বড়ঞা, 16 এপ্রিল: পুকুরের জল সেচে ফেলা শেষ হয়েছিল আগেই, তারপরে শুরু হয় সেই জলাশয়ের পাঁক তুলে তল্লাশির কাজ ৷ কিন্তু তারপরেও খোঁজ নেই বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার দ্বিতীয় মোবাইল ফোনটির ৷ রবিবার সকালেই অবশ্য ওই পুকুরের পলি ঘেঁটে উদ্ধার হয় বিধায়কের অন্য একটি ফোন ৷ উল্লেখ্য, সিবিআই তদন্তকারীদের অভিযোগ, শুক্রবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাঝেই এক ফাঁকে ছাদে গিয়ে বাড়ির পাশের ওই পুকুরে তাঁর দুটি মোবাইল ফোন ফেলে দেন তৃণমূল বিধায়ক ৷ তদন্তকারীদের ধারণা, প্রমাণ লোপাটেই ওই কাণ্ড করেছেন জীবনকৃষ্ণ ৷
এর আগে রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে সিবিআই ও ইডি'র মতো তদন্তকারী সংস্থা হানা দিয়েছে একাধিক বড়-ছোট তৃণমূল নেতার বাড়ি বা ফ্ল্যাটে ৷ কোথাও উদ্ধার হয়েছে টাকার স্তুপ, সোনার গয়না কোথাও বা বহু নথি ৷ দিন রাত এক করে উদ্ধার হওয়া টাকা গোনার কাজও হয়েছে ৷ কিন্তু মুর্শিদাবাদে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন শুক্রবার থেকে সিবিআই গোয়েন্দারা হয়েছেন তার তুলনা হয় না ৷ তদন্তে নেমে পুকুরে মোবাইল খুঁজতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে তদন্তকারীদের ৷ পরিস্থিতি এমন যে, গত দু'দিন ধরে তাদের নজর পুকুর আর তার পাঁকের দিকে ৷
শুক্রবার বিকেলে বিধায়ক তাঁর মোবাইল দুটি ছুড়ে পাশের পুকুরে ফেলে দেন বলে অভিযোগ ৷ এরপরেই পুকুরের জল সেচে মোবাইল উদ্ধার পর্ব শুরু হয় ৷ যে কাজ রবিবার সন্ধ্যাতেও শেষ হয়নি ৷ মেলেনি একটি ফোন ৷ শুক্রবার দুপুর নাগাদ প্রথম দুটি পাম্প এনে শুরু হয় পুকুরটিকে জলশূন্য করার কাজ ৷ শনিবার যোগ হয় অপর একটি মেশিন । রবিবার ভোর রাত্রে জল তোলার কাজ সম্পূর্ণ হয় ৷ তারপর শুরু হয় পুকুরের পলি-কাদা ঘেঁটে মোবাইল উদ্ধারের কাজ ৷ সকাল নাগাদ একটি ফোন মিললেও অপরটির সন্ধান মেলেনি ৷
এই খোঁজার কাজের জন্য রবিবার দুপুরে নিয়ে আসা হয় একটি জেসিবি । শুরু হয় পলি-কাদা তোলার দ্বিতীয় পর্ব । জেসিবি দিয়ে পুকুরের পলি তুলে ট্রাক্টরে বোঝাই করা হয় । তারপর তা পাশের একটি ফাঁকা জায়গায় জমা করা হয় । তারপর ফের শুরু হয় 'জীবনের ধন' এই মোবাইল উদ্ধারের কাজ ৷ তবে এদিন সন্ধ্যার পরেও সেই কাজ সম্পন্ন হয়নি ৷ মেলেনি সেই দ্বিতীয় মোবাইলটিও ৷ তিন দিন পেরিয়ে গেলেও চলছে সেই অনুসন্ধান পর্ব, কবে কখন তা শেষ হবে তা সকলের অজানা ৷
আরও পড়ুন: সিবিআই ঘেরাটোপের মধ্যেই বিধায়কের বাড়িতে আচমকা হাজির ব্লক নেতৃত্ব
রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, সিবিআই-এর এই মোবাইল উদ্ধারই হয়তো বলে দিতে পারে জীবনকৃষ্ণের জীবনের মোড় কোন দিকে ঘুরবে ৷ এই জেরা ও তল্লাশি পর্বের মাঝেই এলাকার এক মহিলা রবিবার জানান, তাঁর স্বামী লেবারের কাজ করেন ৷ তাঁদের একটি পাকা ঘরও নেই । এই বিধায়ক কোনও ঘরের ব্যবস্থা করে দেননি ৷ আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও আছে বিধায়কের বিরুদ্ধে ৷ এলাকাবাসী চান দোষ প্রমাণিত হলে যেন শাস্তি হয় জীবনকৃষ্ণের ৷