মালদা, 28 এপ্রিল : লকডাউন চলছে৷ চারদিকে সব বন্ধ৷ ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতেও রক্তের আকাল৷ কোরোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই বন্ধ হয়ে রয়েছে রক্তদান শিবিরগুলি৷ প্রায় শূন্য হয়ে রয়েছে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক৷ এদিকে শুরু হয়ে গিয়েছে রমজান মাস৷ এই সময় মুসলিমরা সাধারণত রক্তদান করেন না৷ কিন্তু আর্তকে বাঁচাতে আজ রোজার উপোস ভেঙে রক্তদান করে এক বৃদ্ধার প্রাণ বাঁচালেন এক যুবক৷ তাঁর এই সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানাচ্ছে সবাই৷
উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ শহরের স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণা দাশগুপ্ত ৷ বয়স ৭০ বছর ৷ তাঁর ডায়ালিসিস চলে৷ আজ তাঁকে মালদা শহরের একটি নার্সিং হোমে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন৷ চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, তাঁর এই মুহূর্তে বি পজিটিভ গ্রুপের দুই ইউনিট রক্তের প্রয়োজন৷ কিন্তু লকডাউনের মধ্যে রক্ত মিলবে কোথায়? পরিবারের লোকজন ছুটে যায় মালদা মেডিকেলের ব্লাডব্যাঙ্ককে ৷ সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, রক্ত নেই৷ ডোনার নিয়ে এসে রক্ত নিতে হবে৷ একথা শুনে চরম সমস্যায় পড়ে যায় কৃষ্ণাদেবীর বাড়ির লোকজন৷ চারদিকে খোঁজখবর চালিয়ে পরিচিত একজনের খোঁজ পায় তারা৷ কিন্তু আরেকজন কোথায় পাওয়া যাবে? এই সংস্থারই এক সদস্য রোজার উপোস ভেঙে রক্ত দিয়ে কৃষ্ণাদেবীর জীবনদান করেন৷
কৃষ্ণাদেবীর ছেলে, পেশায় শিক্ষক সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলেন, “ডায়ালিসিস চলতে চলতে মায়ের হিমোগ্লোবিন অসম্ভব কমে যায়৷ আমরা সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করি৷ তিনি পরীক্ষা করে বলেন, এখনই মা’কে দুই ইউনিট রক্ত দিতে হবে৷ মালদায় আমাদের একজন পরিচিত রয়েছেন৷ তাঁর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ৷ তিনি রক্ত দিতে সম্মত হন৷ কিন্তু আরেক ইউনিট রক্ত কোথায় থেকে পাব তা চিন্তায় পড়ে যাই৷ শেষ পর্যন্ত রায়গঞ্জের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে আমরা এখানকার একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করি৷ এক মুসলিম যুবক রোজার উপোস ভেঙে আমার মা’কে রক্ত দিয়েছেন৷ মানুষ হিসাবে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন৷ তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই৷”
রক্ত দান করে খুশি মইদুল । মইদুল একটি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিয়ের ছাত্র৷ লকডাউনের মুখে বাড়ি ফিরে এসেছেন৷ তিনি বলেন, “রমজান মাস চলছে৷ একজন মুসলমান হিসাবে রোজার উপোস রেখেছিলাম৷ তার মধ্যে ফোন পেলাম, এক বৃদ্ধার জীবন সংকট৷ এই মুহূর্তে আমার গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন৷ আর কিছু ভাবিনি৷ বৃষ্টি মাথায় নিয়েই চলে এসেছি মেডিকেলে৷ আগে মানুষের জীবন, ধর্ম অনেক পরে৷ মানুষ বাঁচলেই ধর্ম বাঁচবে৷ রক্তদান করা আমি নিজের কর্তব্য মনে করি৷”
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির কর্তা আলমগির খান বলেন, “মালদা মেডিকেলের ব্লাডব্যাঙ্কে এখন প্রবল রক্ত সংকট চলছে৷ এই ব্লাডব্যাঙ্ক থেকেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ শহরের সব নার্সিং হোমে রক্ত যায়৷ লকডাউনের মধ্যে আমরা বড় কোনও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে পারছি না৷ মাঝেমধ্যে কিছু মানুষকে ব্লাডব্যাঙ্কে এসে রক্ত দিচ্ছেন৷ আজ হঠাৎ সুদীপ্তবাবুর ফোন পাই৷ তাঁর মায়ের রক্ত প্রয়োজন৷ তাঁর বি পজিটিভ গ্রুপের রক্ত৷ তাই মইদুলকে ডেকে পাঠাই৷ আমাদের ভালো লাগছে, আজ আমরা কৃষ্ণাদেবীর পাশে দাঁড়াতে পেরেছি৷ তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি৷ তবে আমরা সবার কাছে আবেদন জানাচ্ছি, বিপদের এই সময় সবাই যেন একে অন্যের পাশে এসে দাঁড়ায়৷ সবাই যেন রক্তদানে এগিয়ে আসে৷”