মালদা, 29 অক্টোবর: মঞ্চে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ভাই তথা জয়হিন্দ বাহিনীর রাজ্য সভাপতি কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়
(Kartik Banerjee) ৷ গ্রাম বাংলার রাশ হাতে রাখতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে জেতানোর আহ্বান জানাতে তিনি মালদা সফরে এসেছেন ৷ সেই মঞ্চেই দলের জেলা সভাপতি ও চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে সরব হলেন পুরোনো তৃণমূল নেতারা (TMC Workers) ৷
এর জন্য তাঁরা দলকে এক মাস সময় পর্যন্ত দিয়েছেন ৷ আদি নেতাদের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ আর পুরোটাই হল প্রকাশ্যে ৷ তার সাক্ষী থাকলেন মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রও ৷ ঠিক সেই সময় খানিক দূরে জেলা তৃণমূলের তরফে একটি যোগদান সভার আয়োজন ছিল ৷ সেখানে ছিলেন দলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি, চেয়ারম্যান সমর মুখোপাধ্যায়-সহ ব্লক তৃণমূলের নব্য নেতৃত্ব ৷
জন্মলগ্ন থেকেই মালদা জেলা তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলে আসছে ৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখেও তা বহাল ৷ বিশেষ করে রতুয়ার দুটি ব্লকে দলীয় সংঘাত প্রকট ৷ গত বিধানসভা ভোটে রতুয়া কেন্দ্রে সমর মুখোপাধ্যায়ের জয় এবং পরবর্তী সময়ে তাঁকে জেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠতে শুরু করে ৷ তার কিছু কারণও সামনে এনেছেন বিক্ষুব্ধরা ৷ তাঁরা জানান, মৌসম নুরকে সরিয়ে আবদুর রহিম বক্সিকে দলের জেলা সভাপতি করার পর তাঁর সঙ্গে সমরের সখ্য গড়ে ওঠে ৷ দু'জন নিজেদের মতো দল চালাতে শুরু করেন ৷ পুরোনোরা তাঁদের কাছে ব্রাত্য হয়ে যান ৷
রাজ্য সভাপতি কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে সভার আয়োজন করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তৈরি জয়হিন্দ বাহিনীর মালদা শাখা ৷ সেই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মহম্মদ হেসামুদ্দিন বলেন, "কার্তিকবাবুর মাধ্যমে আমরা জানিয়ে দিতে চাই, বর্তমান জেলা সভাপতি আর চেয়ারম্যানকে দ্রুত বহিষ্কার না করা হলে আমরা কী করব, তা একমাস পরে ভাবব ৷ এঁরা দু'জন জেলা তৃণমূলটাকে বিক্রি করে দিতে চান ৷ এঁরা টাকা ছাড়া আর কিছু বোঝে না ৷ দুর্নীতিতে একেবারে ডুবে গিয়েছে ৷ এঁদের বহিষ্কার না করা হলে জেলায় দলের ফল ভালো হতে পারে না ৷ সত্যি কথা বলতে আমার দ্বিধা নেই ৷ আমি এই চেয়ারম্যানকে ছাড়ব না ৷"
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ও কার্যত বিক্ষুব্ধদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "দলের পুরোনো কর্মীদের অনেকের মধ্যেই ক্ষোভ রয়েছে, তাঁরা সম্মান পাচ্ছেন না ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন, পুরোনো কর্মীদের সামনে এনে কীভাবে দলটাকে বাঁচাতে হয় ৷ যারা পুরোনোদের ভুলে যায়, তারা ভুল করে ৷ পুরোনোর উপর ভিত্তি করেই ভবিষ্যৎ তৈরি হয় ৷ অত সহজে তৃণমূলের ক্ষতি করা যায় না ৷"
আরও পড়ুন: ইটভাটার দখল নিয়ে সংঘর্ষ দুই প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার, ভোটের আগে অস্বস্তি শাসক দলে
এদিকে ওই একই সময় গতকাল সামসীতে যোগদান সভার আয়োজন করেছিল জেলা তৃণমূল ৷ সেখানে কংগ্রেস ও সিপিএম ছেড়ে বেশ কয়েকজন তৃণমূলে যোগ দেন ৷ পরে বাটনার সভা নিয়ে সমর মুখোপাধ্যায় বলেন, "বাটনা এলাকায় জয়হিন্দ বাহিনী একটা সভা করেছে ৷ তাঁরা আমার বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করেছে ৷ দলের ভাবমূর্তি খারাপ করার চেষ্টা করছে ৷ এই জয়হিন্দ বাহিনীকেই দল থেকে ছুড়ে ফেলতে হবে ৷" অন্যদিকে জেলা তৃণমূল সভাপতি আবদুর রহিম বকসি বলেন, "জয়হিন্দ বাহিনী দলের অনুমোদন ছাড়াই বাটনায় সভা করেছে ৷ দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ৷"