মালদা, 10 জুলাই : দিনভর প্রেমিকের বাড়ির সামনে ধরনায় বসেও লাভ হল না কোনও ৷ শেষমেশ অন্য মেয়ের সঙ্গে বিয়ে সারলেন প্রেমিক ৷ মাঝখান থেকে এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার হতে হল প্রেমিকাকে ৷ পরে পরিবারের সদস্যরা গিয়ে জামিনে মুক্ত করান তাঁকে ৷ ঘটনা ঘিরে শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক দীর্ঘ নাটকের সাক্ষী থাকলেন মালদার চাঁচলের লালগঞ্জের বাসিন্দারা ৷
ধরনায় বসা তরুণীর দাবি, ঘটনার সূত্রপাত বছর আটেক আগে ৷ লালগঞ্জের বাসিন্দা ওই তরুণী তখন নেহাতই নাবালিকা ৷ সেই সময়েই ফোনালাপ শুরু হয় এলাকারই এক কিশোরের সঙ্গে ৷ শীঘ্রই সেই ফোনালাপের উত্তরণ ঘটে ৷ শুরু হয় প্রেমালাপ ৷ এর কয়েক বছর পর কাজের খোঁজ ভিন রাজ্য়ে পাড়ি দেন প্রেমিকবর ৷ তখন তিনি তরুণ ৷ তরুণীর দাবি, প্রেমিক পুরুষটি যখনই বাড়ি ফিরতেন, দেখা হত দু’জনের ৷ নিভৃতে মেলামেশাও চলত ৷ এমনকী, তাঁকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতেও যেতেন তরুণ ৷ কিন্তু গোল বাধে এরপর ৷ প্রেমিকের কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখেন প্রেমিকা ৷ অভিযোগ, তাতেই বেঁকে বসেন ওই তরুণ ৷ এই নিয়ে দুই বাড়ির মধ্যে ঝামেলাও শুরু হয় ৷
আরও পড়ুন : স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে প্রেমিকের বাড়ির সামনে ধরনা তরুণীর
মেয়েটির দাবি, গত বৃহস্পতিবার তাঁকে ডেকে পাঠান প্রেমিক ৷ তরুণীকে নিজের বাড়িতে আসতে বলেন তিনি ৷ কিন্তু শুক্রবারই পাল্টে যায় প্রেক্ষাপট ৷ প্রেমিকাকে আবারও ফোন করেন প্রেমিক ৷ জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে ওই তরুণীকে বিয়ে করা সম্ভব নয় ৷ এরপরই লোকমুখে তরুণী জানতে পারেন, তাঁকে ধোকা দিয়ে অন্য মেয়ের সঙ্গে সংসার পাতার ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছেন প্রেমিক ৷ শুক্রবারই বিয়ে সারতে সেই অন্য মেয়ের বাড়ি যাচ্ছেন তিনি !
এরপর আর স্থির থাকতে পারেননি তরুণী ৷ সটান হাজির হন প্রেমিকের বাড়ির সামনে ৷ স্ত্রী মর্যাদা পেতে বসে পড়েন ধরনায় ৷ ব্লেড দিয়ে নিজের হাতও কেটে ফেলেন ৷ এমনকী, প্রেমিকের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মারধরেরও অভিযোগ তোলেন তিনি ৷ যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত তরুণের বাবা-মা ৷ তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন, এতদিন কেন বিয়ের দাবি জানাননি ওই তরুণী ? কেনই বা ছেলের বিয়ের বাড়ি বয়ে এসে ঝামেলা করছেন তিনি ?
আরও পড়ুন : সম্পর্ক ভাঙতে চাওয়ায় প্রেমিকের বুকে ব্লেড চালাল যুবতি
এলাকাবাসীর কথায় অবশ্য অন্য সুর ৷ তাঁরা জানাচ্ছেন, তরুণীর অভিযোগ ভিত্তিহীন নয় মোটেই ৷ সত্যিই এই দু’জনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক ছিল ৷ এঁদের একসঙ্গে নানা জায়গায় ঘুরতেও দেখা গিয়েছে ৷ এমনকী, এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ঝামেলা শুরু হওয়ায় একবার গ্রাম্য সালিশিও বসে ৷ সেখানে স্থির হয়, ছেলে-মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলেই তাঁদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে ৷ কিন্তু এরই মধ্যে শুক্রবার ছেলেটির বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যায় ৷ সেকথা তরুণী বা তাঁর বাড়ির সদস্যরা কেউই জানতেন না ৷
এদিকে, তরুণী ধরনায় বসতেই তাঁকে ঘিরে ভিড় জমে যায় ৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় চাঁচল থানার পুলিশ ৷ এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে তরুণীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় ৷ পরে থানায় গিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা ৷ অন্যদিকে, পথের কাঁটা বিদেয় হতেই অন্য মেয়ের ঘরে বিয়ে সারতে যান তরুণ ৷ পুরনো সম্পর্ক ঝেড়ে ফেলে শুরু করেন নতুন সংসার ৷