মালদা, 23 অক্টোবর: দুই মেয়ের হাতে পুজো পাচ্ছেন মা ৷ সেই ছবি ধরা পড়েছে বামনগোলা ব্লকের পাকুয়াহাট এলাকার রায়বাড়িতে ৷ এবারই প্রথম মালদা জেলায় কোনও দুর্গাপুজো করছেন মহিলা পুরোহিতরা ৷ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীশক্তির আরেক অধ্যায়ের সূচনা হল এই প্রত্যন্ত এক এলাকায় ৷ পাকুয়াহাটের রায়বাড়িতে গত ছ’বছর ধরে পুজো হচ্ছে ৷ এবার পরিবারের সদস্যরা পুজো করবেন না বলে ঠিক করেছিলেন ৷ শেষ মুহূর্তে মত বদলে পুজোর আয়োজন করেন তাঁরা ৷ কিন্তু অন্য সবকিছুর ব্যবস্থা করতে পারলেও পুরোহিত ঠিক করতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা ৷ তখনই স্থানীয় এক শিক্ষকের মাধ্যমে তাঁরা দুই মহিলা পুরোহিত দিয়ে মায়ের পুজো করানোর সিদ্ধান্ত নেন ৷
মহিলা পুরোহিতদের দিয়ে পুজো করানোর এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে রায়বাড়ির সদস্য শুক্লা বিশ্বাস রায় বলেন,“আসলে আমাদের বাড়িতে লোকবলের অভাব ৷ তাই এবার পুজো করব না বলে ঠিক করেছিলাম ৷ হঠাৎ করেই মত পরিবর্তন করি ৷ আমরা পুজো করব না বলে আমাদের পুরোহিত অন্য জায়গায় পুজোর কাজ ধরে নিয়েছিলেন ৷ শেষ পর্যন্ত আমাদের এক দাদা খোঁজ দেন এই মহিলা পুরোহিতদের ৷ কিন্তু তাঁরা দুর্গাপুজো আগে করেননি ৷ শেষ পর্যন্ত আমরা মহিলাদের দিয়েই পুজো করানোর সিদ্ধান্ত নিই ৷ মেয়েরা আজ চাঁদে পৌঁছে যাচ্ছে, আর পুজো করতে পারবে না ! পরিবারের তরফে কেউ কোনও বাধা দেয়নি ৷ দেবী হলেন মা, আর মেয়েরাই তাঁর পুজো করছে ৷ এতে আপত্তি কোথায় ৷"
দুই মহিলা পুরোহিতের কেউ ব্রাহ্মণ নন ৷ একজনের নাম সীমা হালদার বাইন, আরেকজন টুম্পারানি মণ্ডল ৷ তাঁরা ভারত সেবাশ্রম সংঘের অধীনস্থ নটরাজ সংস্থার মাধ্যমে পুজোর রীতি ও আচারের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৷ সীমাদেবী জানান, এর আগে তাঁরা অন্য পুজো করেছেন ৷ কিন্তু দুর্গা পুজো এই প্রথম ৷ এই পরিবারের সদস্যরা তাঁদের সবরকম সহযোগিতা করেছেন ৷ সমস্ত রীতি মেনেই পুজো হচ্ছে ৷ এই মহিলা পুরোহিতরা জানিয়েছেন, পুজো করার ক্ষেত্রে তাঁরা কারও থেকে কোনওরকম বাধার সম্মুখীন হননি ৷
আরও পড়ুন: বেহালায় সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বড় বাড়িতে নবমীতে কুমারী পুজো
আরেক পুরোহিত টুম্পারানি মণ্ডলের কথায়, “নটরাজ সংস্থা আমাদের পুজো করার সমস্ত প্রশিক্ষণ দিয়েছে ৷ ব্রাহ্মণরাই আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ৷ এই পরিবারের লোকজন আমাদের খুব সাহায্য করছেন ৷ ষষ্ঠীর দিন একটু নার্ভাস ছিলাম ৷ তবে এখন আর সেসব নেই ৷ প্রথমবার দুর্গাপুজো করে আমরাও ভীষণ উত্তেজিত ৷"