বহরমপুর, 13 অক্টোবর : ছোটবেলা থেকেই মা বাবা, আত্মীয় স্বজন এমনকি স্কুলের পাঠ্য বইয়ে আমরা পড়েছি, বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গোৎসব ৷ আর সেই সেরা উৎসবের আনন্দের অন্যতম সঙ্গী ঢাকি ও তাঁর ঢাক ৷ আর সেই ঢাকের তালে এবং ঝাঁ চকচকে উৎসবের মাঝে কোথাও যেন চাপা পড়ে যায় ওদের না-পাওয়াগুলি ৷ ওরা ঢাকি পরিবারের খুদেরা ৷ যাদের বাবা, কাকা ও দাদুর সঙ্গে কাঁসর হাতে পুজো মণ্ডপের এক কোণে দেখা যায় ৷ ঢাকের তালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে যাদের হাত ৷ কিন্তু, ছোট্ট দু’টো হাতে ঢাই কুর কুর ঢাকের তালের সঙ্গে সমানে কাঁস বাজিয়ে যায় ৷
এমন এক ছোট্ট খুদে সুমন বায়েন ৷ তার দাদু এবারের দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজানোর বায়না পেয়েছেন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের এক বাড়ির পুজোয় ৷ আর তাই বাড়ির খুদে সদস্য হিসেবে তাকেও দাদু ও বাবার সঙ্গে আসতে হয়েছে পুজোয় বায়না মেটাতে ৷ দাদু ও বাবার ঢাকের তালের সঙ্গে কাঁসরের তাল মেলায় সে ৷ আর দশটা বাচ্চার মতো দুর্গাপুজোয় নতুন জামা পরে ঠাকুর দেখতে বেরোয় না সুমনরা ৷ কারণ ওদের উপর থাকে পরিবারের বোঝা ৷ যদিও, ছোট্ট শিশুর মন চায় বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে ৷ মায়ের নিরাপদ আঁচলে লুকিয়ে যেতে ৷ কিন্তু, পরিবারের বোঝা যে বড় দায় ৷ তাই জোড়াতালি দেওয়া মলিন জামাকাপড় পরেই পুজোর ক’টা দিন কাঁসরে তাল ঠুকতে হয় সুমনকে ৷
আরও পড়ুন : Durga Puja Dhak Story: পুজোয় বায়না নেই, বিড়ি বাঁধছেন অশোকনগরের মহিলা ঢাকিরা
কী বলে সুমনের খুদে মন ? প্রশ্ন করায়, তার উত্তর, খেলতে ভাল লাগে ৷ পুজোর সময় কাঁসর বাজাতে তার মন মোটেও মানে না ৷ বাবা-মা বলেছে, তাই সে দাদুর হাত ধরে চলে এসেছে কাঁসর বাঁজাতে ৷ এ নিয়ে সুমনের দাদুকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তাঁর জবাব, পুজোর সময় ঢাকিদের মরশুম ৷ এই সময় কাঁসর হাতে বাচ্চাদের আনলে, দু’টো পয়সা বেশি রোজগার হয় ৷ কিন্তু, সুমনের শৈশব ? যে শৈশবে আর পাঁচটা বাচ্চার মতো, হেসে খেলে আনন্দ করে, পড়াশনার করার সময় ৷ সেই শৈশবের কী হবে ? সেখানেও কথা বলে দারিদ্র ৷ জবাব আসে, এখন না বাজালে সারা বছর খাবার জুটবে না ৷
আরও পড়ুন : Durga Puja : শোলা শিল্পে মন্দা, পুজোর মরশুমেও রোজগারে টান চন্দ্রকোণার মালাকারদের
তাই, সুমনের চোখের সামনে মায়ের হাত ধরে ওর বয়সী বা ওর থেকে কিছু বড় বাচ্চারা নতুন জামা পরে আনন্দ করে ৷ কিন্তু, সুমনদের সেই আনন্দ করার অধিকার কেড়ে নিয়েছে তার দারিদ্রতা ৷ জন্ম সূত্রে ঢাক ও কাঁসরের তাল ও ছন্দ ওদের মধ্যে ৷ কোনও প্রকার গুরুকরণের প্রয়োজন পড়ে না ৷ তাই স্পষ্টভাবে কথা বলতে শেখার আগেই, পরিবার পালনের দায়িত্ব ওদের কাঁধে দিয়ে দেওয়া হয় ৷ আর এভাবে প্রতিবছর বাঙালির সেরা উৎসবের মুহূর্তগুলি কেটে যায় দায়িত্ব পালনের বোঝায় ৷ সেই সঙ্গে পেরিয়ে যায় শৈশবও ৷