মালদা, 6 ডিসেম্বর : সিপিএম বলছে, আর্থিক দুর্নীতি করতেই তিনি শাসকদলে যোগ দিয়েছিলেন । জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি বর্তমানে বিজেপি নেতা বলছেন, শুধু এই একজনই নয়, আদালতের নির্দেশে তদন্ত হলে ব্লকের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানই গরাদের পিছনে থাকবেন । আর্থিক দুর্নীতির দায়ে মানিকচকের নূরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক কথা চালাচালি শুরু হয়েছে এলাকায় । যদিও তৃণমূলের বক্তব্য, যে বা যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকবে, দল তাদের পাশে নেই ।
ঘটনার শুরু 2018 সালে । সিপিএমের টিকিটে নূরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোটে জিতেছিলেন আরতি সরকার । এরপর প্রধান পদের লোভে নাম লিখিয়েছিলেন তৃণমূলে । তাঁকে প্রধানও করা হয় । প্রথমদিকে সব ঠিকঠাকই চলছিল । কিন্তু পরে শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে শুরু করে । একসময় পঞ্চায়েতের ন’জন সদস্য তাঁর বিরুদ্ধে তৎকালীন বিডিও সুরজিৎ পণ্ডিতের কাছে আর্থির দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করেন । অভিযোগে ওই সদস্যরা জানান, পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক মিলন ঘোষের সহায়তায় আরতি সরকার 100 দিন কাজ প্রকল্পের অন্তত এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন । অবশ্য শুধু 100 দিন প্রকল্পেই নয়, ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্রান্ট ফান্ডের অর্থও আত্মসাৎ করা হয়েছে ।
অভিযোগ ওঠে, এ নিয়ে পঞ্চায়েত সদস্যরা বিডিওর কাছে অভিযোগ দায়ের করলেও তিনি কোনও পদক্ষেপ নেননি । জেলা প্রশাসনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি । শেষ পর্যন্ত ওই সদস্যরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রুজু করেন । হাইকোর্টের তরফে তৎকালীন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্যকে অভিযোগের তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয় । জেলাশাসকের নির্দেশ পেয়ে নড়েচড়ে বসেন বিডিও । তিনি ঘটনার তদন্ত শুরু করেন । তাঁর তদন্তেই বেরিয়ে আসে, নূরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে 26 লাখ 68 হাজার 225 টাকার দুর্নীতি হয়েছে ।
আরতিদেবী কিংবা মিলনবাবু এই টাকা খরচের কোনও হিসাব দাখিল করতে পারেননি । তদন্তের ভিত্তিতে 2019 সালে দু’জনের বিরুদ্ধেই মানিকচক থানায় এফআইআর দায়ের করেন বিডিও । গা ঢাকা দেন আরতিদেবী । আত্মগোপনে থাকাকালীনই তিনি আদালতকে জানান, তাঁর বিরুদ্ধে যে পরিমাণ টাকা তছরুপের অভিযোগ আনা হয়েছে ৷ তিনি তা সরকারি তহবিলে ফেরত দেবেন । আদালত তাঁর প্রস্তাবে রাজিও হয় । কিন্তু এতদিন পেরিয়ে গেলেও তিনি টাকা ফেরত দেননি । শেষ পর্যন্ত আদালত আরতিদেবী ও মিলনবাবুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে । বাড়ি থেকেই আরতিদেবীকে গ্রেফতার করে মানিকচক থানার পুলিশ (Panchayat pradhan arrested) । রবিবার আদালতে তোলা হলে তাঁর 14 দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ মেলে ।
এই ঘটনায় এলাকার বাসিন্দা, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেবজ্যোতি সিনহার কটাক্ষ, "আমাদের দলে থেকে আরতি সরকার চুরি করতে পারছিলেন না । তাই চুরির লাইসেন্স পেতে তিনি তৃণমূলে নাম লিখিয়েছিলেন । চুরি করতে করতে গিয়ে এবার জেলে গিয়েছেন । আমি অবাক নই ।" এলাকার আরও এক বাসিন্দা, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি, বর্তমানে তৃণমূল নেতা গৌরচন্দ্র মণ্ডল জানাচ্ছেন, "শুধু নূরপুর নয়, আদালতের নির্দেশে যথাযথ তদন্ত হলে মানিকচক ব্লকের প্রত্যেক প্রধানই গরাদের পিছনে থাকবেন । আরতি সরকারের ঘটনায় আমি আশ্চর্য নই ।"
আরও পড়ুন : Jacqueline Money Laundering case : কোটি টাকার প্রতারণা, মুম্বই বিমানবন্দরে আটকানো হল জ্যাকলিনকে
যদিও দল এসব ঘটনাকে কখনও প্রশ্রয় দেয় না বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বক্সি । তিনি জানান, "দুর্নীতি করলে জেলে যেতেই হবে । তা তিনি যত বড়ই নেতা হোন না কেন এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে । দল এসব দুর্নীতিগ্রস্ত নেতার পাশে কখনই দাঁড়াবে না ।" যদিও এই ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ খোদ আরতিদেবীর ।