সামশেরগঞ্জ, 3 নভেম্বর: অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফোরায়। ভাঙা টালির বাড়ি। সাইকেলে করে কাপড় নিয়ে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে কোনওরকমে সংসার চালান মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের যাদবনগর গ্রামের বাণী ইসরাইল। বিড়ি বেঁধে দু-পয়সা রোজগার করে স্বামীকে সাহায্য করেন স্ত্রী কেশবানু বিবি। সেই দরিদ্র পরিবারেরই দুই সন্তান এখন এমবিবিএস-এর ছাত্র ৷ সোমবার ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটের ফলাফল প্রকাশিত হতেই যেন ভাঙা বাড়িতে আনন্দের জোয়ার এসেছে। বড় ছেলে শাহিদ আনোয়ারের পর এবার মেজোছেলে সোহেল আনোয়ারও এমবিবিএসে সুযোগ পেয়েছে। ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় সোহেল আনোয়ারের র্যাঙ্ক হয়েছে 12550। প্রাপ্ত নম্বর 616।
জানা গিয়েছে, সামশেরগঞ্জের যাদবনগর গ্রামের পেশায় কাপড় বিক্রেতা তথা হকার বাণী ইসরাইল। স্ত্রী কেশবানু বিবি চার ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার। কোনওরকমে হকারি করে দিন গুজরান করলেও মেধাবী ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করাতে কোনও কসুর করেননি বাণী ইসরাইল। বড় ছেলে শাহিদ আনোয়ার ইতিমধ্যেই 2019 সালে নিটে সাফল্য অর্জন করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছেন। ছোট ছেলেকেও ডাক্তার করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দু'বেলা খেয়ে না খেয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিকে পড়াশুনা করানোর পর এলাকারই ছেলে বর্তমানে দার্জিলিং জেলায় কর্মরত বিডিও সামিরুল হকের পরামর্শ নিয়ে প্রথমে জিডি তারপর রহমত আলম মিশন ও পরে আল আমিন মিশনের খলিসানি শাখায় নিটের কোচিং নিতে শুরু করে বাণী ইসরাইলের মেজোছেলে সোহেল আনোয়ার। অবশেষে সোমবার আসে সেই খুশির খবর।
আরও পড়ুন: "দাম যত বাড়বে লাভ তত মোদি-দিদির", তীব্র কটাক্ষ অধীরের
বড় ছেলের মতো আরও এক ছেলে এমবিবিএসে সুযোগ পাওয়ায় খুশিতে কার্যত চোখে জল এসেছে বাবা বাণী ইসরাইল ও মা কেশবানু বিবির। রেজাল্ট পেয়ে উচ্ছ্বসিত সোহেল আনোয়ারও। একই পরিবার থেকে দুই ভাইয়ের এমবিবিএসের খবরে খুশি যাদবনগর গ্রামের বাসিন্দারা। ভাঙা চালের নীচে বসবাস করে যেভাবে দুই ছেলেকে এমবিবিএস পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন বাণী ইসরাইল তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা।