ETV Bharat / state

''কোরোনাকে ভয় করলে মৃতদেহগুলির কী হবে'' - মুর্শিদাবাদের কবর খননকারী

মুর্শিদাবাদে ছোটো-বড় মিলিয়ে প্রায় 4 হাজার কবরস্থান রয়েছে ৷ যেখানে কাজ করেন কম-বেশি 12 হাজার কবর খননকারী ৷ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, PPE কিট পরে কাজ করা উচিত ৷ কিন্তু, কবর খননকারীদের বেশিরভাগজনই PPE পরে কাজ করছেন না বলে অভিযোগ ৷

grave diggers of murshidabad
কবর খননকারীর
author img

By

Published : Jul 20, 2020, 4:06 PM IST

বহরমপুর, 19 জুলাই : মৃত্যুতে ভয় ছিলই, এখন বেশি ভয় মৃতকে ! মৃতদেহ থেকে কোভিড 19 ছড়াতে পারে, এই আশঙ্কায় স্বজনের দেহও আজ পর ! সম্পর্কের সমীকরণ বদলে দিচ্ছে কোভিড 19 ৷ বেঁচে থাকা অবস্থায় যারা বাপ-মা-ভাই-বোন-সন্তানসন্ততি, মৃত্যুর পর তারা কেবলই এক কোরোনা আক্রান্ত মৃতদেহ ! তবু, সে দেহের তো সৎকার প্রয়োজন ৷ জীবিতের সুস্থতায় প্রয়োজন দ্রুত সৎকার ৷ এই বিষয়টি নিয়েও তৈরি হয়েছে ভয়, আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ৷ বিশেষত মুর্শিদাবাদে ৷ জেলায় 74% মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ ৷ প্রশ্ন অনেক, যেমন কোভিড 19-এ মৃতকে কবর দেওয়ার সময় কোন কোন নিয়ম পালন করা উচিত? কবর খননকারীরা কতটা সুরক্ষিত ? কবর দেওয়ার পরেও কি সংক্রমণ ছড়াতে পারে দেহ থেকে?

মুর্শিদাবাদে ছোটো-বড় মিলিয়ে প্রায় 4 হাজার কবরস্থান রয়েছে ৷ প্রতি কবরস্থানে 3 জন কবর খননকারী কাজ করেন ৷ অর্থাৎ, 12 হাজার মানুষ দেহ সৎকারের পেশায় যুক্ত ৷ খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, তাঁরা যথেষ্ট সচেতন নন ৷ যদিও চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মাস্ক তো বটেই, PPE কিট পরে কবর দেওয়ার কাজ করা উচিত ৷ অধিকাংশ কবর খননকারীরা যা মানছেন না ৷ তাঁদের সহজসরল বক্তব্য, সবকিছু উপরওলার উপর ছেড়ে দিয়েছি ৷ তবে, অনেকেই আতঙ্কিত ৷ তবু, মানবিকতার কারণে কাজ থেকে সরছেন না ৷ তাঁদের কথায়, কেউ যদি সৎকার না করে তাহলে কী হবে কোরোনা আক্রান্ত মৃতদেহের ! ভরসা একটাই, চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কবর দেওয়ার পর সংক্রমণ ছড়ায় না ৷

বর্ষীয়াণ কবর খননকারী আমোদ আলির কথায়, "ভয় তো আছেই ৷ সবার ভয় আছে ৷ আমারও আছে ৷ তবে, সেভাবে কোনও সর্তকতা অবলম্বন করি না । সবটা ছেড়ে দিয়েছি আল্লাহতালার উপর । ডাক আসে, তাই কাজ করি ৷ কোরোনাকে ভয় করলে মৃতদেহগুলির কী হবে?"

কোরোনার দিনে কতটা সুরক্ষিত কবর খননকারীরা !

আর এক কবর খননকারী কুদ্দুস শেখ কাজের সময় মাস্ক পরেন ৷ তাঁর মতে কোরোনা হলেও এবছর মৃত্যুর পরিমাণ কম ৷

তিনি বলেন, "কে কোরোনায় মরল, কে অন্য রোগে তা জানতে পারি না ৷ তবে সতর্কতা হিসেবে, নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, মাস্ক পরি ৷"

বোঝাই যাচ্ছে গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো আদৌ সচেতন নন ৷ ধর্মগুরুরা কিন্তু কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলছেন ৷

ধর্মগুরু মুস্তি জিয়াউল্লাহ বলেন, "এসব অসুখ-বিসুখ আল্লাহর তরফ থেকে আসে ৷ তবে, সরকার যা বলছে, তা মেনে চলতে হবে ৷ নমাজ, এবাদত সব ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা যা বলছেন সেইভাবে চলতে হবে ৷ ডাক্তার যদি বলে, মৃতদেহের কাছে যাওয়া চলবে না, তবে তা মানতে হবে ৷ তাতেই সকলের ভালো ৷"

কিন্তু, একবার কবর দেওয়া হয়ে গেল কি আর সংক্রমণ ছড়ায়?

চিকিৎসক দীনেশ গাইন বলেন, "কবর দেওয়া হয়ে গেলে তা থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই ৷ কিন্তু, কোভিড 19 আক্রান্ত দেহটিকেও PPE পোশাকে ঢাকা উচিত ৷ কবর খননকারীদের তো PPE পরেই কাজ করা উচিত ৷ "

ডাক্তার শান্তনু ঘোষ বক্তব্য সামান্য আলাদা ৷ তিনি বলেন, "কোরোনা রোগীর দেহ পুড়িয়ে দেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ ৷ কবর দেওয়ার ক্ষেত্রে গভীর গর্ত খুঁড়ে কাজ করতে হবে ৷ যাতে শেয়াল-কুকুরে লাশের নাগাল না পায় ৷ "

ধর্মগুরু, চিকিৎসকেরা যাই বলুন, মৃতকে শেষ দেখা দেখতে না পারার বেদনা বাড়ছে মুর্শিদাবাদের বহু পরিবারে । গত 24 মে কোরোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় নবগ্রাম থানার চুপড় গ্রামের নাগর মিরের । পরিবারের সদস্যরা হাসপাতলের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে-পায়ে ধরেছিলেন, শেষ দেখা দেখতে দিন ৷ অনুমতি মেলেনি ৷ পুলিশি ব্যারিকেডে দেহ সৎকার করে প্রশাসন ৷ মা আলিয়া বিবি ঘরে আছাড়িপিছাড়ি কেঁদেছেন ৷ দূর থেকেই সরকারি প্রক্রিয়ার সাক্ষী থেকেছেন বাবা ৷

বহরমপুর, 19 জুলাই : মৃত্যুতে ভয় ছিলই, এখন বেশি ভয় মৃতকে ! মৃতদেহ থেকে কোভিড 19 ছড়াতে পারে, এই আশঙ্কায় স্বজনের দেহও আজ পর ! সম্পর্কের সমীকরণ বদলে দিচ্ছে কোভিড 19 ৷ বেঁচে থাকা অবস্থায় যারা বাপ-মা-ভাই-বোন-সন্তানসন্ততি, মৃত্যুর পর তারা কেবলই এক কোরোনা আক্রান্ত মৃতদেহ ! তবু, সে দেহের তো সৎকার প্রয়োজন ৷ জীবিতের সুস্থতায় প্রয়োজন দ্রুত সৎকার ৷ এই বিষয়টি নিয়েও তৈরি হয়েছে ভয়, আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ৷ বিশেষত মুর্শিদাবাদে ৷ জেলায় 74% মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ ৷ প্রশ্ন অনেক, যেমন কোভিড 19-এ মৃতকে কবর দেওয়ার সময় কোন কোন নিয়ম পালন করা উচিত? কবর খননকারীরা কতটা সুরক্ষিত ? কবর দেওয়ার পরেও কি সংক্রমণ ছড়াতে পারে দেহ থেকে?

মুর্শিদাবাদে ছোটো-বড় মিলিয়ে প্রায় 4 হাজার কবরস্থান রয়েছে ৷ প্রতি কবরস্থানে 3 জন কবর খননকারী কাজ করেন ৷ অর্থাৎ, 12 হাজার মানুষ দেহ সৎকারের পেশায় যুক্ত ৷ খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, তাঁরা যথেষ্ট সচেতন নন ৷ যদিও চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মাস্ক তো বটেই, PPE কিট পরে কবর দেওয়ার কাজ করা উচিত ৷ অধিকাংশ কবর খননকারীরা যা মানছেন না ৷ তাঁদের সহজসরল বক্তব্য, সবকিছু উপরওলার উপর ছেড়ে দিয়েছি ৷ তবে, অনেকেই আতঙ্কিত ৷ তবু, মানবিকতার কারণে কাজ থেকে সরছেন না ৷ তাঁদের কথায়, কেউ যদি সৎকার না করে তাহলে কী হবে কোরোনা আক্রান্ত মৃতদেহের ! ভরসা একটাই, চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কবর দেওয়ার পর সংক্রমণ ছড়ায় না ৷

বর্ষীয়াণ কবর খননকারী আমোদ আলির কথায়, "ভয় তো আছেই ৷ সবার ভয় আছে ৷ আমারও আছে ৷ তবে, সেভাবে কোনও সর্তকতা অবলম্বন করি না । সবটা ছেড়ে দিয়েছি আল্লাহতালার উপর । ডাক আসে, তাই কাজ করি ৷ কোরোনাকে ভয় করলে মৃতদেহগুলির কী হবে?"

কোরোনার দিনে কতটা সুরক্ষিত কবর খননকারীরা !

আর এক কবর খননকারী কুদ্দুস শেখ কাজের সময় মাস্ক পরেন ৷ তাঁর মতে কোরোনা হলেও এবছর মৃত্যুর পরিমাণ কম ৷

তিনি বলেন, "কে কোরোনায় মরল, কে অন্য রোগে তা জানতে পারি না ৷ তবে সতর্কতা হিসেবে, নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, মাস্ক পরি ৷"

বোঝাই যাচ্ছে গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো আদৌ সচেতন নন ৷ ধর্মগুরুরা কিন্তু কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলছেন ৷

ধর্মগুরু মুস্তি জিয়াউল্লাহ বলেন, "এসব অসুখ-বিসুখ আল্লাহর তরফ থেকে আসে ৷ তবে, সরকার যা বলছে, তা মেনে চলতে হবে ৷ নমাজ, এবাদত সব ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা যা বলছেন সেইভাবে চলতে হবে ৷ ডাক্তার যদি বলে, মৃতদেহের কাছে যাওয়া চলবে না, তবে তা মানতে হবে ৷ তাতেই সকলের ভালো ৷"

কিন্তু, একবার কবর দেওয়া হয়ে গেল কি আর সংক্রমণ ছড়ায়?

চিকিৎসক দীনেশ গাইন বলেন, "কবর দেওয়া হয়ে গেলে তা থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই ৷ কিন্তু, কোভিড 19 আক্রান্ত দেহটিকেও PPE পোশাকে ঢাকা উচিত ৷ কবর খননকারীদের তো PPE পরেই কাজ করা উচিত ৷ "

ডাক্তার শান্তনু ঘোষ বক্তব্য সামান্য আলাদা ৷ তিনি বলেন, "কোরোনা রোগীর দেহ পুড়িয়ে দেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ ৷ কবর দেওয়ার ক্ষেত্রে গভীর গর্ত খুঁড়ে কাজ করতে হবে ৷ যাতে শেয়াল-কুকুরে লাশের নাগাল না পায় ৷ "

ধর্মগুরু, চিকিৎসকেরা যাই বলুন, মৃতকে শেষ দেখা দেখতে না পারার বেদনা বাড়ছে মুর্শিদাবাদের বহু পরিবারে । গত 24 মে কোরোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় নবগ্রাম থানার চুপড় গ্রামের নাগর মিরের । পরিবারের সদস্যরা হাসপাতলের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে-পায়ে ধরেছিলেন, শেষ দেখা দেখতে দিন ৷ অনুমতি মেলেনি ৷ পুলিশি ব্যারিকেডে দেহ সৎকার করে প্রশাসন ৷ মা আলিয়া বিবি ঘরে আছাড়িপিছাড়ি কেঁদেছেন ৷ দূর থেকেই সরকারি প্রক্রিয়ার সাক্ষী থেকেছেন বাবা ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.