কান্দি, 26 মে: মুর্শিদাবাদের কান্দির বাসিন্দা তরণী ঘোষ ৷ দৃষ্টিহীন এই বৃদ্ধ নিজেকে প্রতিবন্ধী বলতে নারাজ ৷ কারণ, তাঁর গান ও মানুষের ভালোবাসার দৃষ্টিতে তিনি সমাজকে দেখেন ৷ তিনি পেশায় সঙ্গীত শিল্পী ৷ কান্দির বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষজনকে গান শোনান ৷ সেই গান শুনিয়ে যা উপার্জন হয়, তাই দিয়েই 6 জনের সংসার চলে তাঁর ৷ তিনি জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন ৷ কান্দি থানার অন্তর্গত জেমো চকপাড়ার বাসিন্দা তরণী ঘোষ ৷ বহু বছর ধরে এই কাজই করে যাচ্ছেন তিনি ৷ মানুষ তাঁকে চিনেও গিয়েছে ৷ আর তাঁর গানও ভালোবাসে লোকজন ৷
তরুণ বয়সে কলকাতা নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে গান-বাজনা শিখতেন তরণী ঘোষ ৷ কিন্তু, বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না ৷ তাই সেসব ছেড়ে কান্দির বাড়িতে ফিরে যান ৷ দৃষ্টিশক্তি না থাকায় অন্য কোনও কাজও করতে পারতেন না ৷ তাই হাতে লাঠি এবং কাঁধে একটি নাল ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন লোকজনকে গান শোনাতে ৷ সেই গান শুনিয়ে উপার্জন শুরু করেন ৷ ধীরে ধীরে মানুষ তাঁর গান পছন্দ করতে শুরু করে ৷ আজ তরণী ঘোষের গান সবার প্রিয় ৷ তাই সবাইকে গান শুনিয়ে যে উপার্জন হয়, তাতে 6 জনের সংসারে দু’বেলা খাবার জুটে যায় ৷
তরণী ঘোষের বাড়িতে স্ত্রী, 3 ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছেন ৷ ছেলেরা তেমন একটা আয় করেন না ৷ তাই তাঁর উপার্জনেই সংসার চলে ৷ তরণী ঘোষ জানান, অনেক মানুষ তাঁকে ভালোবাসে ৷ আর সেই ভালোবাসা থেকে পাওয়া মনের জোরে একরকম গান করেই জীবন অতিবাহিত করছেন ৷ সেই ভালোবাসার দৃষ্টিতে সমাজকে দেখেন তিনি ৷ তাই নিজেকে কখনও প্রতিবন্ধী মনে হয়নি তরণী ঘোষের ৷ মানুষ তাঁর কাছে যায় ৷ তিনিই মানুষের কাছে যান ৷ তাঁর গান শুনে মানুষের মধ্যে যে আনন্দের সঞ্চার হয় ৷ তাতে তিনিও খুশি হন বলে জানান তরণী ঘোষ ৷
আরও পড়ুন: সামজিক বয়কট উপেক্ষা করে সফল ভাওয়াইয়া শিল্পী এএসআই নজরুল ইসলাম
উল্লেখ্য, জীবনের এতগুলো বছর পেরিয়ে এলেও, তাঁর কোনও ভোটারকার্ড ছিল না ৷ তাই প্রতিবন্ধী ভাতা পেতেন না ৷ সম্প্রতি ভোটার কার্ড হয়েছে ৷ আশা করছেন খুব শীঘ্রই প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন ৷ এ বিষয়ে কান্দির আলো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার কৌশিক সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ওনাকে বহুবছর ধরে এইভাবে দেখছি ৷ উনি যে এই বয়সেও এমনভাবে গান করে জীবিকা অর্জন করছেন এটা শেখার বিষয় ৷ আগামী দিনে চেষ্টা করব যাতে ওনাকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গান করার সুযোগ করে দিতে পারি ৷ তাহলে ওনার অনেকটা আর্থিক সাহায্য হবে ৷’’