ভগবানগোলা, 30 নভেম্বর: সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বেহাল দশা ফের সামনে এল। রোগী দেখছেন অ্যাম্বুলেন্স চালক । চিকিৎসক থাকলেও অ্যাম্বুলেন্স চালকই নাকি রোগীদের কাছে 'ডাক্তার' ৷ মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থানার কানাপুকুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই ছবি সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসল স্বাাস্থ্য দফতর। ইটিভি ভারতের তরফে ঘটনাটি জানানো হলে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন স্বাস্থ্য দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতাপ শেখ ওরফে আলিম কানাপুকুর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেস চালক । দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী পদে এই হাসপাতালেই অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেন । বছর দু'য়েক আগে প্রতাপের ছেলে হাসপাতাল লাগোয়া প্যাথোলজিক্যাল ল্যাব খুলেছে । আর তারপর থেকেই প্রতাপের 'পদোন্নতি' হয়েছে কানাপুকুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে । তিনি এখন রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা করা থেকে আউটডোর বিভাগের যাবতীয় কাজ করেন। প্রতাপের দাবি, চিকিৎসকদের কথায় তিনি এই কাজ করেন । বিনিময়ে হাসপাতাল থেকে তাঁকে পারিশ্রমিকও দেওয়া হয় । প্রতাপ শেখ বলেন, "ছেলের ল্যাব আছে । তাই ইঞ্জেকশন দেওয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষার জন্য রক্ত টানা, ব্যান্ডেজ করা সবই পারি । চিকিৎসকরা সাহায্য চাইলে সব করে দিই।"
বছর দু'য়েক থেকে এলাকার মানুষ প্রতাপকে চিকিৎসক হিসাবেই জেনে আসছে । কারণ কানাপুকুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আউটডোর বিভাগ এখন প্রতাপের দখলে । রোগীদের অভিযোগ, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করাতে এসে গুনতে হয় ট্যাঁকের কড়ি । স্থানীয় বাসিন্দা ফুলবানু বিবি বলেন, "মেয়ের চিকিৎসা করানোর জন্য হাসপাতালে এনে রক্ত পরীক্ষা-সহ যাবতীয় পরীক্ষার খরচ দিতে হয়েছে । তারও আগে দালালদের হাতে পঞ্চাশ টাকা দিতে হয়েছে ।" কানাপুকুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বর্তমানে চিকিৎসক (এমও) হিসাবে রয়েছেন ইঞ্জামুল হক। সরকারি চিকিৎসক হলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসনে না তিনি ৷ নিজের চেম্বার নিয়েই ব্যস্ত থাকেন । যদিও এই বিষয়ে ইঞ্জামুল হকের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
এদিকে রাজ্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই বেহাল চিত্র সামনে আসতেই বিরোধীরা রেরে করে উঠেছে ৷ যদিও শাসকদলের জবাব, এটা নিছক একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা । এর সঙ্গে রাজ্য সরকারকে জোড়া উচিত নয় । কিছুদিন ধরেই কানাপুকুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দালালচক্র অতি সক্রিয় হওয়ার খবর উঠেছিল ৷ স্থানীয়দের দাবি, চিকিৎসা পরিষেবা পেতে দালালদের হাত ধরেই যেতে হয় । এমনকী সরকারি খরচে বিনা পয়সার অ্যাম্বুলেন্স পেতেও ট্যাঁকের কড়ি গুনতে হয় রোগীর পরিজনদের ।
ছোট খাটো ব্যান্ডেজ করতেও লাগে সেলামি । এই দালালচক্রের অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের । সম্প্রতি দালাল চক্রের বিরুদ্ধে সরব হতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা । অ্যাম্বুলেন্স চালককে চিকিৎসকের ভূমিকায় দেখার পর এই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেল ৷ কিন্তু সরকারি স্বাস্থ্য়কেন্দ্রে চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও অ্যাম্বুলেন্স চালক কেন রোগীদের পরিষেবা দেবেন ? আর রোগীদের থেকে টাকাই বা নেবেন কেন ? এই ছবি এলাকার কোনও একজন ক্যামেরাবন্দি করে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেই হইচই পড়ে গিয়েছে ।
এই বিষয়ে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা আতিক শেখ বলেন, "রাজ্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা যে ভেঙে পড়েছে এই ঘটনা তার অন্যতম প্রমাণ। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসতে হয় দালালের হাত ধরে । আর চিকিৎসা করে অ্যাম্বুলেন্স চালক । এর থেকে নিন্দনীয় ঘটনা বিরল ।"
দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সভাপতি শাখারভ সরকারের কথায়,"শিক্ষা থেকে খাদ্য, সব দফতরই দুর্নীতিতে ছেয়ে গিয়েছে । রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও দুর্নীতির আঁতুড়ঘর হয়ে গিয়েছে ।" যদিও বিরোধীদের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন শাসকদলের প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন জেলা তৃণমূল সভাপতি অশোক দাস । তিনি বলেন,"সরকারকে কালিমালিপ্ত করার এটা বিরোধীদের নয়া কৌশল ।"
আরও পড়ুন :
1 বেহাল দশা সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের, জমে রয়েছে আবর্জনার স্তূপ
2 শিশুকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ভ্যাকসিন, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের থানায়
3 একই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফের ভুল ইঞ্জেকশন! দেড় মাসের শিশুর মৃত্যুতে ইনচার্জকে তালাবন্দি স্থানীয়দের