মুর্শিদাবাদ, 23 সেপ্টেম্বর: ভারতের সেরা পর্যটন গ্রামের স্বীকৃতি পাওয়ার পরেই বাড়ল আগও দায়িত্ব ৷ পর্যটকদের কাছে সঠিক পরিষেবা পৌঁছে দিতে ও এলাকার উন্নয়নে জোর দিতে হবে আরও বেশি ৷ 51 সতীপীঠের মধ্যে একটি মুর্শিদাবাদের কিরীটেশ্বরী মন্দির ৷ সেই মন্দির ভারতের মানচিত্রে সেরার সেরা পর্যটন গ্রাম হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে ৷ এই তকমা গ্রামের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আশা গ্রামবাসীদের ৷
গ্রামেরই বাসিন্দা পঙ্কজ দাস বলেন, "গ্রামটা আমাদের পিছিয়ে ছিল ৷ সেরা পর্যটনের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরাই খুশি ৷ অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে আমরা ৷ আশা করছি, এবার আমাদেরও উন্নতি হবে ৷ এখানে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়লে অর্থনৈতিক কাঠামো বদলে যাবে ৷"
মন্দির কমিটির সহ-সম্পাদক বাপি দাস বলেন, " এক বছরের চেষ্টায় এই স্বীকৃতি আমরা পেয়েছি ৷ মডেল গ্রামের স্বীকৃতি পাওয়ার পরেই আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল ৷ শুধু খাতায়-কলমে বা একটা সরকারি ঘোষণার উপরে আমরা দাঁড়িয়ে থাকব না ৷ গ্রামটাকে আরও উন্নত করে তুলতে হবে ৷ রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নের দরকার আছে ৷ এর জন্য যেখানে যেতে হবে যাব ৷ পাশাপাশি, যোগাযোগ ব্যবস্থা যাতে উন্নত হয়, সেদিকেও নজর দেওয়ার জন্য আবেদন জানাব আমরা ৷"
ফারসি ভাষার ঐতিহাসিক গ্রন্থ রিয়াজ উস সালতিনে ও রেনেলের প্রাচীন মানচিত্রে তিরুথকোণা গ্রামই কিরীটেশ্বরী। সতীর কিরিটকণা বা করোটি পড়েছিল এই গ্রামে। সেই থেকেই গ্রামের নাম কিরীটেশ্বরী। লোকমুখে শোনা যায়, রাজা দর্পনারায়ণের সময় এই মন্দিরের চরণামৃত খেয়েই মীরজাফরের কুষ্ঠ রোগ ভালো হয়েছিল। সুস্থ হয়ে মন্দির লাগোয়া একটি পুকুর খনন করে দিয়েছিলেন মীরজাফর মন্দিরে কোনও বিগ্রহ নেই। রয়েছে শিলাখণ্ড।
মন্দিরের সেবাইত মানস ভট্টাচার্য জানান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে এই মন্দিরে। প্রাচীন টেরাকোটার মন্দির ধ্বংস হওয়ার পর রাণি ভবানি বর্তমান মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন। যদিও কিরীটেশ্বরী ব্রহ্মশিলা রয়েছে গ্রামেরই এক গুপ্ত মন্দিরে। মুর্শিদকুলি খাঁ রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ স্থানান্তরিত করার সময় আতঙ্কে ব্রহ্মশিলা লুকিয়ে রেখেছিলেন ৷
আড়াই হাজার জনবসতির গ্রামটি কার্যত সবুজে মোড়ে। স্কুল থেকে শুরু করে পরিশ্রুত পানীয় জল, রাস্তাঘাট সব রকমের পরিকাঠামো রয়েছে ৷ তবে তা আরও উন্নত করতে হবে ৷ গ্রামের পূর্ব দিকে তিন কিমি দূরে বয়ে গিয়েছে ভাগীরথী। পশ্চিম দিকে তিন কিমি দূরে 34 নম্বর জাতীয় সড়ক। গ্রাম লাগোয়া রয়েছে কাটোয়া মালদহ রেল লাইন।
আরও পড়ুন: মাঝি ছাড়া ডিঙি নৌকায় পিয়ালী নদীতে ঝুঁকির পারাপার
গ্রামের মানুষের পাশাপাশি এখানে আসা পর্যটকরাও দাবি করেছেন, ডাহাপাড়া ধাম হল্ট স্টেশনে সব ট্রেন দাঁড়ায় না। সব ট্রেন দাঁড়ালে ভালো হবে ৷ পাশাপাশি, বেহাল রাস্তাও সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে ৷ আগামী 27 সেপ্টেম্বর কেন্দ্রর পর্যটন দফতর থেকে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হবে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র-সহ কিরীটেশ্বরী মন্দির কমিটির সম্পাদক প্রভাত দাসের হাতে।