মালদা, 30 সেপ্টেম্বর : বিয়ে হয়েছিল 22 বছর আগে । পুরাতন মালদার মুচিয়া গ্রামের মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর হাত ধরে চলে আসেন পুরাতন মালদার পৌরসভার 5 নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলি এলাকায় । স্বামী অনিল সরকার মৃৎশিল্পী ৷ তথাপি স্বামীর ঘরে এসেই বিপুল আর্থিক অনটনে পড়েন যমুনা দেবী । স্বামী যা আয় করতেন, তাতে দু'জনের সংসারই চলত না । এরই মধ্যে কোলে আসে দুটি মেয়ে একটি ছেলে । এরপর বাধ্য হয়ে হাঁড়ি-হাতা-খুন্তির সঙ্গে হাতে মাটি তুলে নেন যমুনা দেবী । স্বামীর কাছেই শেখা শুরু করেন প্রতিমা গড়ার কাজ । কাজ শিখতে লেগে যায় পাক্কা পাঁচ বছর । একটা সময়ে পুরোদস্তুর পেশাদার মৃৎশিল্পী হয়ে ওঠেন এই গৃহবধূ ।
পুরাতন মালদার রসোপুল এলাকায় ছোটো কারখানা যমুনা দেবীর । এবার চারটি মাতৃ মূর্তির বরাত পেয়েছেন । কাজে হাতও দিয়েছেন । কিন্তু বাদ সেধেছে আশ্বিনের বৃষ্টি । তারই মধ্যে সুযোগ পেলেই খড়ের কাঠামোয় দিচ্ছেন মাটির প্রলেপ । সময় মতো প্রতিমা পাঠাতে হবে যে !
খানিক ইতস্তত করেও যমুনা দেবী বলেন, "বিয়ের পর স্বামীর আর্থিক পরিস্থিতি ভালো ছিল না । উনি ছোটো থেকেই মূর্তি গড়েন । অন্য কাজ জানেন না । এদিকে আমাদের তিন ছেলেমেয়ে । কীভাবে সংসার চলবে, ভেবে আকুল হতাম । তখনই ঠিক করি, আমিও প্রতিমা গড়ার কাজ করব ।"
স্বামীর কাছেই মূর্তি গড়ার কাজে হাত পাকান যমুনা দেবী ৷ কাজ শিখতে লাগে পাক্কা পাঁচটা বছর । আজ তিনিই কাঠামো তৈরি থেকে চক্ষুদান অবধি পারঙ্গম ৷ শুধুই দুর্গা নয়, সমস্ত দেবদেবীর মূর্তি গড়তে পারেন এই শিল্পী ।
গর্বিতা মা যমুনা দেবী বলেন, "এভাবেই তিন ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়েছি । আমি এই কাজ গরিব ঘরের ছেলেমেয়েদের শেখাতে চাই । বিশেষ করে মেয়েদের । যাতে তারা বিয়ের পর আমার মতো দিশেহারা অবস্থায় না পড়ে । যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে ।"
স্থানীয়রাও যমুনাদেবীর লড়াইয়ের কথা জানে । এলাকাবাসী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চায় । সেই কারণেই গতবারের চেয়ে এবার প্রতিমার বরাত বেড়েছে । গতবার তিনটি দুর্গা প্রতিমা বানিয়েছিলেন । এবার চারটি । এই কাজ করে এখন আর পেটের ভাতের চিন্তা না থাকলেও তাঁর ইচ্ছে পূরণ হয়নি । শিল্পীর আক্ষেপ, আজকের ছেলেমেয়েদের ঠাকুর গড়ার কাজে আগ্রহ নেই ৷
বলেন, "কাজ শেখানোর চেষ্টা করেছিলাম । পারিনি । তারা একাজ শিখতে রাজি নয় ।"
তবু তিনি ছাত্রী খুঁজে বেড়ান । তাঁর কথায়, "শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে কাউকে না কাউকে কাজ তো শেখাতেই হবে ।"