মুর্শিদাবাদ, 1 অগস্ট: অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর ভালোবাসার টানে তিন দশক ধরে টিয়াদের পাহারা দিয়ে আসছেন মুর্শিদাবাদের নওদা ব্লকের চাঁদপুর গ্রামপঞ্চায়েতের কুঠিপাড়ার সেলিম মিঞা ওরফে চাঁদ মিঞা। যিনি এখন এলাকায় পাখিদের পাহারাদার নামেই পরিচিত।
আমতলা গোপালপুর ঘাট রাজ্য সড়কের একপাশে চাঁদ মিঞার একতলা পাকা বাড়ি। আর বাড়ির ঠিক বিপরীত পাশে রয়েছে বিশাল এক প্রাচীন কড়াই গাছ। ওই গাছের কোটরে কোটরে বাসা হাজার তিনেক লাল ঠোঁটের পাখির। বাড়ির ছাদে লাঠি হাতে বসে চোরাশিকারদের হাত থেকে টিয়াদের সন্তানের মতো আগলে রাখেন চাঁদ মিঞা। চোরা শিকারিদের কাছে ভিড়তে দেন না । গভীর রাত পর্যন্ত ছাদে বসেই পাহাড়া দেন। চোরা শিকারিদের পাখি ধরার ফাঁদ ভাঙতে ক্ষেতেও হানা দেন রোজ। এক দু'বছর নয়। তিন দশক এভাবেই টিয়াদের পাহাড়াদার হয়ে বেঁচে আছেন সেলিম মিঞা।
তিনি বলেন, "2000 সাল থেকে এই কাজ শুরু করেছি ৷ আমার এই কাজটা করতে ভালো লাগে ৷ এই গাছের নীচে বসেই অনেকসময় পাখিদের পাহাড়া দিই ৷ অনেক সময় চোরা শিকারিদের হাত থেকেও পাখিদের রক্ষা করি ৷ যতদন বাঁচব এইভাবেই পাখিদের পাহাড়া দিয়ে যাব ৷" পেশায় দর্জি চাঁদ মিঞা সংসারের হাল ছেড়ে দিয়েছেন ছেলেদের হাতে। প্রথম প্রথম রাত জেগে পাখিদের পাহাড়া দেওয়া মেনে নিতে পারেননি পরিবারের লোক। গ্রামের মানুষও পাখি পাগল বলে টিপ্পনি কাটত।
ছেলে সাদ্দাম মিঞা পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। রাজমিস্ত্রির কাজে বছরের বেশিরভাগ সময় ভিন রাজ্যে কাটান তিনি। সাদ্দাম মিঞা বলেন, "বাবার পাখির নেশাকে আমরা পাগলামি বলেই ভাবতাম। পরে বুঝলাম চোরা শিকারিদের হাত থেকে টিয়াদের বাঁচিয়ে রেখে এই গ্রামের মুখ উজ্জ্বল রেখেছেন বাবা। সবাই যখন বাবার প্রশংসা করে তখন খুব গর্ব হয়।"
আরও পড়ুন: আনন্দপুরে চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে 21 দিনের কন্যাসন্তানকে বিক্রি মায়ের ! গ্রেফতার 6
কুঠিবাড়ির কড়াই গাছে হাজার হাজার টিয়ার বাসা দেখতে এখন দূর দূরান্ত থেকে লোক আসে। নওদার তৃণমূল বিধায়ক সাহিনা মমতাজ খান জানিয়েছেন, বনদফতরের কাছে আবেদন করা হয়েছে, চাঁদ মিঞাকে যোগ্য সম্মান প্রদানের জন্য। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল জানিয়েছেন, টিয়াদের বাঁচাতে চাঁদ মিঞার উত্তরসূরি খোঁজার দায়িত্ব তাঁরা নিয়েছেন।