সাগরদিঘি (মুর্শিদাবাদ), 2 মার্চ: 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল বাম-কংগ্রেস জোটকে (Left-Congress Alliance) ৷ প্রায় দু’বছর পর মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি বিধানসভা আসনের উপ নির্বাচন জোটের সেই ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিল ৷ চূড়ান্ত ফল ঘোষণা না হলেও ওই আসনে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীর জয় প্রায় নিশ্চিত ৷ যা দেখে রীতিমতো উৎফুল্ল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী (Congress MP Adhir Ranjan Chowdhury) ৷ বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই তিনি জানিয়ে দিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ও তৃণমূল কংগ্রেসকে (Trinamool Congress) যে পরাজিত করা যায়, তা সারা বাংলাকে দেখিয়ে দিল সাগরদিঘি ৷
মুর্শিদাবাদ বরাবরই কংগ্রেসের শক্তঘাঁটি ৷ সেই সঙ্গে ওই রাজ্যে বামেদের আধিপত্যও ছিল চোখে পড়ার মতো ৷ 2011 সালের বিধানসভা নির্বাচনে সারা বাংলায় ঘাসফুল ফুটলেও মুর্শিদাবাদে সেভাবে সমর্থন পায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ৷ একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল সাগরদিঘি ৷ ওই কেন্দ্র থেকে জিতে মন্ত্রী হয়েছিলেন সুব্রত সাহা ৷ তার পর সময় যত এগিয়েছে, ততই বাংলার অন্যান্য অংশের মতো মুর্শিদাবাদেও ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে বাম ও কংগ্রস ৷ 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে অধীর শুধু নিজের বহরমপুর আসন ধরে রাখতে পারলেও 2021 সালে জেলায় একটিও আসন দলকে জেতাতে পারেননি লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা ৷
নবাবের জেলায় তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধি তো হয়েইছিল ৷ সঙ্গে চওড়া হচ্ছিল বিজেপির ছায়া ৷ সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Elections 2023) ৷ সেখানে বাম-কংগ্রেসের অবস্থা কী হবে, তা নিয়ে জেলার রাজনৈতিক মহলে বিস্তর চর্চা হয়েছে ৷ আর এই পরিস্থিতিতেই এসে পড়ে সাগরদিঘি বিধানসভা আসনের উপ নির্বাচন ৷ সুব্রত সাহার প্রয়াণে গত 27 ফেব্রুয়ারি ওই কেন্দ্রে উপ নির্বাচন হয় ৷ যা পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাম-কংগ্রেসের কাছে কার্যত ‘পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার’ সামিল হল ৷
দীর্ঘদিনের রাজনীতিক অধীর চৌধুরীও সেটা বিলক্ষণ বোঝেন ৷ তাই এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সেই বার্তাই বারবার দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি ৷ বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পরাজিত করা যায় ৷ ওদের হাতে পুলিশ, ওদের হাতে মস্তান, ওদের হাতে সব ৷ আর আমাদের পুঁজি মানুষের আশীর্বাদ ও দোয়া৷ ফারাক এখানেই ৷’’ একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলকে পরাজিত করা যায়, সেই বার্তা সারা বাংলায় পৌঁছে দিল সাগরদিঘী ৷’’
তিনি আরও জানান, এই নির্বাচনে কংগ্রেস ও বাম এক হয়েছিল ৷ কিন্তু দুর্নীতির অপরাধের শাস্তি তৃণমূলকে দিতে ঘাসফুল শিবিরেরও অনেকে কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে ৷ বিজেপি (BJP) জিততে পারবে না ধরে নিয়ে তাদেরও একটা অংশ কংগ্রেসের পাশে ছিল বলে ধারণা বহরমপুরের সাংসদের ৷ তাই তিনি মনে করেন, প্রথমে কংগ্রেস ও পরে জোট প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়লেও বাইরন বিশ্বাস আসলে মানুষের প্রার্থী ছিলেন ৷ আর এদিন যে ইতিহাস তৈরি হল, তা গড়লেন সাগরদিঘির সাধারণ মানুষ ৷ তাই ওই এলাকার সব সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি ৷
আরও পড়ুন: সাগরদিঘিতে এগোচ্ছে 'হাত', জয় নিয়ে নিশ্চিত বায়রন বিশ্বাস; কংগ্রেস কার্যালয়ে অকাল হোলি