নবগ্রাম (মুর্শিদাবাদ), 2 ফেব্রুয়ারি: দু’দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) নবগ্রামের গুলিবিদ্ধ যুব তৃণমূল (Trinamool Congress) নেতা রুবেল শেখের মৃত্যু হল কলকাতার এক বেসরকারি নার্সিংহোমে । মৃত্যুর খবর ছড়াতেই জেলার তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের (TMC Factionalism) অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা । যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে মুখ খোলেননি মৃতের পরিবারের কেউ । পরিবারের লোকের দাবি, কে বা কারা গুলি করেছে তাঁরা জানেন না ৷ কেন গুলি করা হয়েছে, সেই বিষয়েও তাঁদের কোনও ধারণা নেই ৷
নবগ্রাম ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি এনায়েততুল্লা শেখের ছায়াসঙ্গী ছিলেন বছর ছাব্বিশের মৃত যুব তৃণমূল নেতা রুবেল শেখ । ঘটনায় বুধবারই নবগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতের পরিবার । যদিও এখনও দুষ্কৃতীরা অধরা । তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ৷ ফলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ আরও জোরালো করেছে বিরোধীরা । নবগ্রাম থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, নির্দিষ্ট পথেই তদন্তে এগোচ্ছে । খুব শীঘ্রই দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন রাত 10টার মধ্যে বাড়ি ফিরতেন রুবেল । মঙ্গলবার রাতে বাইকে বাড়ি ফেরার সময় বাইক খারাপ হয়ে যায় । গ্যারেজে বাইক সারাচ্ছেন বলে ফোনে বাড়িতে জানান । এর কিছুক্ষণ পরেই বাড়িতে তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর আসে । প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, তিনজনে গল্প করার সময় বাইকে আততায়ীরা এসে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় । ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন রুবেল শেখ । ঘটনাটি ঘটেছে নবগ্রাম থানার বিল বসিয়া এলাকায় ।
যদিও রুবেল শেখের বাড়ি সেখান থেকে প্রায় 12 কিমি দূরে নবগ্রাম থানার পাঁচগ্রামের ডিহিরডাঙ্গা গ্রামে । গুলিবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবগ্রাম ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে । সেখান থেকে রাতেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয় । অবস্থার অবনতি হওয়ায় বুধবার বিকেলে কলকাতা রেফার করা হয়েছিল । বুধবার রাতে কলকাতার এক বেসরকারি নার্সিংহোমে মৃত্যু হয় ওই যুব নেতার । মৃতের মা মোমিনা খাতুন বলেন, ‘‘কে বা কারা মেরেছে আমরা জানি না । শুধু জানি এনায়েততুল্লার সঙ্গে থাকত ।’’ মৃতের দাদু কাবাতুল্লা শেখ বলেন, ‘‘থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি । পুলিশ তদন্ত করে দেখছে ।’’
আর কয়েকমাস পরই পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Elections 2023) ৷ তার আগে এই খুন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে ৷ বিরোধীরা খুনের কারণ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে দাবি করছে ৷ বিজেপির (BJP) দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পাওয়া নিয়ে তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার হয়ে রয়েছে । তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জেলাজুড়ে ।’’ অন্যদিকে জেলা কংগ্রেসের (Congress) মুখপাত্র জয়ন্ত দাসের বক্তব্যও একই ৷ তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিরোধী বাইরে কম দলের অন্দরে বেশি । পঞ্চায়েতে ভোটের জন্য যে আগ্নেয়াস্ত্র বোমা গুলি জড়ো করা হয়েছিল, সেগুলিই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে কাজে লাগছে ।’’
যদিও বিরোধীদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল । জেলা তৃণমূল নেতা অশোক দাস বলেন, ‘‘জেলাজুড়ে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি জোট বেঁধে তৃণমূলকে খতম করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে । পুলিশ তদন্ত করছে । খুব শীঘ্রই সত্যি সামনে আসবে ।’’
প্রসঙ্গত, গত 24 জানুয়ারি পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচন করে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় রানিনগর-1 ব্লকের এক তৃণমূল নেতার । সেখানেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগই উঠে এসেছিল । ফের আরেক তৃণমূল নেতার মৃত্যুতে একই অভিযোগে অস্বস্তি বাড়ছে শাসক শিবিরে । পাশাপাশি জেলায় একাধিক গুলি ও বোমাবাজির ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে ।
আরও পড়ুন: ফের মুর্শিদাবাদে শুট আউট, গুলিবিদ্ধ যুবক
