মালদা, 9 অগস্ট : জলস্তর বেড়ে চলেছে জেলার তিন প্রধান নদীর। তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলায় । নিচু গ্রামগুলিতে ঢুকতে শুরু করেছে নদীর জল । এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক সাহায্যের দিকে তাকিয়ে জলবন্দি গ্রামগুলির বাসিন্দারা । পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদ্য কাজে যোগ দেওয়া বিডিও।
কয়েকদিন ধরেই জলস্তর বাড়ছে জেলার প্রধান তিন নদী গঙ্গা, ফুলহার ও মহানন্দার । ইতিমধ্যে গঙ্গা তার বিপদসীমা পেরিয়ে গিয়েছে । অসংরক্ষিত এলাকায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা । আজ বেলা 12টায় গঙ্গার জল 25.16 মিটার উচ্চতায় বয়েছে । আর 14 সেন্টিমিটার জলস্তর বাড়লেই গঙ্গা চরম বিপদসীমা 25.30 মিটার উচ্চতা ছুঁয়ে ফেলবে । একই সময়ে আজ ফুলহার প্রবাহিত হয়েছে 26.71 মিটার উচ্চতায় । আর 72 সেন্টিমিটার জলস্তর বাড়লে ফুলহার 27.43 মিটার উচ্চতার বিপদসীমায় পৌঁছে যাবে । অন্যদিকে, আজ বেলা 12টায় মহানন্দার জলস্তর ছিল 19.19 মিটার। বিপদসীমা 21.00 মিটার থেকে 81 সেন্টিমিটার নিচে । একদিকে গঙ্গা, অন্যদিকে ফুলহার ঘেরা রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গ্রামে ইতিমধ্যে ঢুকতে শুরু করেছে দুই নদীর জল । তবে বেশি জল ঢুকছে গঙ্গার । এই গ্রাম পঞ্চায়েতের বঙ্কুটোলা, পদমটোলা, জগবন্ধুটোলা, সম্বলপুর, কোতওয়ালি, রাজকিশোরটোলা, আমিরচাঁদটোলা সহ 10-12টি গ্রামে এখন দুই নদীর জল । অন্তত চারশো বাড়িতে জল ঢুকে পড়েছে বলে দাবি গ্রামবাসীদের । অনেক বাড়ি জলবন্দিও হয়ে রয়েছে । বিপন্ন মানুষজন ঘর ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন । এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক সহায়তার দাবি তুলেছেন গ্রামবাসীরা ।
সম্বলপুর গ্রামের বিকাশ মণ্ডল বলছেন, “3-4 দিন ধরেই এলাকার বেশ কিছু গ্রামে জল ঢুকছে । নদীর জল ঢুকে অনেক পাটের খেত নষ্ট করে দিয়েছে । অনেক বাড়িঘরেও জল ঢুকে গিয়েছে। গোরু-বাছুর নিয়ে আমরা খুব সমস্যায় পড়েছি। পাটের জমিতে জল ঢুকে যাওয়ায় পাট কাটা যাচ্ছে না। এই এলাকার একদিকে গঙ্গা, অন্যদিকে ফুলহার। দুই নদীর মিলিত জল এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে সহায়তা চাইছি।”
সুদামটোলার সত্যেন চৌধুরী বলছেন, “এই গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম দিকে বইছে গঙ্গা। আমরা তাকে বড় নদী বলি। এই মুহূর্তে গঙ্গার জলই মূলত এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছে। কিছু জায়গায় ঢুকছে ফুলহারের জলও। দুই নদীর জল এখন মিশে গিয়েছে। জলের জন্য এলাকার প্রচুর মানুষ সমস্যায় পড়ে গিয়েছে। কীভাবে থাকব বুঝতে পারছি না। আমি সরকারের কাছে ত্রাণ সামগ্রীর সঙ্গে কিছু সাহায্যের আর্জি জানাচ্ছি।”
এলাকার বাসিন্দা সন্তোষ রবিদাস বলেন, “আমাদের এখানে মাঝেমধ্যেই বন্যা হয়। এনিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। শুধু চাইছি, বন্যায় দুর্গত মানুষজনের জন্য যেন প্রশাসনিকভাবে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই মুহূর্তে দুই নদীরই জল বাড়ছে। তাই এই সময় দুর্গতরা প্রশাসনিক সহায়তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন।”
আরও পড়ুন : Ghatal Flood : ফের বৃষ্টিতে জল বাড়তে শুরু করেছে ঘাটালে
গত শুক্রবারই কাজে যোগ দিয়েছেন রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের বিডিও রাকেশ টোপ্পো। এখনও এলাকা চিনে উঠতে পারেননি তিনি। তবে গ্রামে নদীর জল ঢোকার খবর তাঁর কাছে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, “মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নদী তীরবর্তী কিছু গ্রামে জল ঢোকার খবর পেয়েছি । পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যদের পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে বলা হয়েছে। দুর্গতদের ত্রাণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। যাঁদের বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে, স্থানীয় কোনও স্কুলে ফ্লাড সেন্টার খুলে তাঁদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”