁদের অভিযোগ, কোনও সরকারি সাহায্যও মেলেনি ৷
ঝুমুর শিল্পী সঞ্জিত মাহাত বলেন, "গান বাজনার উপরই নির্ভরশীল আমরা ৷ রাজনৈতিক সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠানে ডাক পড়ত ৷ মাসিক রোজগার ভালোই হত ৷ কিন্তু, লকডাউনের জেরে সব বন্ধ ৷ শিল্পী ভাতা আগে ভালো আসত ৷ এখন সেটাও কমে গিয়েছে ৷ এভাবে চললে ঝুমুর শিল্পও হারিয়ে যাবে ৷ আমি চাই রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার একটু নজর দিক ৷ তাহলে খুবই ভালো হয় ৷"
আর এক ঝুমুর শিল্পী প্রসেনজিৎ মাহাতোরও বক্তব্য কিছুটা একই ৷ তিনি বলেন, "লকডাউন কবে উঠবে তা এই সরকার ছাড়া কেউ বলতেও পারবে না ৷ আমরা জানি না আগামী দিনে আমাদের জীবনে কী ঘটতে চলেছে ৷ সরকার একটু সাহায্য করলে তাও কিছুটা চলবে ৷ নাহলে এই পেশা ছেড়ে অন্য কিছু করতে হবে ৷"
বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন শান্তিপুরের BDO সুমন দেবনাথ ৷ তিনি বলেন, "ঝুমুর, জাদুকর বা মেলায় যারা থাকেন, তাঁদের বর্তমানে সমস্ত কাজ বন্ধ ৷ এই মুহূর্তে তাঁদের জন্য আলাদা করে কোনও নির্দেশ যদিও নেই ৷ তবুও আমরা সার্বিকভাবে চেষ্টা করছি ৷ যতদিন লকডাউন চলছে, ততদিন আমাদের সামর্থের মধ্যে থেকে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর ৷"