বহরমপুর, 30 জুন : কি-শেল্ফে ঝুলছে সারি সারি চাবি ৷ হোটেলের মেইন গেট খোলা থাকলেও বাকি সব দরজাতেই তালা ৷ পর্যটক নেই ৷ কিন্তু, কাজে আসতে হচ্ছে কর্মচারীদের ৷ পর্যটক না থাকলেও সারাক্ষণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হচ্ছে হোটেল চত্বর ৷ পর্যটনকেন্দ্রগুলি না খোলায় পর্যটকদেরও দেখা নেই ৷ দেশজুড়ে কোরোনা আতঙ্ক এখনও কাটেনি ৷ ফলে পর্যটকদের পা পড়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ পর্যটক না থাকলেও হোটেল মালিকদের পকেট থেকেই খরচ করতে হচ্ছে ৷ দিতে হচ্ছে কর্মচারীদের বেতন, ইলেকট্রিক বিল ৷ হোটেল চত্বর স্যানিটাইজ় করার খরচও জোগাতে হচ্ছে নিজেদের ৷
8 জুন হোটেল ও রেস্তরাঁগুলি খোলার অনুমোদন দিয়েছিল সরকার ৷ কিন্তু, পর্যটন কেন্দ্রগুলি এখনও চালু হয়নি ৷ চালু হয়নি ট্রেন পরিষেবাও ৷ তাই ভিনরাজ্যের বা ভিনজেলার পর্যটকরা আসতে পারছেন না ৷ যে কারণে অনুমোদন মিললেও পর্যটকের অভাবে বন্ধই পড়ে রয়েছে হোটেলগুলি ৷
লালবাগ শহরের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, "আতঙ্ক কাটেনি ৷ পর্যটকরাও আসতে চাইছেন না ৷ পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি ধস নেমেছে অনুসারী শিল্পগুলিতেও ৷ সরকারি কোনও সাহায্য বা সাহায্যের আশ্বাসও এখনও মেলেনি ৷ প্রতি বছর কমপক্ষে 18-20 লাখ পর্যটক আসেন মুর্শিদাবাদে ৷ একদিনে সব পর্যটনস্থানগুলি ঘোরা সম্ভব নয় ৷ হাতে দু-তিনদিন সময় নিয়েই ঘুরতে হয় ৷ তাই পর্যটকদের রাত্রিবাসের প্রয়োজন পড়ে ৷ সেই হিসেবেই পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে ঘরে জেলাজুড়ে প্রায় 600টি হোটেল চলে ৷" এখন অধিকাংশ হোটেলই বন্ধ ৷ যে কয়েকটি খুলছে সেগুলিও পর্যটকের অভাবে খাঁ খাঁ করছে ৷
হোটেলের শেফ শম্ভু পায়রা বলেন, "পর্যটকদের আশায় আমরা হোটেল খুলে রেখেছি ৷ তাঁদের নিরাপত্তার দিকে নজর রেখে প্রতিদিন তিনবার করে স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে ৷ কবে সব কিছু স্বাভাবিক হবে কেউ জানি না ৷" কার্যত 2019 সালের ডিসেম্বর মাস থেকেই বন্ধ ছিল হোটেল ব্যবসা ৷ মাঝে দোলের সময় কয়েকদিন পর্যটকরা হাসি ফিরিয়ে ছিল হোটেল ব্যবসায়ীদের মুখে ৷ কিন্তু, তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো লকডাউন আর মন্দা কাটিয়ে উঠতে দেয়নি ৷ বন্ধ পর্যটকদের আসা ৷ তবে, সব স্বাভাবিক হওয়ার আশাতেই রয়েছেন ব্যবসায়ীরা ৷
হোটেল মালিক সহদেব সাহা বলেন, "হোটেল খুলে রেখেছি ৷ কিন্তু, পর্যটক নেই ৷ কবে সব স্বাভাবিক হবে, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছি ৷" হতাশার মেঘ জমেছে কর্মচারীদের মনেও ৷ তাঁদের আশঙ্কা হোটেল বন্ধ হলে তাঁদের রুটি-রুজিও বন্ধ হয়ে যাবে ৷ একটি হোটেলের কর্মচারী বাপি আলম বলেন, "পর্যটকরা না এলে কে থাকবে ? জেলার মানুষ তো আর কেউ শখ করে থাকতে আসবে না ৷ বাইরে থেকে যাঁরা আসেন, তাঁরাই থাকেন ৷ কিন্তু, কোরোনা আতঙ্কে তাঁদের আসা বন্ধ হয়েছে ৷"