মালদা, 8 ডিসেম্বর : চাকরির দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন উত্তর প্রদেশের (Uttar Pradesh) ভাদোহিতে (Bhadohi) কার্পেট কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant labours) পরিবারের সদস্যরা । আজ সকালে পুরোনো মালদার মঙ্গলবাড়ির মহানন্দা ভবনে পৌঁছানোর কথা ছিল তাঁদের । এখন সেখানে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mahananda Bhawan Guest House Mangal Bari) । যদিও বুলবুলচণ্ডী মোড়ের কাছে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ । রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের সঙ্গে দেখা করার দাবিতে একসময় তাঁরা মালদা-বুলবুলচণ্ডী রাজ্য সড়কে বসে পড়েন । বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর সেখান থেকে তাঁদের তুলে দেয় পুলিশ । (Migrants widows stopped to meet Mamata Banerjee)
মালদা জেলার প্রচুর শ্রমিক উত্তর প্রদেশ ও কেরালায় কার্পেট কারখানায় কাজ করেন । কার্পেট নির্মাণে এই জেলার শ্রমিকদের চাহিদাও বেশ ভাল । তিন বছর আগে উত্তর প্রদেশের ভাদোহিতে একটি কার্পেট কারখানায় কাজ করতে গিয়েছিলেন মানিকচক ব্লকের এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোমিনপাড়া, ভবানীপুর এলাকার বেশ কিছু শ্রমিক । 2019 সালের 23 ফেব্রুয়ারি সেই কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে । ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় 9 শ্রমিকের । খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনকে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন ।
তাঁর নির্দেশের দু'দিন পর 25 ফেব্রুয়ারি এলাকায় আসেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম । নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের হাতে তিনি 2 লাখ টাকার চেক তুলে দেন । সেই সময় তিনি মৃত শ্রমিকদের স্ত্রীদের (Migrant labours Widow) যোগ্যতা অনুযায়ী দু'মাসের মধ্যে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । মৃতদেহ ফিরে আসার পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় এসে একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও । এখনও মৃত শ্রমিকদের স্ত্রীরা সেই চাকরি পাননি ।
আরও পড়ুন : Migrant Labourers : কাশ্মীরে জঙ্গিদের নিশানায় পরিযায়ীরাও, প্রাণ বাঁচাতে ঘরে ফিরছেন মালদার শ্রমিকরা
চাকরির দাবিতে গত 2 ডিসেম্বর তাঁরা জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন । কিন্তু জেলাশাসক তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি । প্রশাসনের তরফে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, এ ব্যাপারে সরকারি কোনও নির্দেশিকা এখনও আসেনি । যদিও নিহত শ্রমিকদের স্ত্রীদের বক্তব্য, চাকরির জন্য মানিকচকের সিডিপিও তাঁদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন । তাঁদের কাছ থেকে কাগজপত্রও জমা নেওয়া হয়েছে । সরকারি নির্দেশ না থাকলে তিনি কীভাবে এই কাজ করলেন ?
চাকরির দাবিতে আজ সকালে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন নিহত শ্রমিকদের পরিবারের স্ত্রী ও সন্তানরা । কিন্তু পুলিশের বাধায় তাঁরা মহানন্দা ভবন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি । নিহত শ্রমিকের স্ত্রী সাবিনা খাতুন বলেন, "তিন বছর ধরে শুধু চাকরির কথা শুনেই আসছি । এখনও চাকরি পাইনি । চাকরির দাবিতে আজ আমরা দিদির সঙ্গে দেখা করতে চাই । বিড়ি বেঁধে সংসার চালাচ্ছি । খাবারই ঠিকমতো জোটে না । বাচ্চাদের পড়াতে পারছি না । ওদের পড়াশোনার বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে । অথচ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বাড়ি গিয়ে আমাদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন । এর মধ্যে মাত্র দু’জনকে দেড় বছরের জন্য নেহরু যুব কেন্দ্রে ভলান্টিয়ারের কাজ দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু ছোট বাচ্চা নিয়ে সেই কাজ করা যায় না । পুলিশ আজ আমাদের আটকে দিয়েছে। কিন্তু আমরা দিদির সঙ্গে দেখা না করে ফিরব না ।"
আরও পড়ুন : Deputation for Government Job : কথা রাখেননি মন্ত্রী, চাকরির দাবিতে জেলাশাসকের দরজায় স্বামীহারারা
আরেক মৃত শ্রমিকের স্ত্রী সুলতানা বিবি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু সেই চাকরি আজও পাইনি । আজ দিদির সঙ্গে দেখা করে তাঁকে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার আবেদন জানাব । পুলিশ আমাদের আটকে দিয়েছে । বলছে, তারা ব্যবস্থা করে দেবে । কিন্তু এতদিন কোথায় ব্যবস্থা করে দিল ? আজ আমরা ঘুরে যাব না। দিদির কাছে যাবই ।"
আজ তাঁদের সঙ্গে ছিলেন নিখিলবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদক তৃপ্তি পাণ্ডে । তিনি বলেন, "এই মেয়েদের স্বামীরা ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন । সেই সময় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার সহ সবাই নিহতদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের প্রত্যেকের পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । আজ তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ চাকরি পায়নি । আজ নিহত শ্রমিকদের স্ত্রীরা কীভাবে থাকছেন, কীভাবে সংসার চালাচ্ছেন, তা কেউ খোঁজ নিয়ে দেখে না । কিন্তু ফিরহাদ হাকিম তো দিদির নির্দেশেই এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । সেই প্রতিশ্রুতি যাতে দ্রুত পালন করা হয়, আমরা তার দাবি জানাচ্ছি ।"
আরও পড়ুন : বিপদের ঝুঁকি নিয়েই ফের ভিনরাজ্যে পাড়ি পরিযায়ীদের