লালবাগ, 28 জানুয়ারি: ভাগীরথীর পাড়ে ঘণ্টা বাজার শব্দ শুনে বহু মানুষ সেখানে পৌঁছলেন ৷ 1885 সাল থেকে নীরব ছিল নবাবি আমলের ঐতিহাসিক ঘণ্টা ঘর ৷ প্রায় চার দশক পর তিনশো বছরের পুরাতন ঘণ্টা জানান দিল নিজের অস্তিত্ব ৷ শীতে পর্যটনের মরশুমে ভিড় জমছে মুর্শিদাবাদে ৷ এই সময় মুর্শিদাবাদ পৌরসভার উদ্যোগে ফের বাজতে শুরু করল নবাবি আমলের ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষ্য ৷ হাজারদুয়ারির দক্ষিণ দরওয়াজা সংলগ্ন ঘণ্টাঘরে ফের বাজল ঘণ্টা ৷ আর এতে খুশি নবাব পরিবারের বর্তমান বংশধর সৈয়দ রেজা আলি মির্জা ৷
তিনি বলেন, "আমাদের পৌরপিতা ইন্দ্রজিৎ ধর এই ঘণ্টাঘর সংস্কারের কথা দিয়েছিলেন ৷ আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই ৷" বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁয়ের জামাই নবাব সুজাউদ্দিন মহম্মদ খাঁ 1725 সালে ঘণ্টা ঘড়ি স্থাপন করেন ৷ সোনা, রুপো, কাঁসা, পিতল-সহ 36টি ধাতু দিয়ে তৈরি বিশালাকার ঘণ্টাটি আনা হয়েছিল লন্ডন থেকে ৷
এক ঘণ্টা অন্তর রাতে-দিনে চব্বিশবার বাজত এই ঘণ্টা ৷ আর এই ঘণ্টা বাজানোর জন্য তিনটি শিফটে 3 জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল ৷ নবাবি আমলে প্রতিদিন সন্ধ্যা 6টায় ঘণ্টাঘরের নীচে বিউগল বাজিয়ে সূর্যাস্তের জানান দিত নবাবি সৈন্যদল ৷
নবাবি আমলের অবসানের পরেও বহুকাল বেজেছিল এই ঘণ্টা ৷ 1885 সালে শেষ বার ঘণ্টার ধ্বনি শুনেছিল নবাব তালুকের মানুষ ৷ তারপর থেকে নীরব হয়েই পড়েছিল নবাবি আমলের ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষ্য ৷
গত অক্টোবর মাসে ওই ঘণ্টাঘর সংস্কারে হাত দেয় মুর্শিদাবাদ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ৷ পুরাতত্ত্ব বিভাগের পরামর্শ ও নির্দেশ মেনেই সংস্কারের কাজ শুরু হয় ৷ মুর্শিদাবাদ পৌরসভার চেয়ারম্যান বিপ্লব ধর বলেন, "ইতিহাসের এমন এক নির্দশনকে বাঁচিয়ে রাখতেই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ৷ লালবাগের মানুষ অন্ত্যন্ত খুশি ৷ এখন থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে প্রতি ঘণ্টায় বাজবে ঘণ্টা ৷" মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, "ঘণ্টা ঘড়ির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক ৷ ঘণ্টার ধ্বনি আমাদের গর্বের ইতিহাস ফিরিয়ে দিয়েছে ৷ নতুন প্রজন্ম ফিরে পেল তাদের হারানো ঐতিহ্য ৷ মুর্শিদাবাদ এস্টেটের ম্যানাজার দেবব্রত রায় বলেন, "সাবেকি আদল বজায় রেখেই সংস্কার করা হয়েছে ৷ খরচাও বহন করেছে মুর্শিদাবাদ পৌরসভা ৷"
আরও পড়ুন: